ঘনিয়ে আসছে ট্রাম্পের শপথ, বাড়ছে অবৈধদের আতঙ্ক!
ফেসবুকে আমেরিকান-বাংলাদেশিদের একটি গ্রুপে একজন বৈধ কাগজপত্র নাই উল্লেখ করে আমেরিকায় চাকরির জন্য পোস্ট দিয়েছেন । সেখানে আরেকজন কমেন্ট করেছেন “আপনাকেই খুঁজছে ট্রাম্প” । আরেক পোস্টে সাহায্য প্রার্থীকে ডনাল্ড ট্রাম্পের ফেসবুক আইডি মেনশন করে তাকে সাহায্যের জন্য বলছেন আরেক বাংলাদেশি !
এভাবেই অবৈধভাবে ভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারীদের জন্য নতুন এক আতঙ্কের নাম হয়ে গেছেন ট্রাম্প । কেউ লোভে-কেউ পরিস্থিতির শিকার হয়ে অবৈধ পথে স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় এসে বিপদে পড়েছেন । বিশেষ করে ডনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর আতঙ্কের মাত্রা বাড়ছে তাদের । নির্ঘুম রাত কাটছে, দিন কাটছে আইনজীবী আর চাকুরির চিন্তায় । লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে সাত সমুদ্র তেরো নদী এপারে এখন তাদের দুই কূল হারানোর আশঙ্কা । এদিকে শুধু বাংলাদেশি নয় ডনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে প্রত্যাবর্তনের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আগত অবৈধ অভিবাসীদের মাঝেও।
নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেট মেয়র এরিক এডামস ইতিমধ্যে অবৈধদের বিদায় করার জন্য ট্রাম্পের সাথে ফোনালাপে তার প্রশাসনকে সবধরনের সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই সাথে নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন হোটেলে রেখে প্রতি মাসে সিটির পক্ষ থেকে পাইলট প্রোগ্রামের আওতায় ক্যাশ ভাউচার দেয়া হয়, সেটাও বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে । এছাড়াও জন্ম হলেই যে আমেরিকান নাগরিক হওয়ার সুযোগ রয়েছে তাও বাতিল করার কথা বলা হয়েছে । এক্ষেত্রে পিতা মাতার যে কোনো একজনকে বৈধ বাসিন্দা হতে হবে ।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং পিউ রিসার্চ বিভাগের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ১১ মিলিয়ন বা এক কোটি দশ লাখের মতো অবৈধ অভিবাসী বসবাস করছেন।
ট্রাম্পের রানিংমেট জে ডি ভ্যান্সের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর ১০ লাখ অভিবাসীকে বের করে দেওয়া হতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামরিক বাহিনী থেকে শুরু করে বিদেশি কূটনীতিক ডেকে অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করতে বলতে পারেন। এ কাজে তিনি রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন অঙ্গরাজ্যগুলোর নেতাদেরও সহযোগিতা নিতে পারেন। এমনকি যেসব অঙ্গরাজ্যে আইনি বিধিনিষেধ আছে, সেখানকার তহবিল বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপও নিতে পারেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কংগ্রেস এবং সিনেটে রিপাবলিকান পার্টির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে । ফলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের তুলনায় এবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরকে আরও আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা যেতে পারে।
নির্বাচনের আগ অবধি ট্রাম্প অভিবাসীদের হিংসাত্মক অপরাধে ইন্ধন দেওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি
অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি উল্লেখ করে তাদের ‘বিতাড়িত’ করে আবারও আমেরিকাকে মহান করে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিজয়ের পরও তিনি সেই প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেননি।
অবৈধ পন্থায় আমেরিকায় প্রবেশ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, দেশে জায়গা জমি বিক্রি করে আমেরিকা এসেছেন । কিন্তু অল্প দিনের মধ্যেই নতুন আতঙ্ক সৃস্টি হলো । একদিকে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভালো চাকুরি মিলছে না অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন যদি অবৈধ বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয় তাহলে মাথায় হাত পড়বে । সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী মানবজমিনকে জানান, কয়েক ধাপে অবৈধ বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে । তবে যাদের কেস পেন্ডিং রয়েছে তাদের কোর্ট থেকে চূড়ান্ত রায় না হওয়া পর্যন্ত আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশন রয়েছে, তাদের গ্রেফতার করে ফেরত পাঠাতে পারে। তা বর্তমান আইনেও বিদ্যমান। আগে আইন একটু শীতল ছিল, এখন ট্রাম্পের আমলে হয়ত কঠোরভাবে প্রয়োগ হবে ।