Trending

গ্যাস-সংকটে শিল্পে উৎপাদন অর্ধেকে 

৪১০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ২৭০ কোটি ঘনফুট 

দেশে জ্বালানি গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এর ফলে ইতিমধ্যে অনেক শিল্পকারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে বা স্থগিত রয়েছে। চালু থাকা কারখানাগুলোও চাহিদামতো চাপে গ্যাস না পেয়ে বহুমাত্রিক সমস্যায় ভুগছে।

গত দুই বছরের মধ্যে বর্তমানে আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ তুলনামূলক বেশি হলেও স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন ক্রমে কমে যাওয়ায় শিল্পে জ্বালানি সংকট দূর হচ্ছে না। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা যায়, দেশে বর্তমানে দৈনিক ৪১০ থেকে ৪২০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মোতাবেক গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না এক দশকের বেশি সময় ধরে।

তবে ৩৫০-৩৬০ কোটি গ্যাস সরবরাহ করা গেলে পরিস্থিতি মোটামুটি সামলে নেওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে দৈনিক কমবেশি ২৭০ কোটি ঘনফুট বিতরণ করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত বুধবার ২৮২ কোটি ১০ লাখ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এ দিন প্রায় সাড়ে ৯৮ কোটি ঘনফুট পরিমাণ গ্যাস এলএনজি থেকে সরবরাহ করা হয়।

পেট্রোবাংলার এবং তিতাস গ্যাস কোম্পানির একাধিক কর্মকর্তা জানান, আর্থিক ও প্রকৌশলগত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিলে দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে দৈনিক ২০০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস উৎপাদন সম্ভব নয়। কক্সবাজারে থাকা ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকেও দৈনিক ১০৮ কোটি ঘনফুটের বেশি এলএনজি সরবরাহ করা প্রায় অসম্ভব।

অর্থসংস্থান কম থাকায় এবং উৎপাদক ও সরবরাহকারীদের বিল বকেয়া থাকায় সক্ষমতার এই ৩০৮ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। শিগগির আর্থিক সংকট দূর হলেও আগামী দুই বছরেও গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সমন্বয় করা কঠিন হবে। কেননা আরেকটি স্থল বা ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণ কিংবা স্থানীয় নতুন গ্যাস কূপ থেকে উৎপাদন করে গ্রাহক পর্যায়ে নেওয়া সাপেক্ষ।

এছাড়া গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমও অনেক বছর ধরে ধীর, মন্থর। ঐ কর্মকর্তারা বলেন, বাস্তবতা হলো দৈনিক ৪১০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে ৩০০ কোটি ঘনফুট গ্যাসও গত এক বছরের বেশি সময় ধরে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। গ্যাস সরবরাহে এই প্রকট ঘাটতির মধ্যে অবৈধ সংযোগ ও সরবরাহ আরেকটি ট্রাজিক ব্যাপার হয়ে আছে।

এমন প্রেক্ষপটে দেশীয় সার, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, নিট, ইস্পাত এবং সিমেন্ট কারখানায় সার্বিক সক্ষমতার প্রায় অর্ধেকে নেমেছে উৎপাদন। কারখানা তৈরি করেও আমদানি নির্ভর হয়ে আছে সারের জোগান। ছোট এবং মাঝারি শিল্পও ধুঁকছে একই সমস্যায়। ব্যবসার আকার আপাতত ছোট করতে বাধ্য হয়েছেন, হচ্ছেন অনেক বৃহৎ শিল্পমালিক ও উদ্যোক্তারা। এমনকি অন্য ব্যাবসায়িক ঝামেলায় থাকা কিছু ছোট-বড়-মাঝারি শিল্প উৎপাদন নিয়মিত রেখে টিকে থাকতে পারলেও এখন জ্বালানি সংকটে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে এসেছে-গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব। শিল্পে আরো ১৫২ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি গণশুনানি করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বর্তমানে শিল্পকারখানার গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে (শিল্পে ব্যবহৃত নিজস্ব বিদ্যুৎ) ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা দিতে হয়। নতুন শিল্পের জন্য এটি বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

শুনানিতে মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে পেট্রোবাংলা জানায়, প্রতি ঘনমিটার এলএনজির বর্তমান আমদানিমূল্য পড়ছে ৬৫ টাকা ৭০ পয়সা। ভ্যাট-ট্যাক্স ও অন্যান্য চার্জ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা। ফলে এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের দামের মধ্যে দূরত্ব কমাতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করলে চলতি অর্থবছরে পেট্রোবাংলার ঘাটতি হবে প্রায় ১৬ হাজার ১৬১ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তবে পেট্রোবাংলার প্রস্তাবনাকে অযৌক্তিক দাবি করে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি না করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির কাছে দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।

একাধিক ব্যবসায়ী জানান, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও সাভার এলাকার শিল্পকারখানাগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস না পাওয়ায় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমেছে। গ্যাসের চাপ কম থাকায় এসব এলাকার শিল্পকারখানা থেমে থেমে চলছে। গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ উৎপাদনের নিজস্ব ব্যবস্থা থাকলেও গ্যাসের সংকটে শিল্পকারখানাগুলো সেগুলোও চালাতে পারছে না। ফলে একদিকে সুযোগ নষ্ট এবং অন্যদিকে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন শিল্পোদ্যোক্তারা।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) আয়োজিত সম্প্রতি ‘দেশের শিল্প খাতে জ্বালানিসংকট সমাধানের পথ’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন জানান, জ্বালানিসংকটে সিরামিক কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমেছে। পোশাক খাতে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ উৎপাদন কমেছে। স্টিল কারখানায় উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।

গ্যাসের বিকল্প হিসেবে ডিজেল ব্যবহার এবং শ্রমিকদের বাড়তি কাজের জন্য খরচ বেড়ে গেছে। পল্লী বিদ্যুতের অধীন ক্ষুদ্র শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের ডিজেল জেনারেটর চালানো সম্ভব নয়। ফলে প্রায় ৪০ শতাংশ ক্ষুদ্র শিল্প বন্ধের পথে। শিল্প খাতে গাসের চাহিদা ১০০ কোটি ঘনফুটের মতো। কিন্তু এখন দেওয়া হচ্ছে ৫০ কোটি ঘনফুট। গত দুই বছরে শিল্প খাতে জ্বালানির চাহিদা বাড়েনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto