Science & Tech

গোপন তথ্যের প্রকাশ্য ব্যবসা

কিছুদিন আগে ‘লাখ লাখ’ মানুষের তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটে,

ওয়েবসাইট খুলে ভুয়া তথ্যেরও জমজমাট ব্যবসা চলছে

মানুষের ব্যক্তিগত গোপন তথ্যের প্রকাশ্যে রমরমা ব্যবসা চলছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে এসব তথ্য বিক্রি হচ্ছে। অথচ দেশের প্রচলিত আইনে কারো ব্যক্তিগত তথ্য কেউ বেহাত করলে সেটা অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব অপরাধের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে।

অনেকে মনে করছেন, গত বছর রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তর থেকে বেশ কিছু মানুষের তথ্য বেহাত হয়। সেই সব তথ্যও কেউ সংগ্রহে রেখে বিক্রি করতে পারে। আবার অনেক সময় ওয়েবসাইট খুলে ভুয়া তথ্যও বিক্রির ঘটনা ঘটছে। 

পুলিশের অপরাধ তদন্ত সংস্থার (সিআইডি) সাইবার ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি এস এম আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘কেউ যদি এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে, তাহলে সেটা অবশ্যই অপরাধ। সেটা সত্যি হোক আর ভুয়া হোক। এ ধরনের ঘটনা আমাদের নজরে এলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এমন কিছু বিষয়ে সিআইডি অনুসন্ধান করছে। এ ধরনের অপরাধী চক্রকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’  গত বছরের জুলাই মাসে রেজিস্ট্রার জেনারেলের দপ্তর থেকে বেশ কিছু মানুষের তথ্য বেহাত হয়। তখন এসব তথ্য কেনাবেচার কথাও শোনা গেছে। গ্রাহকের তথ্য বিক্রির ক্ষেত্রে নতুন ভুয়া ব্যবসা শুরু করেছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে, তথ্য বিক্রিকে চমকপ্রদ করতে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব বিজ্ঞাপনে দেশসেরা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান বিকাশের নাম যেমন আছে, আছে নগদ ও রকেটের নামও। শুরুর দিকে ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামের বিশেষ সফটওয়্যারের (বট) মাধ্যমে কাজটি করা হয়েছে। এখন টেলিগ্রাম চ্যানেলের পাশাপাশি ওয়েবসাইট খুলেও তথ্যের জমজমাট এই ব্যবসা চলছে। চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের দেওয়া বিজ্ঞাপনে বেশ কিছু নামিদামি ব্যাংকের গ্রাহকের তথ্য রয়েছে বলেও প্রচার চালাচ্ছে। নিত্যনতুন কৌশলে তারা একের পর এক গ্রাহক ধোঁকা দেওয়ার এই ব্যবসা করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘এটা তো ভয়াবহ অপরাধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া। কেউ যদি এমন বিজ্ঞাপন দিয়ে থাকে, তাহলে দ্রুত তাদের খুঁজে বের করতে হবে। কারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য কেউ অন্য কারো কাছে বিক্রি করতে পারে না। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। নাগরিকদের তথ্যের সুরক্ষা রাষ্ট্রকে দিতে হবে।’

সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য বেহাত হওয়ার পর টেলিগ্রাম চ্যানেলের প্রচার হওয়া নির্দিষ্ট একটি লিংকে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ দিলেই যেভাবে তার অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য বেরিয়ে আসছিল, একইভাবে এখানেও কিছু মানুষের তথ্য বেরিয়ে আসছে। তবে যে তথ্য এখানে পাওয়া যাচ্ছে, তার সত্যতা নিরূপণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই আবার এটিকে উড়িয়ে দিচ্ছেন। কিছু কিছু জায়গায় দেখা গেছে, মোবাইল নম্বর দিলে আবার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা নামসহ এমন কিছু তথ্য আসছে।

রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে তথ্য ফাঁসের ঘটনার দুই থেকে তিন মাস পর স্মার্ট কার্ডের তথ্য বেহাতের তথ্য সামনে আসে। এখন এসব তথ্যকেই নতুন মোড়কে মোবাইল ব্যাংকিং এবং প্রচলিত ব্যাংকের গ্রাহক তথ্য হিসেবে বিক্রির জন্য সামনে আনা হচ্ছে বলে বলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তবে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখা গেছে, একেকটা গ্রুপে একেক রকম তথ্য আসছে। কোথাও গ্রাহকের সঙ্গে সঙ্গে তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর আছে বলে বলা হচ্ছে। আবার কোথাও মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্ম তারিখের উল্লেখ থাকছে। এর বাইরেও কোথাও কোথাও ছবি থাকার দাবি করা হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ সাবির বলেন, ‘যেহেতু জাতীয় পরিচয়পত্রের ডেটাবেজ থেকে তথ্য বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা এর আগে ঘটেছে, ফলে এমনিতেই মানুষ এ নিয়ে অস্বস্তিতে আছে। এখন তাদের বিভ্রান্ত করাটা আগের চেয়ে সহজ। এখানে যেহেতু এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম ব্যবহার করা হচ্ছে, ফলে দ্রুত তদন্ত করে অপরাধীদের বের করতে হবে। এমনও হতে পারে, বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তাদের নাম ব্যবহার করা হতে পারে। আবার তাদের সম্পৃক্ততাও থাকতে পারে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে এটা নিয়ে দ্রুত তদন্তে যাওয়া এবং অপরাধীকে খুঁজে বের করা।’

মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলছেন, বিষয়টি তাদেরও নজরে এসেছে। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, ‘ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে আমরা প্রতিনিয়তই তথ্যগত নানান অপপ্রচারের শিকার হচ্ছি। এবারের বিষয়টিও দেখে দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানিয়েছি।’ উল্লেখ্য, বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র ডেটাবেজে ১২ কোটির মতো মানুষের তথ্য রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d