Hot

গোয়েন্দাজালে নৈশভোটের কুশীলব ১১৬ ডিসি-এসপি

►তাঁদের অবৈধ আয় খুঁজে দেখা হচ্ছে ► পেয়েছেন বিপুল অর্থ ও বড় পদ ► অনেকেই এখনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে

ভোটের মাঠের ‘মাস্টারমাইন্ড’ বলে তাঁদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। কখনো কখনো এমন অভিযোগ যে তাঁরা পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ভোটের আগের রাতেই ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’-এ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন! গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী সরকারদলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে দিতে তাঁদের ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়। বিশেষ করে ২০১৮ সালের নির্বাচনই আলোচনার কেন্দ্রে। ওই সময় তাঁরা প্রার্থীদের কাছ থেকে ‘হ্যান্ডসাম অ্যামাউন্ট’ কামিয়েছিলেন বলেও প্রচার রয়েছে।

বিগত নির্বাচনে তৎকালীন সরকারদলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে দেওয়ার নেপথ্যের আলোচিত-সমালোচিত ওই ডিসি-এসপিরা আবারও আলোচনায়। এবার তাঁদের ফাইল ধরে টান দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের কর গোয়েন্দারা। রাতের ভোটের কারিগর বলে পরিচিত এসব ডিসি-এসপির বিপুল অঙ্কের অবৈধ আয়ের কর ফাঁকি অনুসন্ধানে সংস্থাটির আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট ব্যাপক আয়োজনে মাঠে নেমেছে। তাদের তৈরি ১১৬ ডিসি-এসপির তালিকা এখন কালের কণ্ঠের কাছে।

জানা গেছে, রাতের ভোটের সেই নির্বাচনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তৎকালীন সময়ের ৫৭ জন ডিসি ও পুলিশের ৫৯ জন এসপি। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও ওই ডিসি-এসপিরা ঠিকই প্রশাসনে বহাল তবিয়তেই আছেন। আগের সরকার নির্বাচনের পর তাঁদের ভালো পদায়নও করেছিল। এখন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও তাঁদের অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

তাঁদের আয়কর নথি যাচাই করে প্রকৃত সম্পদের সঙ্গে মিলিয়ে দেখার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তাঁদের বিষয়ে জনগণের একটা চাপা ক্ষোভ ছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর এই ক্ষোভ এখন প্রকাশ্যে। সরকারি এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনেক তথ্য আয়কর গোয়েন্দাদের হাতে এসেছে। তাঁরা এখন যাচাই-বাছাই করে কর ফাঁকিসংক্রান্ত বিষয় অনুসন্ধান করবেন। কর ফাঁকি উদঘাটন হলে আয়কর আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেবে এনবিআর। এ ছাড়া জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানাবে। আইন অনুযায়ী তখন দুদক তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

জানা গেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে একটি জরিপ করেছিল জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের মাত্র ২২টি আসনে জয় নিশ্চিত ছিল। বাকি আসনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও অন্যান্য দলের জয়ের সম্ভাবনা দেখিয়েছিল সংস্থাটি। এরপর গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন ও পুলিশের যাচাই-বাছাইয়ের পর নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মনোনীত করে পতিত সরকার। যাচাই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল ব্যক্তি ও পরিবারের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা।

এর আগে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করে বিএনপিসহ বেশির ভাগ নিবন্ধিত দল। ২০১৮ সালে বহুল আলোচিত সংলাপে শেখ হাসিনার কাছ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি পেয়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ভোটে অংশ নেয়। তবে ডিসি-এসপিদের কারণে ওই ভোট বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এনবিআরের উচিত হবে সব ধরনের ব্যত্যয়-বিচ্যুতি আছে সেসব নিয়ে কাজ করা। ডিসি-এসপিদের বিরুদ্ধে তদন্ত করাও ঠিক আছে। কিন্তু এতে সীমাবদ্ধ না থেকে আরো অন্যান্য যেসব জায়গায় ব্যত্যয়-বিচ্যুতি-দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলোও তাদের দেখতে হবে।’

এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়করনীতি) ড. সৈয়দ আমিনুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দেশে যাঁরা কর ফাঁকি দেন, তাঁরা সব লুকিয়ে থাকা করদাতা। লুকিয়ে আছেন কিন্তু আত্মপ্রকাশ করেন না। তাঁদের খুঁজে বের করাই দরকার। আগে শুধু সিআইসি এসব অনিয়ম অনুসন্ধানের কাজ করত। এখন আয়কর গোয়েন্দাও কাজ করছে। আয়কর গোয়েন্দার বর্তমান কমিশনার (মো. আবদুর রকিব) শতভাগ সৎ কর্মকর্তা। তিনি খুঁজে সব ধরনের অনিয়ম বের করে ফেলবেন।’

আলোচিত ৫৭ ডিসি : ময়মনসিংহে ড. সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস, নেত্রকোনার মঈনউল ইসলাম, জামালপুরে আহমেদ কবীর, শেরপুরে আনার কলি মাহবুব, সিলেটে এম কাজী এমদাদুল ইসলাম, সুনামগঞ্জে মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, মৌলভীবাজারে মো. তোফায়েল ইসলাম, হবিগঞ্জে মাহমুদুল কবীর মুরাদ, ঢাকায় আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, গাজীপুরে ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, নারায়ণগঞ্জে রাব্বী মিয়া, মুন্সীগঞ্জে সায়লা ফারজানা, কিশোরগঞ্জে মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, টাঙ্গাইলে মো. শহীদুল ইসলাম, নরসিংদীতে সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন, মাদারীপুরে মো. ওয়াহিদুল ইসলাম, শরীয়তপুরে মো. কাজী আবু তালেব, ফরিদপুরে উম্মে সালমা তানজিয়া, মানিকগঞ্জে এস এম ফেরদৌস, গোপালগঞ্জে মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, রাজবাড়ীতে মো. শওকত আলী, চট্টগ্রামে মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, রাঙামাটিতে এ কে এম মামুনুর রশিদ, বান্দরবানে মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, খাগড়াছড়িতে মো. শহিদুল ইসলাম, কক্সবাজারে মো. কামাল হোসেন, লক্ষ্মীপুরে অঞ্জন চন্দ্র পাল, চাঁদপুরে মো. মাজেদুর রহমান খান, ফেনীতে মো. ওয়াহিদুজ্জামান, নোয়াখালীতে তন্ময় দাস, কুমিল্লায় মো. আবুল ফজল মীর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হায়াত-উদ-দৌলা খান, রাজশাহীতে এস এম আব্দুল কাদের, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ জেড এম নুরুল হক, নওগাঁয় মো. মিজানুর রহমান, নাটোরে মো. শাহরিয়াজ, পাবনায় জসিম উদ্দিন, বগুড়ায় ফয়েজ আহমেদ, সিরাজগঞ্জে কামরুন নাহার সিদ্দীকা, জয়পুরহাটে মোহাম্মদ জাকির হোসেন, খুলনায় মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, বাগেরহাটে তপন কুমার বিশ্বাস, সাতক্ষীরায় এস এম মোস্তফা কামাল, যশোরে মো. আব্দুল আওয়াল, মাগুরায় মো. আলী আকবর, ঝিনাইদহে সরোজ কুমার নাথ, নড়াইলে আনজুমান আরা, কুষ্টিয়ায় মো. আসলাম হোসেন, মেহেরপুরে মো. আতাউল গনি, চুয়াডাঙ্গায় গোপাল চন্দ্র নাথ, বরিশালে এস এম অজিয়র রহমান, ঝালকাঠিতে মো. হামিদুল হক, পিরোজপুরে আবু আহমেদ সিদ্দিকী, পটুয়াখালীতে মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, বরগুনায় কবীর মাহমুদ, ভোলায় মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দীক ও রংপুরে এনামুল হাবীব।

আলোচিত ৫৯ জন এসপি : পঞ্চগড়ের এস এম সিরাজুল হুদা, ঠাকুরগাঁওয়ের উত্তম প্রসাদ পাঠক, দিনাজপুরে শাহ ইফতেখার আহমেদ, নীলফামারীতে মোহাম্মদ গোলাম সবুর, লালমনিরহাটে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, রংপুরে মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী, গাইবান্ধায় মো. কামাল হোসেন, জয়পুরহাটে মোহাম্মদ নূরে আলম, বগুড়ায় সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মো. ছাইদুল হাসান, নওগাঁয় মুহাম্মদ রাশিদুল হক, রাজশাহীতে মো. সাইফুর রহমান, নাটোরে মো. তারিকুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জে মো. আরিফুর রহমান, পাবনায় মো. আকবর আলী মুনসী, মেহেরপুরে মো. রফিকুল আলম, কুষ্টিয়ায় এ এইচ এম আবদুর রকিব, চুয়াডাঙ্গায় আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঝিনাইদহে মো. আজিম-উল-আহসান, মাগুরায় মো. মশিউদ্দৌলা রেজা, নড়াইলে মোসা. সাদিরা খাতুন, বাগেরহাটে আবুল হাসনাত খান, খুলনায় মোহাম্মদ সাঈদুর রহমান, সাতক্ষীরায় কাজী মনিরুজ্জামান, বরগুনায় মো. আবদুস ছালাম, পটুয়াখালীতে মো. সাইদুল ইসলাম, ভোলায় মো. মাহিদুজ্জামান, বরিশালে ওয়াহিদুল ইসলাম, ঝালকাঠিতে মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল, পিরোজপুরে মোহাম্মদ শফিউর রহমান, গোপালগঞ্জে আল-বেলী আফিফা, মাদারীপুরে মো. মাসুদ আলম, শরীয়তপুরে মো. মাহবুবুল আলম, ফরিদপুরে মো. শাহজাহান, রাজবাড়ীতে জি এম আবুল কালাম আজাদ, মানিকগঞ্জে মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, মুন্সীগঞ্জে মোহাম্মদ আসলাম খান, নরসিংদীতে মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, নারায়ণগঞ্জে গোলাম মোস্তফা রাসেল, ঢাকা জেলায় মো. আসাদুজ্জামান, গাজীপুরে কাজী শফিকুল আলম, টাঙ্গাইলে সরকার মোহাম্মদ কায়সার, জামালপুরে মো. কামরুজ্জামান, শেরপুরে মোনালিসা বেগম, নেত্রকোনায় মো. ফয়েজ আহমেদ, কিশোরগঞ্জে মোহাম্মদ রাসেল শেখ, সুনামগঞ্জে মোহাম্মদ এহসান শাহ, সিলেটে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, মৌলভীবাজারে মো. মনজুর রহমান, হবিগঞ্জে এস এম মুরাদ আলী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন, কুমিল্লায় আব্দুল মান্নান, ফেনীতে জাকির হোসেন, নোয়াখালীতে মো. শহীদুল ইসলাম, লক্ষ্মীপুরে মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ, চট্টগ্রামে এস এম শফিউল্লাহ,  কক্সবাজারে মো. মাহফুজুল ইসলাম, রাঙামাটিতে মীর আবু তৌহিদ ও বান্দরবানে সৈকত শাহীন।

বিতর্কিতদের যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ পদে : মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব হিসেবে আনারকলি মাহবুব, রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) হিসেবে মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হিসেবে ড. সাবিনা ইয়াসমিন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে মো. হামিদুল হক, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মতিউল ইসলাম চৌধুরী, মাহমুদুল আলম ও হায়াত-উদ-দৌলা খান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব অঞ্জন চন্দ্র পাল, শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. মাজেদুর রহমান খান, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব সৈয়দা ফারহানা কাওনাইন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী আবু তাহের, পরিকল্পনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ মো. ফেরদৌস খান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ দাউদুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ কে এম মামুনুর রশিদ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমদ, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ জেড এম নুরুল হক, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এস এম মোস্তফা কামাল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার বিশ্বাস, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের গোপাল চন্দ্র দাস, বিপিসির পরিচালক হিসেবে আছেন কবির মাহমুদ ও আব্দুল মতিন, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে মোহাম্মদ হেলাল হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এস এম অজিয়র রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিকী, সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার কাজী এমদাদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ড. এনামুল হাবীব ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যুগ্ম সচিব এস এম আবদুল কাদের।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto