চট্টগ্রামে শেখ হাসিনা সরণি ৪ লেনে উন্নীতকরণ, প্রশ্নের মুখে ২১ খাতে ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি
মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ ও টেকসই করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে চট্টগ্রামের শেখ হাসিনা সরণি। এজন্য ‘শেখ হাসিনা জাতীয় মহাসড়ক সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণ’ নামে একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। কিন্তু এ প্রকল্পের ২১ খাতের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রস্তাবে প্রতি কিলোমিটারে সব মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। জানা যায়, প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায়ও পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে এ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান। শীঘ্রই এ বৈঠক হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবটি নিয়ে ২২ জুলাই পিইসি সভা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চলমান সাধারণ ছুটির কারণে পিছিয়ে গেছে। নতুন তারিখ নির্ধারণ হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫৬৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে এটির বাস্তবায়ন করবে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। যেসব খাতের প্রস্তাবিত ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে সেগুলো হলো ভূমি অধিগ্রহণ, সড়ক প্রশস্তকরণ, সড়ক সার্ফেসিং, সার্ভিস লেন নির্মাণ, রোড মিডিয়ান, ডিভাইডার, ফুটওভার ব্রিজ এবং প্যালাসাইডিং নির্মাণ। এছাড়া ইউটিলিটি স্থানান্তর, রোড মার্কিং, সাইন, সিগন্যাল, কিলোমিটার পোস্ট, ইন্টার সেকশন, ওভারহেড ডাইরেকশনাল এবং সাধারণ ড্রেন নির্মাণ। আরও আছে সসার ড্রেন, ইউড্রেন, আরসিসি বক্স কালভার্ট এবং আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল তৈরি।
জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, প্রকল্পের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি আছে। কেউ ইচ্ছা করলে ইচ্ছামতো দাম ধরতে পারেন না। এখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের গইডলাইন, রেট শিডিউল, বাজার মূল্য ইত্যাদি ভিত্তির ওপর নির্ভর করে কোনো কিছুর ব্যয় প্রাক্কলন করতে হয়। এ প্রকল্পের বিষয়ে পিইসি সভায় বসে দেখা হবে তারা কোন ভিত্তির ওপর বিভিন্ন অঙ্গের ব্যয় প্রাক্কলন করেছে। কোথাও বেশি ব্যয় মনে হলে যাচাই-বাছাই করেই সুপারিশ দেওয়া হবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত শেখ হাসিনা সরণি জাতীয় মহসড়কটির দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ৩০ মিটার। এটি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব শিল্পনগর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া নামক স্থানে এসে সংযুক্ত হয়েছে। এ সড়কে প্রতিদিন অসংখ্য যান চলাচল করে। শিল্পনগরটি পুরোপুরি চালু হলে সড়কটিতে ভারী যানবাহন বৃদ্ধি পাবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ মহাসড়কটি সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে উন্নীতকরণের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এজন্য ইতোমধ্যে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। মহাসড়কটি দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে স্থাপিত কলকারখানায় উৎপাদিত পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হবে। প্রকল্পের আওতায় সড়ক বাঁধ প্রশস্তকরণে ১২ দশমিক ৭০ লাখ ঘনমিটার মাটির কাজ, ২১টি আরসিসি কালভার্ট তৈরি ও প্রশস্তকরণ এবং ১০ কিলোমিটার বিদ্যমান পেভমেন্ট মজবুতকরণ ও সার্ভিস লেনসহ ৪ লেনে প্রশস্তকরণ করা হবে। এছাড়া ১০ কিলোমিটার সড়ক ডিবিএস ওয়্যারিং কোর্সের মাধ্যমে সার্ফেসিং এবং ক্যারেজওয়ের উভয় পাশে ১ মিটার করে সফট সোল্ডার রাখা হবে। পাশাপাশি সড়কটি ৩০০ মিলিমিটার ইমপ্রুভ সাবগ্রেডের ওপর পর্যায়ক্রমে ২৫০ মিলিমিটার সাব বেইস, ২০০ মিলিমিটার বেইস টাইপ-২,২০০ মিলিমিটার বেইস টাইপ-১, ৭০ মিলিমিটার বাইন্ডার্স কোর্স এবং ৫০ মিলিমিটার ওয়্যারিং কোর্সের মাধ্যমে মজবুতকরণ করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ছক অনুযায়ী এ প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করা হয়নি। এছাড়া ডিপিপিতে অনেক বিষয়ে ঘাটতি আছে। সেগুলো উল্লেখ করে পিইসি সভায় আলোচনা করা হবে। এছাড়া ডিপিপিতে ক্ষতিপূরণসহ ৮ দশমিক ০৯ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ৬৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন থেকে কোনো প্রকার ব্যয় প্রাক্কলন অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আরও আছে ১০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ৪ লাখ টাকা। এছাড়া সড়ক সার্ফেসিংয়ের জন্য ৭৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, সার্ভিস লেন তৈরির জন্য ৯০ কোটি ৬১ লাখ, রোড মিডিয়ানের জন্য ৮ কোটি ১৬ লাখ, রোড ডিভাইডারের জন্য ৩২ কোটি ২৮ লাখ এবং চারটি ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণে ১১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এসব ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি এবং প্রয়োজনীয়তা ও কারিগরি ডিজাইন সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হবে। আরও আছে, প্রকল্পের আওতায় ১০৩ মিটারের ২১টি আরসিসি বক্স কালভার্ট নির্মাণ বাবদ ৫০ কোটি ৭১ লাখ, ১ হাজার ৭৮০ মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল বাবদ ২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং ৬০০ মিটার আরসিসি প্যালাসাইডিং বাবদ ধরা হয়েছে সাড়ে ৬৩ লাখ টাকা। এসব অঙ্গের ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হবে।