ঘুমন্ত কৃষ্ণগহ্বর জেগে উঠেছে
এক বিশাল কৃষ্ণগহ্বর ঘুম থেকে জেগে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ফলে প্রথমবারের মতো কৃষ্ণগহ্বরের জেগে ওঠার ঘটনা পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছেন তাঁরা। পৃথিবী থেকে প্রায় ৩০০ আলোকবর্ষ দূরে কৃষ্ণগহ্বরটির অবস্থান। কৃষ্ণগহ্বরটি নীরবে অবস্থান করলেও ২০১৯ সাল থেকে কোনো সতর্কতা ছাড়াই পুনরায় সক্রিয় হতে শুরু করে। বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, সূর্যের ভরের এক লাখ গুণ বেশি ভরের এই কৃষ্ণগহ্বর হঠাৎই তার পার্শ্ববর্তী ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির অংশবিশেষ গ্রাস করতে শুরু করেছে। গ্রাস করার কারণে কৃষ্ণগহ্বরটি অতিমাত্রায় আলো নিঃসরণ করছে বলে এর জেগে ওঠার অভূতপূর্ব মুহূর্ত ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের কাছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে বিজ্ঞানীরা লক্ষ করেন, কৃষ্ণগহ্বরটির তারা থেকে প্রচুর পরিমাণে ইনফ্রারেড, অতিবেগুনি রশ্মি ও দৃশ্যমান আলো নির্গত হচ্ছে। ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির (ইএসও) জ্যোতির্বিজ্ঞানী পলা সানচেজ সায়েজ বলেন, ‘ভাবুন তো, আপনি বহু বছর ধরে একটি দূরবর্তী শান্ত ও নিষ্ক্রিয় ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করছেন। হঠাৎ এক সকালে তা জেগে উঠছে। কেমন মনে হবে তখন? এমনই এক বিরল ঘটনা আমাদের চোখে ধরা পড়েছে। শান্ত ও নিষ্ক্রিয় কৃষ্ণগহ্বরটির উজ্জ্বলতায় নাটকীয় পরিবর্তন দেখতে পেয়েছি আমরা। যদিও নানা কারণে বিভিন্ন গ্যালাক্সি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, যা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু কৃষ্ণগহ্বর জেগে ওঠার দৃশ্য আসলেই বিরল। সাম্প্রতিক তথ্য বলছে কৃষ্ণগহ্বরটি এখন আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।’
বর্তমানে ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির বিশাল টেলিস্কোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টেলিস্কোপের মাধ্যমে নজর রাখা হচ্ছে কৃষ্ণগহ্বরটির ওপর। এখন কৃষ্ণগহ্বরটি একটি সক্রিয় গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াস তৈরি করেছে। চিলির ভ্যালপারাইসো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী লোরেনা হার্নান্দেজ গার্সিয়া বলেন, ‘এই প্রথম আমরা বাস্তব সময়ে একটি বিশাল কৃষ্ণগহ্বরের জেগে ওঠা দেখতে পাচ্ছি। সাধারণভাবে কৃষ্ণগহ্বর পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত কঠিন। শুধু মহাকর্ষীয় লেন্সিংয়ের মাধ্যমে বা অতিরিক্ত উত্তপ্ত কোনো বস্তুকে নির্গত পদার্থের আলোর মাধ্যমে চারপাশের প্রভাব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কৃষ্ণগহ্বর শনাক্ত করা যায়। এই দৈত্যাকার দানবেরা সাধারণত ঘুমিয়ে থাকে। জেগে ওঠা কৃষ্ণগহ্বর পর্যবেক্ষণের বিষয়টি দারুণ এক ঘটনা। কৃষ্ণগহ্বর কীভাবে বৃদ্ধি পায় ও বিবর্তিত হয়, তা জানার বিরল সুযোগ পাচ্ছি আমরা।’