গ্রিনল্যান্ডের লাখ বছরের পুরনো বরফ এখন আপনার পানীয়ের গ্লাসে!
দুবাইতে বসে আপনি যে পানীয়ে চুমুক দেবেন তার বরফটা গ্রিনল্যান্ডের! ভাবছেন গল্প? কষ্টকল্পনা? না, একেবারে খাঁটি সত্য। গ্রিনল্যান্ড থেকে বরফ তুলে এনে তা বিক্রি করা হচ্ছে দুবাইয়ের পানশালা ও রেস্তোরাঁয়। করছে দুবাইয়ের এক কোম্পানি।
বরফগলা এ পানির দামও খুব স্বাভাবিকভাবেই যথেষ্ট বেশি। গ্রিনল্যান্ডের দুই উদ্যোক্তা মিলে ২০২২ সালে ‘আর্কটিক আইস’ নামে এই ব্যবসা শুরু করেন। তারাই এই বরফ এখন দুবাইয়ের বাজারে সরবরাহ করছেন। এ বছর তারা বরফের প্রথম কনটেইনার বিক্রির জন্য বাজারে ছেড়েছেন। তবে আর্কটিক আইসের এই ব্যবসা আকর্ষণীয় হলেও তা জন্ম দিয়েছে নানা বিতর্কের। বেশির ভাগ বিতর্কই পরিবেশসংক্রান্ত।
আগে হিমবাহের মতো প্রাকৃতিক উৎস থেকে বরফ সংগ্রহ করা হতো। কিন্তু এখন কৃত্রিমভাবে বরফ তৈরি করা যায় বলে প্রাকৃতিক বরফের চাহিদা কমেছে। যদিও গত কয়েক দশকে বাণিজ্যিকভাবে প্রাকৃতিক বরফ আবার ফিরিয়ে আনার একটা চেষ্টা করা হয়েছে। তাতে তেমন সফলতা আসেনি। এর আগে অন্য দেশের কোনো কোনো কোম্পানি চেষ্টাটা করেছে। সফল হয়নি। তবে সেই ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটেই দুবাইয়ের এই কোম্পানি প্রাকৃতিক বরফের ব্যবসা করতে শুরু করেছে।
দুবাইয়ের ওই কোম্পানি গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুকের কাছাকাছি জায়গা থেকে সংগ্রহ করে এই বরফ। নুক-অঞ্চলের যেসব বরফখণ্ড মূল বরফস্তর থেকে প্রাকৃতিকভাবেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সেই রকম হিমশৈলের টুকরো থেকেই এই বরফ সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, তারা সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও পুরনো হিমশৈল থেকেই বরফখণ্ড সংগ্রহ করে থাকে! বড় আকারের বরফখণ্ডকে কেটে টুকরা করে তা প্যাকেটবন্দি করা হয়। তবে এই বরফে কোনো জীবাণু আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখে নেয়া হয়। এরপর ওই বরফ জাহাজে চাপিয়ে গ্রিনল্যান্ড থেকে দুবাইয়ে পাঠানো হয়। দুবাইয়ে আর একবার এই বরফ নতুন করে প্যাকেটবন্দি করা হয়, তারপর তা বিক্রি করা হয়।
কোম্পানির তরফে দাবি, তারা প্রাকৃতিক সম্পদ সংগ্রহের জন্য নতুন পন্থা তৈরি করেছে। এতে অর্থনীতির ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ তৈরি হবে এমনকি আর্কটিক অঞ্চল নিয়েও নতুন করে সচেতনতা তৈরি হবে।
যদিও ঠিক এখানেই পরিবেশপ্রেমীদের আপত্তি। তারা বলছেন, জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে জাহাজে করে বরফ দুবাইয়ে আনা পুরোদস্তুর অপব্যয়, পরিবেশের ক্ষতি। উভমুখী ক্ষতি- সরাসরি গ্রিনল্যান্ডের ক্ষতি, কেননা সেখান থেকে বরফ সংগ্রহ করা হচ্ছে, আর সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি কেননা প্রচুর তেল পুড়িয়ে তা দুবাইয়ে আনা হচ্ছে! তেল পুড়ে ভয়ংকর দূষিত করছে পরিবেশকে।
আর তা ছাড়া, তাদের যুক্তি, এত কাঠখড় পুড়িয়ে গ্রিনল্যান্ড থেকে বরফ দুবাইয়ে আনার দরকার কী? দুবাইয়ের তো নিজস্ব বরফ তৈরির সুবিধা রয়েছে! আর এর উপভোক্তারাও কোনো দিনই বরফটা কোথা থেকে আসছে, তা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামাবে বলেও তাদের মনে হয় না।