Bangladesh

চট্টগ্রামে কারণ ছাড়াই সবকিছুর দাম বাড়ছে লাফিয়ে: বাজারে আগুন দিশেহারা সাধারণ মানুষ

চট্টগ্রামে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে। ডিমের ডজন ১৭০ টাকা ছাড়িয়েছে। মাছ, গোশতের দামে আগুন। ভরা মৌসুমেও বাজারে ইলিশের আকাল। অন্য মাছও সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। শাকসবজির দামও চড়া। তাতে নাভিশ্বাস উঠেছে স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষের।

ক্রেতারা বলছেন, সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি সবাই। সরকারের নজরদারি না থাকায় বাজারে জিনিসপত্রের দামে আগুন। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে লোক দেখানো কিছু জরিমানা করা হলেও সিন্ডিকেটের কারসাজি থামানো যাচ্ছে না। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমত পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। একেক বাজারে একেক দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্য। এসব দেখার যেন কেউই নেই।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চট্টগ্রামের বাজারে ভোগ্যপণ্যসহ সব ধরনের পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখি হতে শুরু করে। যৌক্তিক কোন কারণ ছাড়াই পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। মহানগরীর হাটবাজারের পাশাপাশি জেলার হাটবাজারগুলোতেও সিন্ডিকেটের কারসাজি চলছে। বাজারে শাকসবজির সরবরাহ রয়েছে। এরপরও দাম চড়া। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পরিবহন ভাড়া বেড়েছে, পথে পথে চাঁদা, বকরা দিতে হচ্ছে। এ কারণে দাম বাড়ছে।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন বাজারে এক ডজন বিক্রি হয় ১৬৫-১৭০ টাকায়। প্রতিটি ডিমের পড়ছে প্রায় ১৫ টাকা করে। জেলা প্রশাসন ও ভোক্তা অধিকার ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েকটি এলাকায় গত কয়েকদিনে একাধিক অভিযান পরিচালনা করে। এসব অভিযানে কয়েকজন আড়তদার ও দোকানিকে জরিমানা করা হয়। তবে বাজারে এর কোন প্রভাব পড়েনি। ডিমের দাম ঊর্ধ্বমুখিই রয়ে গেছে।

মাছের বাজারে ঢোকা দায়। সাধারণ মানের রুই, কাতলা পৌনে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, পাঙ্গাস ২৫০-২৭০ টাকা। ছোট চিংড়ি প্রতিকেজি ৬০০-৭০০ টাকা, বাগদা ৮০০-৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লইট্টা মাছ ২০০-২২০ টাকা, পোয়া মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা, পাবদা ৪০০-৪৫০ টাকা, ট্যাংরা ৫৫০-৬০০ টাকা, কোরাল ৫৫০-৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ইলিশের সরবরাহ একেবারেই কম। ছোট আকারের ইলিশের কেজি ৬০০-৭০০ টাকা হাঁকা হচ্ছে। মাঝারি সাইজের প্রতিকেজি ১০০০-১২শ’ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনও বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ নেই। গভীর সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে প্রায় খালি হতে ফিরছেন জেলেরা। বাজারে অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের সরবরাহও কম। গোশতের বাজারও চড়া। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি ১৬৫-১৭০ টাকা, সোনালিকা ২৯০-৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি প্রতিকেজি ৫৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাড়সহ গরুর গোশত ৭৫০-৮০০ টাকা এবং হাড় ছাড়া ৮৫০-৯০০ টাকা, খাসি ১১শ থেকে ১২শ’ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। শাকসবজির সরবরাহ ঢেড়স ৭০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৬৫ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা, ঝিঙে ৭০-৮০ টাকা, আলু ৪৫ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পেঁপে ৩০ টাকা, টমেটো ১৪০-১৫০ টাকা, শসা ৫০-৬০ টাকা, শসা (বড়) ৭০ টাকা, গাজর ১৫০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, তিতা করলা ৯০-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা মরিচ প্রতিকেজি ২৪০-২৫০ টাকা। পেঁয়াজের দাম আরও এক দফা বেড়েছে। প্রতিকেজি পেঁয়াজ এখন ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুন ১৩০-১৪০ টাকা, আদা ২২০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, ডাল, সয়াবিন, চিনিসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীর পৌনে এক কোটি বাসিন্দার বিরাট একটি অংশ স্বল্প ও সীমিত আয়ের। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তারা এখন দিশেহারা। মূল্যস্ফীতির মধ্যে যানবাহন ভাড়া থেকে শুরু করে ঘরভাড়া বিদ্যুৎ ও গ্যাসসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। তাতে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে। এ অবস্থায় ভোগ্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন স্বল্প ও সীমিত আয়ের লোকজন। দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকের কাছে মাছ, গোশত খাওয়া এখন বিলাসিতা। এর মধ্যে ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাও সাধারণের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button