Bangladesh

গ্যাসের উৎপাদন টানা কমছে

ধারাবাহিকভাবে কমছে গ্যাসের উৎপাদন। একসময় দিনে আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস উৎপাদন করা হলেও এখন তা ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। এতে সরবরাহ–সংকট বাড়ছে। বড় গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বাড়ানো না গেলে সরবরাহ আরও কমতে পারে।

যদিও কূপ খনন করে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে সরকার। এতে গ্যাসের মজুত কিছুটা বাড়ছে।

চলমান গ্যাস–সংকটের এমন পরিস্থিতিতেও দেশের সবচেয়ে বেশি মজুত থাকা তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে কমছে উৎপাদন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি বিভাগের অবহেলা ও অদক্ষতা এর জন্য দায়ী। কারিগরি পরিকল্পনা ও দক্ষ প্রযুক্তির অভাবে মজুত থাকার পরও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। অথচ কম মজুত থাকা বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে কয়েক গুণ উৎপাদন বাড়িয়ে তা শেষ করা হয়েছে।

২০১৮–১৯ অর্থবছরে গড়ে গ্যাস উৎপাদন ছিল দিনে ২ হাজার ৬৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট। পরের বছর এটি কমে হয় ২ হাজার ৪২৩ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২২–২৩ অর্থবছরে দিনে উৎপাদন হয় গড়ে ২ হাজার ২০১ মিলিয়ন ঘনফুট।

দেশের বড় তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে। কিন্তু তা না করে এলএনজি আনার দিকে ঝোঁকটা বেশি দেখা যায়।

বদরূল ইমাম, ভূতত্ত্ববিদ

দেশে গ্যাসের মজুত নিয়ে সর্বশেষ সমীক্ষা চালানো হয় ২০১০ সালে। আন্তর্জাতিক কোম্পানির ওই তথ্যই এখনো ব্যবহার করছে জ্বালানি বিভাগের অধীন প্রতিষ্ঠান হাইড্রোকার্বন ইউনিট। এতে কয়েকটি গ্যাসক্ষেত্রের মজুতের তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। প্রকাশিত গ্যাস মজুতের তথ্য অনুসারে বিবিয়ানা ও জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের উত্তোলনযোগ্য মজুত শেষ হয়ে যাওয়ার কথা গত বছর। দুটি গ্যাসক্ষেত্র থেকেই এখনো উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে।

হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত ২০ দশমিক ৮০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস উৎপাদন করা হয়েছে। অবশিষ্ট মজুত আছে ৯ দশমিক ১২ টিসিএফ। বছরে পৌনে ১ টিসিএফ গ্যাস উৎপাদন করা হয়। এতে অবশিষ্ট মজুত দিয়ে ১০ থেকে ১২ বছর উৎপাদন ধরে রাখা যেতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মজুতে কত বছর চলবে, তা এভাবে বলা যাবে না। কেননা গ্যাসের মজুত কমতে থাকায় একই হারে উৎপাদন অব্যাহত রাখা যাবে না। এটি প্রতিবছর কমতে পারে।

তবে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, হাইড্রোকার্বন ইউনিটের দেওয়া গ্যাস মজুতের তথ্যটি পুরোনো, এটি সঠিক নয়। দেশে গ্যাসের মজুতের তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে গ্যাস উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে একটি হিসাব নিয়ে মজুতের তথ্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পাঠিয়েছে পেট্রোবাংলা।

২০১৮–১৯ অর্থবছরে গড়ে গ্যাস উৎপাদন ছিল দিনে ২ হাজার ৬৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট। পরের বছর এটি কমে হয় ২ হাজার ৪২৩ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২২–২৩ অর্থবছরে দিনে উৎপাদন হয় গড়ে ২ হাজার ২০১ মিলিয়ন ঘনফুট।

এ বিষয়ে হাইড্রোকার্বন ইউনিটের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা গবেষণার তথ্য ব্যবহার করেন। গ্যাসের মজুত নিয়ে দেশে গত ১৪ বছরে কোনো সমীক্ষা চালানো হয়নি। বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রে এর মধ্যে মজুত বাড়তে বা কমতে পারে। এ হিসাব তাদের কাছে নেই। তবে পেট্রোবাংলার তৈরি করা হিসাব সরকারি অনুমোদনের পর মজুতের তথ্য হালনাগাদ করা হবে। এ ছাড়া দরপত্র আহ্বান করে আন্তর্জাতিক কোম্পানি দিয়ে নতুন করে একটি সমীক্ষা পরিচালনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে তারা। এতে দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম বলেন, গ্যাসের মজুত হালনাগাদের বিষয়ে রক্ষণশীল থাকার চিন্তা তাদের। প্রতিনিয়ত ভূকম্পন জরিপ চালিয়ে পাওয়া সম্ভাবনার ভিত্তিতে কূপ খনন করা হচ্ছে। যখন যেখানে গ্যাসের উত্তোলনযোগ্য মজুত পাওয়া যাবে, তা প্রকাশ করা হবে। এভাবে আসলে এটি নিয়মিত হালনাগাদ হচ্ছে।

বিবিয়ানায় মজুত শেষের দিকে

দেশে তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনা করে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য বলছে, আবিষ্কারের সময় হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৩৮৩ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। উত্তোলনযোগ্য মজুত ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৫ বিসিএফ। এর মধ্যে গত জানুয়ারি পর্যন্ত উৎপাদন করা হয়েছে ৫ হাজার ৮২৭ বিসিএফ। আর সিলেটের জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ছিল ২ হাজার ৭১৬ বিসিএফ। উত্তোলনযোগ্য মজুত ছিল ১ হাজার ৪২৯ বিসিএফ। জানুয়ারি পর্যন্ত তোলা হয়েছে ১ হাজার ৬৩২ বিসিএফ। এর বাইরে মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রের প্রাথমিক মজুত ছিল ৪৯৪ বিসিএফ, উত্তোলনযোগ্য ছিল ৪২৮ বিসিএফ। জানুয়ারি পর্যন্ত তোলা হয়েছে ৩৫১ বিসিএফ।

গ্যাসের মজুত হালনাগাদের বিষয়ে রক্ষণশীল থাকার চিন্তা তাদের। প্রতিনিয়ত ভূকম্পন জরিপ চালিয়ে পাওয়া সম্ভাবনার ভিত্তিতে কূপ খনন করা হচ্ছে। যখন যেখানে গ্যাসের উত্তোলনযোগ্য মজুত পাওয়া যাবে, তা প্রকাশ করা হবে। এভাবে আসলে এটি নিয়মিত হালনাগাদ হচ্ছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. নূরুল আলম

হাইড্রোকার্বনের তথ্য অনুসারে মৌলভীবাজারে মজুত শেষের দিকে। আর বিবিয়ানা ও জালালাবাদ থেকে গ্যাস উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। দিনে গ্যাস উৎপাদনে এখনো শীর্ষে আছে বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। পেট্রোবাংলার তথ্য বলছে, দিনে এখানে উৎপাদনসক্ষমতা ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। উৎপাদন বাড়াতে ২০২১ সালে গ্যাস উত্তোলনের পাইপ পরিবর্তন করে বেশি ব্যাসার্ধের পাইপ বসিয়েছে তারা। দুই বছর আগেও ২৬টি কূপ থেকে দিনে উৎপাদন করা হয়েছে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। তবে গত বছর থেকে উৎপাদন কমছে এখানে। বর্তমানে দিনে উৎপাদন করা হচ্ছে ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট।

বিবিয়ানা ও জালালাবাদে গ্যাসের মজুত বৃদ্ধির আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা আসেনি এখনো। তবে গত মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে গ্যাসের মজুত বাড়ার তথ্য দিয়েছে শেভরন। মোট ৪৮১ বিসিএফ মজুত বেড়েছে বলে জানিয়েছে তারা। এতে কোনো গ্যাসক্ষেত্রের নাম আলাদা করে উল্লেখ করেনি তারা।

পেট্রোবাংলার দুজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতি মাসে গড়ে ৩০ বিসিএফ গ্যাস উৎপাদন হয় বিবিয়ানায়। এতে নতুন মজুত দিয়ে দেড় বছর উৎপাদন অব্যাহত রাখা যেতে পারে। কিন্তু বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনার চুক্তি ২০৩৪ সাল পর্যন্ত নবায়ন করেছে শেভরন। এর মধ্যে নতুন কূপ খনন করে মজুত বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে তাদের। এটি আরও বাড়তে পারে।

বাপেক্সের মজুত বাড়লেও উৎপাদন বাড়েনি

দেশে বর্তমানে ২৯টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র তিতাস থেকে উৎপাদন করছে সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ড কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল)। কৈলাসটিলা ও রশিদপুর থেকে গ্যাস উৎপাদন করে আরেক সরকারি কোম্পানি সিলেট গ্যাস ফিল্ড লিমিটেড (এসজিএফএল)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস গ্যাসক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মজুত থাকলেও উৎপাদনে পিছিয়ে আছে তারা।

পেট্রোবাংলা ও হাইড্রোকার্বন ইউনিটের তথ্য বলছে, গত জানুয়ারি পর্যন্ত এসজিএফএলের পাঁচ গ্যাসক্ষেত্র মিলে অবশিষ্ট মজুত আছে ৫ টিসিএফের বেশি। অথচ এখান থেকে দিনে উৎপাদন করা হচ্ছে মাত্র ১১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ১৪টি কূপ আছে এসব গ্যাসক্ষেত্রে। বিজিএফসিএলের পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র মিলে মজুত আছে প্রায় ৩ টিসিএফ। দিনে তারা উৎপাদন করছে ৫৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট। অবশ্য দুটি কোম্পানি নতুন করে কূপ খননের কাজ করছে, এতে মজুত আরও বাড়তে পারে।

তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) তাদের মজুত বাড়িয়েছে। ২০১০ সালের সমীক্ষা অনুসারে জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের অবশিষ্ট মজুত ৮২৪ বিসিএফ। এরপর তারা আরও তিনটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করেছে। যদিও এর কোনোটি থেকে উৎপাদন শুরু হয়নি। এ ছাড়া সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রে কূপ খনন করে নতুন স্তরে গ্যাসের উপস্থিতি পাওয়ায় আগের চেয়ে ২০ বিসিএফ মজুত বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলে মে পর্যন্ত বাপেক্সের সব গ্যাসক্ষেত্র মিলে অবশিষ্ট মজুত আছে দেড় টিসিএফের বেশি।

জ্বালানিসচিব মো. নূরুল আলম বলেন, এখন ৫০টি কূপ খননের প্রকল্প চলমান আছে। ইতিমধ্যেই কয়েকটি কূপ থেকে গ্যাসের উৎপাদন শুরু হয়েছে। আরও ১০০টি কূপ খনন করা হবে। আগামী দুই থেকে তিন বছরে দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন আরও ভালো জায়গায় পৌঁছাবে।

বিজিএফসিএলের পাঁচটি গ্যাসক্ষেত্র মিলে মজুত আছে প্রায় ৩ টিসিএফ। দিনে তারা উৎপাদন করছে ৫৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট। অবশ্য দুটি কোম্পানি নতুন করে কূপ খননের কাজ করছে, এতে মজুত আরও বাড়তে পারে।

ঝোঁক বেশি এলএনজি আমদানিতে

দেশে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এখন সর্বোচ্চ সরবরাহ করা হয় ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে আসে ২ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের কম। ২০২০ সালের শুরুর দিকেও উৎপাদন করা হয় আড়াই হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি। গত বছরও এটি গড়ে ২ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট ছিল।

গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি কমাতে ২০১৮ সাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করে সরকার। বর্তমানে এলএনজি সরবরাহে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। নতুন একটি টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি হয়েছে। এর বাইরে আরও দুটি টার্মিনাল নির্মাণে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এলএনজি আমদানি বাড়াতে নতুন করে তিনটি চুক্তি করা হয়েছে, আরও একটি হবে শিগগিরই।

ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম বলেন, মজুতের হিসাব সব সময় একই থাকে না। নতুন কূপ খনন করা হলে গ্যাসের মজুত কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমতে পারে। তবে অধিকাংশ সময়ই বাড়ে। তাই মজুতের তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করতে হয়। ১৪ বছর হালনাগাদ না করাটা অস্বাভাবিক।

তিনি আরও বলেন, দেশের বড় তিনটি গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন বাড়ানোর সুযোগ আছে। কিন্তু তা না করে এলএনজি আনার দিকে ঝোঁকটা বেশি দেখা যায়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d