Hot

গোয়েন্দা ল্যাপটপে ৬৪৬ ছিনতাইকারী

ঢাকা মহানগর পুলিশের ৮টি বিভাগের ৫০টি থানা এলাকা ও আশপাশের এলাকাগুলোতে অন্তত ৬৪৬ জন ছিনতাইকারী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সরকারের 
একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। এই হিসাবের মধ্যে সাভার ও গাজীপুরের টঙ্গী ও আশেপাশের এলাকার কিছু ছিনতাইকারীর তথ্যও আছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এসব ছিনতাইকারী পেশাদার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছে। কেউ জেলে আছে আবার কেউ জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের ছিনতাইয়ে জড়িত হয়েছে। কেউ কেউ ছিনতাইয়ে জড়িত থাকলেও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি। সম্প্রতি ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই বেড়েছে। অস্ত্র ঠেকিয়ে হরহামেশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় প্রাণনাশও হচ্ছে। ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা অহরহ। এসব ঘটনায় অনেকেই মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়াচ্ছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও প্রায়ই ছিনতাইয়ের ঘটনা আলোচনায় থাকতো। তখন পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি অভিযান চালিয়ে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করতো। ৫ই আগস্ট সরকার পতনের পর পুলিশের দুর্বলতার কারণে ছিনতাই বেড়েছে কয়েকগুণ। ছিনতাই এতটাই বেড়েছে এবং আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে যে- মানুষ রাতে ঘর থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করছে। তবুও লাগামটানা যাচ্ছে না। ফলে সমালোচনার মুখে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যৌথ অভিযান, অপারেশন ডেভিল হান্ট ও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেও ছিনতাইকারীরা অধরা। সাম্প্রতিক সময়ে এসব ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফিল্মি স্টাইলের এসব ছিনতাই জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি করেছে। পরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু সংগঠন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে আল্টিমেটাম দিয়েছে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ডিএমপি’র মতিঝিল ও ওয়ারী বিভাগে ২০০ জন সক্রিয় ছিনতাইকারী রয়েছে। মিরপুর ও তেজগাঁও বিভাগের বিভিন্ন থানায় ২০৪ জন, গুলশান ও উত্তরা বিভাগে ১২২ জন এবং রমনা ও লালবাগ ডিভিশনে ৭৪ জন সক্রিয় ছিনতাইকারী রয়েছে। ছোট বড় সব ছিনতাইয়ের সঙ্গে ঘুরেফিরে তারা জড়িত। এর বাইরেও কামরাঙ্গীরচরে ১২ জন, রমনায় ৭, লালবাগে ৮, ধানমণ্ডিতে ১০ ও নিউমার্কেট এলাকায় ৯ জন সক্রিয় ছিনতাইকারী রয়েছে।  

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমলাপুর রেলস্টেশন, কমলাপুর, খিলগাঁও রেলগেট, মালিবাগ বাজার ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই করে মো. বাবুল, রাজীব আহম্মেদ আলামিন, মো. বিল্লাল হোসেন, বিল্লাল, শাওন গাজী, বাদল সরকার, মো. রবিন, মো. সাগর, সজীব হোসেন, আরিফ হোসেন, শহিদুল ইসলাম, মো. ইয়াছিন জসীম মাতুব্বর, জাকির হোসেন শিকদার, তরিকুল ইসলাম, শামীম হোসেন, মো. আব্দুল জব্বার, মতিঝিল এলাকায় মো. আকাশ, মো. রাজীব, মো. নুনতা। দক্ষিণ কমলাপুর এলাকায় সুজন ও সৌরভ মিয়া। ফকিরাপুল ও আশপাশের এলাকায় জাহাঙ্গীর মাতুব্বর, নূর আলম শাকিল, মেহেদী হাসান, মো. লিটন, সাব্বির হোসেন, সুমন মিয়া, আতিকুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, রফিকুল ইসলাম বাবু, মো. হেলাল, রুবেল। মতিঝিল এলাকায়  রনি, রাসেল, মনির, ইসমাইল, তারেক। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আসলাম, জনি, নাটাই সোহেল, মিলন, শাহীন,  রাসেল, সাইফুল, আতিক, রুবেল, মিন্টু, সজল, আশরাফ জুয়েল, কৌশিক, শাহীন আলম, মহিউদ্দিন। কুতুবখালী খালের মুখ থেকে মাছ বাজার পর্যন্ত সাইফুল, উজ্জ্বল, রউফ, সুজন, সাগর। আরামবাগ ও আশপাশের এলাকায় আ. রব, মো. সাইফুল। সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড ও জনপথের মোড়ে ফারুক, বাবুল, লিটন, আনোয়ার, নূর আলম, নূর হোসেন, মো. হোসেন. মো. রনি। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা এলাকায় জসিম, মো. জসিম, সাজু, হাফিজুল, খায়রুল, সুমন, শিরু মাতবর, আরিফুল, পারভেজ, আলমগীর, আলমগীর মিয়া। যাত্রাবাড়ী মাছ ও কাঁচাবাজার এলাকায় মো. রনি। শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মো. আলমগীর, মনির হোসেন, মিন্টু, সজীব, রনি, সুমন, সুজন, মোল্লা রাসেল। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা, রাসেল পার্ক ও কলা পট্টি এলাকায় মিঠু, রাকিব, রাসেল, মুরগি সুমন। ডেমরা থানা সাইনবোর্ড এলাকায় রিফাত, ওমর ফারুক, শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান, সোহেল, সবুজ, শাহীন, সোহেল। ধোলাইখাল চৌরাস্তা, নাসির উদ্দিন সরকার লেন ও টং মার্কেট এলাকায় ইমরান হোসেন মুন্না। বানিয়ানগর মোড়, হানিফ স্টিল মিল এলাকায় আজহারুল ইসলাম। বানিয়ানগর মোড়, কাঠের পুল ও ইকরামপুর মোড় এলাকায় ফরহাদ। কলতাবাজার ন্যাশনাল হাসপাতাল এলাকায় নজির হোসেন। ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় বাপ্পী, আলী আকবর। দয়াগঞ্জ মোড়ের আশেপাশের এলাকায় রনি, শামীম। স্বামীবাগ, করাতিটোলা মোড়ের আশপাশের এলাকায় সজীব, নাদিম। ধুপখোলা ও আশপাশের এলাকায় রকি ছোট সম্রাট। টিকাটুলি অভয় দাস লেন এলাকায় আমিনুল ইসলাম, সুজন। জয়কালী মন্দির ও আশপাশের এলাকায় সুমন। কাপ্তান বাজার বিসিসি রোডসহ আশপাশের এলাকায় আমিনুল, কালু, সুমন। রামপুরায় মনির হোসেন, ইউসুফ খান, আজিজ, মাহবুব, গণেশ, আজিজুল, শাহীন, জসিম, রিয়াদ, সুজন, শওকত, মুনছুর, রনি, আব্দুর রহমান, শাহীন, আবুল হোসেন, রুবেল, আবুল, ওমি, রিমন, আশিকুর, শরীফ, রাসেল। পোস্তগোলা ব্রিজের ঢাল আলম মার্কেটের সামনে কাজল ও হানিফ। ধোলাইপাড় গীত সংগীত সিনেমা হলের পাশে দ্বীন ইসলাম, নাসির শেখ। হরিচরণ রায় রোড ও দোয়েল চত্বর এলাকায় পুষণ ঘোষ। গেণ্ডারিয়া রেলস্টেশনের সামনে জুম্মন, আরিফ, জামাল, সাব্বির। জুরাইন কবরস্থানের সামনে মামুন, সোহেল, সুজন ও আরমান। মাতুয়াইল হাসপাতালের সামনে পারভেজ, মুভ দাস, শরিফুল ও ইব্রাহিম। কদমতলীর শনির স্মৃতিধারা রোডে সুলতান আহম্মদ, মাইদুল ইসলাম। কদমতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মা ট্রেডার্সের সামনে  রনি। পাটেরভাগ পানির পাম্প ও ইতালি মার্কেটের সামনে মুরাদ, রাজু, রাজা, বাদশা। গুলিস্তান মহানগর নাট্যমঞ্চের দক্ষিণ পাশে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের সামনে হাসিবুল, ইদ্রিস, মাসুদ, সাগর, ইয়াসিন, শান্ত, শাহীন, শামীম, লালন, ইয়াসিন, রানা সোহেল। সবুজবাগ থানার কমলাপুর ফুটওভার ব্রিজের নিচে সবুজকাননের ফুটপাথে আলমগীর। রাজধানী স্কুল এন্ড কলেজের পশ্চিমপাশে বালুর মাঠে ফরহাদ হোসেন, ওয়াহিদ। বাসাবো উচ্চবিদ্যালয় খেলার মাঠ সংলগ্ন এলাকায় সুজন ও হেলাল। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকায় সাগর। বাসাবো খেলার মাঠের দক্ষিণপাশে ফারুক। মুগদা মেডিকেলের পশ্চিম গেটে হযরত রাসেল। মুগদা বিশ্বরোডে হাবিবুর ও সুমন। মুগদা আইডিয়াল স্কুল কলেজের আশপাশে বোরহান ও সোহাগ। মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের সামনে শাহীন, রানা রিফাত, রাব্বি, আমিনুল। টিটিপাড়ায় সাব্বির, নাহিদ, লিয়ন। মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামের ১নং গেটের সামনের ফুটপাথে শুকুর, সাগর, মাসুম, মিহির, সাজ্জাদ, রিয়াজ, রিয়াজুল। 

তেজগাঁও বিভাগের মধ্যে সোনারগাঁও ক্রসিংয়ে শরীফ, সাব্বির, রাসেল। কাওরান বাজার সিএ ভবনের সামনে মেহেদী, জনি, ইমন। রেলস্টেশনের আশপাশের এলাকায় হাফিজ, শফিকুল। আনন্দ সিনেমা হলের সামনে সোহেল, সাইফুল, সজীব। লাভিঞ্চি ও আশপাশের এলাকায় আরিফ, সুমন, রানা, সোহান। মহাখালী রেলগেটের আশপাশে সাগর, রনি, ইব্রাহিম। পান্থপথ ও বসুন্ধরা সিটির আশপাশে নূর আলম, সামছুউদ্দিন। দক্ষিণ বেগুন বাড়ি, সেটেলমেন্ট প্রেস মসজিদের আশেপাশে আলমগীর। বেড়িবাঁধ সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা ফিলিং স্টেশনের সামনে রাফসান। হুমায়ুন রোড ঢাকা ল্যাবের সামনে ইমতিয়াজ, সবুর, মিঠু। বছিলা রোডের লাউতলা মোড়, মমতাজ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে বাবলা। কাটাসুর নামাবাজার রোডের কালভার্ট ব্রিজের উপর মাসুদ পারভেজ। হুমায়ুন রোডে আহম্মেদ হোসেন। তাজমহল রোডে আরমান। গজনবী রোডে বাদশা, মিঠুন। বছিলা এসপিবিএন গ্যারেজের দক্ষিণ পাশে মহিউদ্দিন, পারভেজ, রায়ের বাজার আজিজ খান রোডের মাথায় দেলোয়ার, রাসেল। বছিলা মেইন রোড জনতা মার্কেটের সামনে শাকিল, আল আমিন। রায়ের বাজার শ্মশান ঘাটের সামনে রাব্বি, মনির। বেড়িবাঁধ নিপুণ গার্মেন্টেসের পেছনের গলিতে অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন।  জেনেভা ক্যাম্পের সি ব্লক ৯ নম্বর রোডে সজীব। বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের ১ নম্বর গেটের সামনে চাঁন মিয়া, হৃদয়, মানিক, মুন্না, রাজু, সবুজ, রায়হান, ওয়াসিম, আলী, হৃদয়, আজাদ, জাফর। বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের মিলনের ফুসকার দোকানের সামনে এবাদুল, দীপু, রিপন। ঢাকা উদ্যান একতা হাউজিংয়ের সামনে রবিউল। চাররাস্তার মোড় স্বপ্ন নীড়ের সামনে সুমন, রাসেল। বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ে কাশ্মীরি বিরিয়ানি হাউজের সামনে বাদশা। আল মানার হাসপাতালের সামনে রুবেল, বাচ্চু, মঞ্জু, মোশাররফ। মুক্তিযোদ্ধা টাওয়ারের সামনে মামুন। ঢাকা উদ্যানের পাকা রাস্তার উপর বিল্লাল। বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের মেইন রোডে আলী রাজ, শাহআলী, হৃদয়। তাজমহল রোডে মিল্ক পয়েন্টের সামনে শামীম। ঢাকা উদ্যান ওয়ালটন শোরুমের সামনে বাপ্পী, হৃদয়। বাঁশবাড়ি হোসেন সেন্টারের সামনে মনির। ঢাকা উদ্যান ঢালে মাহফুজ, মোস্তাকিম, তুহিন। তাজমহল রোডে জিয়া সেন্টারের সামনে আরমান। বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের বিপরীত পাশে লিমন, জুয়েল, রিয়াজুল। লালমাটিয়া র‌্যাংকস শোরুমের সামনে রিয়াদ, ইব্রাহিম। নবীনগর হাউজিং এলাকায় রানা, সাব্বির। এ ছাড়াও বেড়িবাঁধস্থ বুড়িগঙ্গা পেট্রোল পাম্পের সামনে, বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়, বুদ্ধিজীবী জামে মসজিদের সামনেসহ পুলিশের তেজগাঁও ডিভিশনের আরও বিভিন্ন থানা এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে আলাদা আলাদা ছিনতাইকারীরা সক্রিয় রয়েছে। মিরপুর জোনের ৪৬টি স্পটে ছিনতাইকারীরা সক্রিয় রয়েছে। সাভার ও আশুলিয়ার ১৬টি স্পটে ছিনতাকারীরা সক্রিয়। 

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ডিএমপি’র গুলশান ও উত্তরা বিভাগের ৬০টি স্পটে ছিনতাই হয়। গাজীপুরের টঙ্গীতে ২৯টি স্পটে ছিনতাই হয় এবং সেখানে সক্রিয় ছিনতাইকারীরা থাকে। এ ছাড়া ডিএমপি’র রমনা ও লালবাগ বিভাগে ৯৪টি স্পটে ছিনতাই হয়। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button