Science & Tech

ঘূর্ণিঝড়ের বিপৎসংকেত —কোনটার কী মানে?

‘উপকূলীয় নৌযানকে ৮ নম্বর মহাবিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।’ টেলিভিশন বা রেডিওতে শোনা সবচেয়ে পরিচিত ঘোষণা। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড়ের সময়। ঘূর্ণিঝড়ের কঠিন এই সময়টাতে এসব সংকেতের মানেটা কী? মানে আছে।

তার চেয়েও বেশি রয়েছে প্রয়োজন। এগুলো নিছক সংকেত নয়। উপকূল বা তার আশপাশের মানুষকে সতর্ক করতেই দেওয়া হয় এই সংকেতগুলো। সংকেত বাড়া মানে বিপদ আসন্ন, কঠিন সময় আসছে।

সে অনুযায়ী জেলেদের সাগরে বা নদীতে যাওয়া নিষেধ। কোনো সংকেতে ঘরের মায়া ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হবে তা-ও নির্ধারিত হয়। কোন সংকেতে কী নির্দেশনা থাকে তা-ই জানব আজ। 

সাধারণত দুটি ক্ষেত্র রয়েছে সংকেতের।

একটি নদীর জন্য, অন্যটি সাগরের। ক্ষেত্রভেদে সংকেতের সংখ্যা ও ধরনেও আছে পার্থক্য।
নদীবন্দরের জন্য সংকেত দুর্যোগপূর্ণ আবহওয়ার সময় নৌপথে নিরাপদ চলাচল ও জান-মাল রক্ষার্থে সরকার অনুমোদিত পদ্ধতিতে নদীবন্দরের জন্য মোট ছয়টি সংকেত চালু আছে। ছয়টি সংকেতের প্রথমটি হবে স্থানীয় সতর্কসংকেত ৩। দ্বিতীয়টি হলো স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত ৪।

এরপর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে মিল রেখে বিপৎসংকেত ও এবং মহাবিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০। অর্থাৎ শুধু নদীবন্দরের জন্য ৩ ও ৪ নম্বর সংকেতই থাকে, যা কালবৈশাখী ও বর্ষাকালীন ঝোড়ো হাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। বড় ঝড় কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে সমুদ্রবন্দরের মতোই নদীবন্দরেও বিপৎসংকেত ও এবং মহাবিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০ ব্যবহার করা হয়। এ পদ্ধতিতে ৭ নম্বর সংকেত থাকছে না। ২০০৮ সালের এই পদ্ধতিতে নদীবন্দরের জন্য ১ ও ২ নম্বর সংকেত না থাকলেও শীতকালে কুয়াশা ও বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির জন্য দৃষ্টিগ্রাহ্যতা কমে গেলে নৌ-পরিচালনার জন্য এমন সতর্কবার্তা ঘোষণা করা হয়, যাতে সাবধানে চলার নির্দেশ থাকে।

সমুদ্র ও বন্দরের জন্য সংকেত
সমুদ্রের জন্য সংকেত প্রচলিত পুরনো পদ্ধতির ১১টির স্থলে নতুন পদ্ধতিতে সমুদ্র ও সমুদ্রবন্দরের জন্য মোট আটটি সংকেত প্রবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে দূরবর্তী সতর্কসংকেত ১ ও দূরবর্তী হুঁশিয়ারি-সংকেত ২ শুধু গভীর সমুদ্র এলাকার জন্য। এর প্রথমটির অর্থ হচ্ছে দূরে, গভীর সমুদ্রে ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগের ঝোড়ো হাওয়া বইছে। এই ঝোড়ো হাওয়া সামুদ্রিক ঝড়েও পরিণত হতে পারে। বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজ এবং গভীর সমুদ্রে অবস্থানরত নৌযানগুলো এর সম্মুখীন হতে পারে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। 

দ্বিতীয়টির অর্থ— দূরে, গভীর সমুদ্রে ঝড় সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত। বন্দর এখনই এই ঝড়ের কবলে পড়বে না। তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ এই ঝড়ের কবলে পড়তে পারে। মাছ ধরার ট্রলার ও নৌকাগুলোকেও উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলতে হবে, যাতে স্বল্প সময়ে নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসতে পারে।

সমুদ্রবন্দরের সংকেত নদীবন্দরের মতো সমুদ্রবন্দর এবং উপকূলীয় অঞ্চলের জন্যও ঝড়ের সংকেত শুরু হবে স্থানীয় সতর্কসংকেত ৩ থেকে। তার আগে দুটি দূরবর্তী সতর্ক ও দূরবর্তী হুঁশিয়ারিসংকেত রয়েছে।

দূরবর্তী সতর্কসংকেত-০১ : যখন বাতাসের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৫১-৬১ কিলোমিটার। এটি ঝড়ে পরিণত হতে পারে। দূরবর্তী সমুদ্রের জন্য এই সর্তকবার্তা। বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় পড়তে পারে।

দূরবর্তী হুঁশিয়ারিসংকেত-০২ : এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। এটিও দূরবর্তী সমুদ্রের জন্য। বন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়া নৌযানকে উপকূলের কাছাকাছি সাবধানে চলাচল করতে হবে। যেন খুব দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়া যায়।
 

স্থানীয় সতর্কসংকেত-০৩ : এটি সমুদ্রবন্দর, উপকূলীয় অঞ্চল ও নদীবন্দরের জন্য প্রযোজ্য হবে। এ সময়টাতে বন্দর ও বন্দরের আশপাশের এলাকায় ঘণ্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ঝোড়ো হাওয়ার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে এবং নদীতে চলাচলকারী ৬৫ ফুট এবং এর কম দৈর্ঘ্যের নৌযানগুলোকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। 

স্থানীয় হুঁশিয়ারি-সংকেত-০৪ : বন্দর ও আশপাশের এলাকা ঘূর্ণিঝড়কবলিত। বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ ৫১-৬১ কিলোমিটার/ঘণ্টা। ঘূর্ণিঝড়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার মতো বিপজ্জনক সময় এখনো আসেনি। ১৫০ ফুট এবং এর কম দৈর্ঘ্যের যেসব নৌযান ঘণ্টায় ৬১ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত ঝোড়ো হাওয়া প্রতিরোধে সক্ষম নয়, সেসব নৌযানকে বিলম্ব না করে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। এটিও সমুদ্রবন্দর ও উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য হবে। উল্লেখ্য,  সমুদ্রবন্দরের জন্য স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত ০৪— ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রিক ভয়াবহ ধরনের ঝড়ের পূর্বাভাস। যা উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের এক বিশাল অংশে আঘাত করতে পারে।

বিপৎসংকেত-০৬ : এ সময় মাঝারি-তীব্র সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় মাঝারি-ঝোড়ো আবহাওয়া থাকবে। ঘণ্টায় ৬২-৮৮ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে এবং নদীতে চলাচলকারী সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হবে।

মহাবিপৎসংকেত-০৮ : প্রচণ্ড তীব্রতাসম্পন্ন সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দরে অতি তীব্র ঝোড়ো হাওয়া বিরাজ করবে। প্রচণ্ড এ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯-১১৭ কিলোমিটার হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী সব নৌকা ও ট্রলারকে সংকেত-০৬-এর মতোই নির্দেশনা থাকবে।

মহাবিপৎসংকেত-০৯ : এটি প্রচণ্ড তীব্রতাসম্পন্ন একটি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, যার কারণে বন্দর এবং তৎসংলগ্ন এলাকার অতি তীব্র ঝোড়ো আবহাওয়া থাকবে। হারিকেনের তীব্রতাসম্পন্ন প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮-১৭০ কিলোমিটার হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী সব নৌকা ও ট্রলারকে সংকেত-০৬-এর মতোই নির্দেশনা থাকবে।

মহাবিপৎসংকেত-১০ : এটি সুপার সাইক্লোনের তীব্রতাবিশিষ্ট প্রচণ্ডতম একটি সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বন্দর এলাকায় অতীব তীব্র ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঝোড়ো আবহাওয়া থাকলে কার্যকর হবে। সর্বোচ্চ তীব্রতার এ ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৭১ কিলোমিটার বা আরো বেশি। উত্তর বঙ্গোপসাগরে চলাচলকারী সব নৌকা ও ট্রলারকে সংকেত-০৬-এর মতোই নির্দেশনা থাকবে।

ঘূর্ণিঝড়ে সতর্ক-পতাকা উত্তোলন : 
সংকেত— ০১, ০২, ০৩ : একটি পতাকা।
সংকেত— ০৪, ০৬ : দুটো পতাকা পরপর।
সংকেত— ০৮, ০৯, ১০ : তিনটি পতাকা পরপর।
এভাবেই নদী ও সমুদ্রে সতর্কসংকেতে ঘূর্ণিঝড়ের মোকাবেলা করার প্রস্তুতি চলে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d