Hot

ঘুরে যাবে রাজনীতির মোড় বেগম খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা

গোটা জাতি এক মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়। বেগম খালেদা জিয়া দুই পুত্রবধূ ও তিন নাতনীকে নিয়ে দেশে ফিরছেন। ৪ আগস্ট লন্ডন থেকে রওনা দিয়ে ৫ আগস্ট তার ঢাকায় পৌঁছার কথা। বেগম জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন; তিনি দেশ ও জাতির সম্পদ। তার জাদুকরী নেতৃত্বে সবাই মুগ্ধ। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্টে জিয়াউর রহমানের পর তার (বেগম খালেদা জিয়া) মতো জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য নেতানেত্রী এদেশে জন্মগ্রহণ করেনি। সেই বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরছেন। তিনি এখন সুস্থ এবং রাজনীতি করার ক্ষেত্রে তার কোনো বাধানিষেধ নেই। একজন গৃহবধূ থেকে রাজনীতির মধ্যমণি হয়ে ওঠা ক্ষণজন্মা এই নেত্রীকে স্বাগত জানাতে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। খালেদা জিয়ার এই প্রত্যাবর্তন দেশের রাজনীতির জন্য টার্নিং পয়েন্ট। তার রাজনীতিতে ফিরে আসা দেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় নেবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম জিয়া দেশে এসে রাজনীতিতে ফিরলেই রাজনীতির মোড় ঘুরে যাবে। সব শ্রোত মিশে যাবে বেগম জিয়াকে কেন্দ্র করে। তিনি সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। রাজনীতিতে তার সুচিন্তিত কোনো সিদ্ধান্ত ও বক্তব্য মেনে নিয়ে সব মত ও পথের রাজনীতিকরা প্রহর গুনছেন। এ ছাড়াও বেগম খালেদা জিয়া ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ‘চিন্তা ও চেতনায়’ একে অন্যের পরিপূরক। নোবেল-বিজয়ী ড. ইউনূসের দুর্দিনে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১০ সালে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট হাসিনার জুমুল-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে জাতীয় সংসদে বেগম জিয়া যে বক্তব্য দেন সেটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। আবার গত বছরের ২১ নভেম্বর সশস্ত্রবাহিনী দিবসে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে যান বেগম খালেদা জিয়া। অসুস্থ খালেদা জিয়াকে পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আবেগাপ্লুত হয়ে ওঠেন এবং তিনি বেগম জিয়াকে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনের করেন। বেগম জিয়াকে দেখেই ড. ইউনূস সেখানে এগিয়ে যান এবং দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ কথা বলেন। এ সময় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দেখা যায় লাইন ধরে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে নিজেরা পরিচিত হচ্ছেন এবং বেগম জিয়ার সঙ্গে ছবি তুলছেন।

রাজনীতিতে এলোমেলো বাতাস বইছে। ৫ আগস্ট হাসিনার পলায়ন এবং ৮ আগস্ট ড. মহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। ড. ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করবেন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোতে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব না থাকায় নির্বাচন ইস্যুতে নানাভাবে পানি ঘোলার করার চেষ্টা হচ্ছে। বিদেশে থেকে তারেক রহমানের সুযোগ্য নেতৃত্বে বিএনপি এগিয়ে চললেও নির্বাচন ইস্যুতে জামায়াত, এনসিপি ছড়ি ঘোরাচ্ছে। রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতি ছোট-বড় দলগুলোর নেতাদের বল্গাহীন করে তুলেছে। বেগম জিয়ার লন্ডন থেকে দেশে ফেরা এবং রাজনীতিতে ফেরা সেই বল্গাহীন রাজনীতিতে ফুলস্টপ দেবে।

আগামী ৫ মে দেশে ফিরছেন বেগম খালেদা জিয়া। তার সঙ্গে দেশে ফিরছেন তারেক রহমানের স্ত্রীর ডা. জোবাইদা রহমান, কন্যা ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান ও তাদের দুই মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান। খালেদা জিয়া তথা জিয়া পরিবারের প্রতিটি সদস্য এখন রাজনীতির মধ্যমণি। ফলে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা কোনো স্বাভাবিক ফেরা নয়। বেগম জিয়ার দেশে ফেরার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হবে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেয়ায় বেগম খালেদা জিয়া এখন পুরোপুরি সুস্থ। তিনি দেশে ফিরেই রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করবেন। রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তনে পাল্টে যাবে দেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি। কারণ বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির নেত্রী হলেও তিনি সর্বজন গ্রহণযোগ্য। দেশের কোটি কোটি মানুষ তো বটেই, দেশের ভিন্নমতের রাজনৈতিক দলগুলো বেগম জিয়ার জাদুকরী নেতৃত্ব দেখতে উদগ্রীব। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বেগম জিয়া এখন সুস্থ। তিনি দেশে ফিরে রাজনীতির মাঠে নামলে নির্বাচন নিয়ে যে এলোমেলো বাতাস বইছে তা আর থাকবে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশের প্রায় অর্ধশত রাজনৈতিক দলের নেতারা বেগম জিয়ার দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন। এমনকী অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও বেগম জিয়ার দেশে ফেরার পাশাপাশি রাজনীতিতে ফেরার অপেক্ষায়।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে দেশের রাজনীতিতে কার্যত অনুপস্থিত। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের পাতানো দুর্নীতির মামলায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ক্যাঙ্গারু কোর্ট বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদ- দেয়। ফলে ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া গ্রেফতার হয়ে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন। করোনা মহামারীর সময় দেশি-বিদেশি চাপ এবং স্বাস্থ্যগত কারণে বিগত সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় কারামুক্তি দিতে বাধ্য হয়। অতঃপর তাকে গুলশানে রাখা হয়। অসুস্থতা ও আইনি বিধিনিষেধের কারণে তিনি রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা বলেননি। পুত্র তারেক রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিয়োগ করেন। বছরের পর বছর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন; চিকিৎসকরা তার উন্নত চিকিৎসার জন বিদেশে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বহুবার কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা তাকে বিদেশ যেতে দেয়নি। তারপরও বেগম জিয়া নীরব ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন এবং মাফিয়া নেত্রী হাসিনা দেশে থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের পরামর্শে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি দেন। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় সারাজ দিয়ে তাকে বন্দি করা হয়েছিল সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত।
দেশ এবং যেকেনো দলের নেতৃত্বের জন্য ব্যক্তিত্ব খুবই প্রয়োজন। ২০১৮ সাল থেকে বেগম খালেদা জিয়ার অবর্তমানে দেশের রাজনীতিতে অভাববোধ করেছে জাতি। বেগম জিয়ার ব্যক্তিত্ব হলো ভাবগাম্ভীর্যতা, বুদ্ধিবৃত্তিক বাক্যব্যয়, মোহনীয় আচরণ ও আন্তরিকতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। বেগম জিয়ার আদর্শ, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে যোগ্য নেতৃত্বের ভূমিকা অপরিহার্য। সঠিক নেতৃত্বের ফলে একটি জাতি তার অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে উন্নতির চূড়ান্ত শিখরে আরোহণ করতে পারে; যা বেগম জিয়াকে দিয়ে সম্ভব। আবার দুর্বল বা অযোগ্য নেতৃত্ব জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি নিয়ে আসে। আমরা যুগে যুগে বহু শাসক দেখেছি, যারা একটি সুশৃঙ্খল জাতিকে (বাংলাদেশে শেখ হাসিনা) ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। আবার যোগ্যতা আন্তরিকতা দিয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছে। বেগম জিয়া তেমন একজন নেত্রী। সাংগঠনিক ও অনুসারীদের সম্পর্কে জ্ঞান থাকা, অনুযায়ী উপযুক্ত কর্মী বাছাই, বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে কাজ বিভক্তিকরণ, দায়িত্ব বণ্টন, সুসম্পর্কের জন্য যোগাযোগ, কার্যকর সমন্বয় সাধন এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারা নেত্রীই হচ্ছেন বেগম জিয়া। তিনি রাজনীতিতে নামলেই রাজনীতির গতিধারা বদলে যাবে। বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে নামলে বিএনপির রাজনীতি নতুন গতি পাবে। শুধু তাই নয়, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন। গত মাসে জামায়াতে আমির ডা. শফিকুর রহমান লন্ডনে গিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এনসিপিসহ অন্যান্য দলের নেতারাও উদগ্রীব হয়ে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য। প্রায় ছয় দশক থেকে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় এমন একজন নেতা বলেন, বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে নামলে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ঘটবে। কারণ তিনি যে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেত্রী এবং মানুষের মনের কথা বুঝতে পারেনÑ অন্য নেতারা সেটি পারেন না। তা ছাড়া পরিচ্ছন্ন নেত্রী হিসেবে ডান-বাম-মধ্যপন্থি সবার কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্ব। দীর্ঘ চার মাস চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরছেনÑ এ খবরে সারা দেশের হাজার হাজার মানুষ ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন। তারা বিমানবন্দরে নেত্রীকে এক নজর দেখতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন।

এদিকে প্রায় ১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান দেশে ফিরছেন। দেশে ফেরার পর তার জন্য পুলিশের নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দেশে ফেরার পর তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। গত বুধবার এই চিঠি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে ফিরবেন। তার ধানমন্ডি ৫-নম্বর রোডের বাসায় ও রাস্তায় চলাচল সময়ে পুলিশের নিরাপত্তা চেয়ে এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিবের স্বাক্ষরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইজিপিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ, ম্যাডাম আগামী ৫ তারিখ সোমবার সকালে দেশে ফিরছেন। আমরা যতদূর জানি, সঙ্গে উনার দুই বউমা (তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমান ও আরাফাত রহমানের স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান) আসার কথা রয়েছে।’ কেমন আছেন খালেদা জিয়া জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মোটামুটি আলহামদুলিল্লাহ, আগের চাইতে উনি (খালেদা জিয়া) ডেফিনেটলি ভালো।’ তিনি বলেন, ‘ম্যাডামের দেশে ফেরার ব্যাপারে কাতারের আমিরের কাছ থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সটি উনাকে লন্ডনে নেয়ার জন্য পেয়েছিলাম সেটি এখন একটু বিলম্বিত হচ্ছে টেকনিক্যাল রিজিয়নস, সে জন্য ম্যাডাম ঠিক করেছেন, ওইটা (এয়ার অ্যাম্বুলেন্স) যদি শেষ মুহূর্তে না পাওয়া যায় উনি বাংলাদেশ বিমানেই আসবেন।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d