Hot

ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের নেতৃত্বে প্রবাসীরা

ঋণে জর্জরিত দেশ। ব্যাংকগুলো ফাঁকা। রিজার্ভ তলানিতে। মূল্যস্ফীতি হু হু করে বাড়ছে। অর্থনৈতিক এমন দৈন্যদশায় কুলহারা সংশ্লিষ্টরা। একের পর এক সিদ্ধান্ত নিয়েও অর্থনীতিকে তার গতিপথে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছিল না। বলতে গেলে বাংলাদেশ ফোকলা করে পালিয়ে যান পতিত শেখ হাসিনার সরকার। দেশের এমন দুরবস্থার মধ্যেই দেশের হাল ধরেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। কিন্তু পতিত আওয়ামী লীগের আমলের পাহাড়সম দুর্নীতি, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট-পাচার, আর্থিক খাতে ঋণ কেলেঙ্কারি সহ বিভিন্ন কারণে খাদের কিনারে চলে যাওয়া অর্থনীতিকে টেনে ধরবে কীভাবে? অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে কি এমন জাদুর কাঠি আছে যে, দ্রুত তার সমাধান এনে দেবে? তবে হ্যাঁ, এ সময় এগিয়ে আসে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। ধীরে ধীরে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা দুই হাত মেলে ধরায় অর্থনীতি চাঙ্গা না হলেও ধস থমকে দাঁড়ায়। অর্থনীতির গতি ফেরাতে শক্ত হাতে হাল ধরেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। চালু করেন সুশাসন। বন্ধ হয়ে যায় অর্থ পাচার। আর এতে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করেছে অর্থনীতির অন্যতম সূচক রেমিট্যান্স। এ ছাড়া আরেক সূচক রপ্তানি খাতও সঙ্গ দেয় এতে। 
বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে: পরিসংখ্যান বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে রপ্তানি ও আমদানির মধ্যে ব্যবধান বা বাণিজ্য ঘাটতি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি আয়ের শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ও আমদানি প্রবৃদ্ধি কমায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর শেষে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৭.৮৮ বিলিয়ন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৯.৮৬ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ মাসে দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১০.১ শতাংশ, আর আমদানি কমেছে ১.২ শতাংশ। আমদানি প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার কমে যাওয়া এবং রপ্তানি আয় প্রায় ১.৬৬ বিলিয়ন বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে।

রেমিট্যান্স প্রবাহ ও রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি থাকায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে দেশের বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য হিসেবে পরিচিত ব্যালান্স অব পেমেন্টের ঘাটতি ৪৯.৫ শতাংশ কমে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ব্যালান্স অব পেমেন্টের সার্বিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২.৪৭ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ২.৪৩ বিলিয়ন ডলার কম।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘাটতি হ্রাস হওয়া দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। এই অর্জনে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। কারণ, বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানের মতো উপাদানগুলোতে আমরা তেমন প্রবৃদ্ধি দেখিনি। তাছাড়া এই ঘাটতি কমেছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় থেকে। এটা ভবিষ্যতে ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়াবে না।
আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কমেছে: ওভারডিউ রপ্তানি আয় দেশে আসায় এবং স্বল্পমেয়াদি লোনের বহিঃপ্রবাহ কমার কারণে চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের আরেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আর্থিক হিসাবে ঘাটতিও কমেছে। এ সময়ে আর্থিক হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৮১ মিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮১১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ চলতি অর্থবছরে এই ঘাটতি প্রায় ২৩০ মিলিয়ন ডলার কমেছে।
ঊর্ধ্বমুখী রেমিট্যান্স: এদিকে ঊর্ধ্বমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর ভর করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টের অন্যতম উপাদান চলতি হিসাবে ঘাটতি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯৪ শতাংশ কমেছে। নভেম্বর শেষে দেশের চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২২৬ মিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩.৯৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১১.১৪ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের এই পাঁচ মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮.৮১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৩৩ বিলিয়ন ডলার বা ২৬ শতাংশ। ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূলত রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হওয়ার কারণে চলতি হিসাবের ঘাটতি কমে এসেছে। গত কয়েক বছর ধরে চলতি হিসাবের ঘাটতি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছিল। এই ঘাটতিটা কমিয়ে আনা পুরো অর্থনীতির জন্য খুব ভালো দিক।
রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে: অর্থনীতির আলোচিত সূচক বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘরে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন) হিসাবে ৮ই জানুয়ারি বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২১.৬৭ বিলিয়ন ডলার। গ্রস হিসাবে ছিল ২৬.৫৭ বিলিয়ন ডলার। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১.৬৭ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর বিপিএম-৬ হিসাবে রিজার্ভ নেমেছে ২০ বিলিয়ন ডলারে। গ্রস হিসাবে দাঁড়িয়েছে ২৪.৯ বিলিয়ন ডলারে। নভেম্বরের শেষদিকে দেশের নিট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ১৮ কোটি ডলার ও গ্রস রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ডলার। ফলে এক মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ ডিসেম্বরে দেশের নিট রিজার্ভ বেড়েছে ২৬২ কোটি ডলার ও গ্রস রিজার্ভ বেড়েছে ১৭৪ কোটি ডলার। গত ৫ই আগস্ট সরকার পরিবর্তনের সময় ঋণ ছিল ৩৭০ কোটি ডলারের উপরে। এর মধ্যে গত ৫ মাসে ৩৩০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধের পরও রিজার্ভ বেড়েছে। রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাড়ায় সূচক বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, প্রতি বারই আক’ুর বিল শোধের পর রিজার্ভ কমে আসে। তবে উদ্বেগের কিছু নেই। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গতি বেশ ভালো। রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। রিজার্ভ আবার বাড়বে। 
রপ্তানি আয়: রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলেছে, এই ছয় মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে মোট আয় হয়েছে ২৪.৫৩ বিলিয়ন ডলার। এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ১৩ শতাংশ বেশি।
মূল্যস্ফীতি চ্যালেঞ্জ: বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে বড় চ্যালেঞ্জের একটি মূল্যস্ফীতি। দীর্ঘ দিন ধরে উচ্চমূল্যে স্থির নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম। এক বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে দেশের মানুষ। কিন্তু মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ ২০২৪ সালে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৩৪ শতাংশ। ডিসেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ১০.৮৯ শতাংশ। আর খাদ্যে হয়েছে ১১.৯২ শতাংশ। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪.১০ শতাংশে উঠেছিল, যা ছিল সাড়ে ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। অন্যদিকে ২০২৪ সালের ১২ মাসের মধ্যে প্রথম আট মাস মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশের ঘরে। শেষ চার মাস ৮ শতাংশের উপরে ছিল এই হার।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d