Trending

চলছে মালয়েশিয়ায় অবৈধদের দুঃসময়, আপসহীন ইমিগ্রেশন

মালয়েশিয়ায় চলছে অবৈধ অভিবাসীদের দুঃসময়। কোনোভাবেই অবৈধ অভিবাসীদের না থাকতে দেয়ার প্রত্যয়ব্যক্ত করেছে দেশটির ইমিগ্রেশন। চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফিরতে হবে এমন দৃঢ় সিদ্ধান্তের মধ্যে অবৈধ শ্রমিকদেরও ঘরে ফিরে আসতে হবে বারবার এমন তাগিদেও যারা ফিরবেন না তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে দেশটির সরকার।

দেশটির ইমিগ্রেশন সূত্র জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে থাকা বিদেশি শ্রমিকদের বৈধ করতে ২০২২ সালের ২৭ জানুয়ারি রিক্যালিব্রেশন ২.০ প্রকল্প হাতে নেয় দেশটি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিবন্ধন করে অবৈধ শ্রমিকদের বৈধ করার সুযোগ দেয়া হয়। দফায় দফায় এ প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ানো হয়। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ থাকার মধ্যেও যারা বৈধতা নিতে পারেনি তাদের জন্য অপেক্ষা করেছে আতংক। কখন না জানি হানা দেয় ইমিগ্রেশন। জঙ্গলে, খাটের নিচে, বিল্ডিং থেকে লাফিয়ে, দেয়াল টপকিয়ে, প্রজেক্টের লঙ্কানে বা কাঠের নিচে গর্তে লুকিয়েও রক্ষা পাচ্ছে না অবৈধরা। অবৈধদের আটকের খবরে চোখের পাতা ভারী হয়ে উঠছে দিনকে দিন।

এদিকে অবৈধদের বৈধ করার কর্মসূচি রিক্যালিব্রেশন তালিকায় বরাবরই শীর্ষে থাকে বাংলাদেশ। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ ধাপে এই রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রামে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৪ লাখেরও বেশি শ্রমিক নিবন্ধন করে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার।

তবে নানা জটিলতায় অনেক অবৈধ বাংলাদেশি এ প্রকল্পের যারা সুযোগ নিতে পারেনি তাদের বৈধ হওয়ার সুযোগ করে দিতে চলে কূটনৈতিক তৎপরতা।

শেষমেষ মালয়েশিয়া সরকার রিক্যালিব্রেশন ২.০ নামে অবৈধদের বৈধ করার একটি বিশেষ প্রোগ্রাম শুরু করে। এই প্রোগ্রামে যারা বৈধ হবে তারা ১৫০০ রিঙ্গিত দিয়ে কোম্পানি মালিকের মাধ্যমে বেঁধে দেয়া ৩১ মার্চের মধ্যে তাদের টেম্পরারি ভিজিট পাস নিবেন।

এর পাশাপাশি চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে শুরু হয় অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচি (পিআরএম)। এ কর্মসূচির মাধ্যমে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে চলে যেতে প্রতিনিয়ত আহবান জানাচ্ছে দেশটির সরকার ও স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এই প্রত্যাবাসন কর্মসূচি চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে সুযোগ করে দিছে সরকার। আর এ সময়ের মধ্যেও চলছে অবৈধ অভিবাসীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান। বৈধ পাস/পারমিট ছাড়া কাজ করা এবং বৈধ ভ্রমণ ভিসা নেই এমন বিদেশিদের বিষয়ে তথ্য এবং জনসাধারণের দেয়া সন্ধানের ভিত্তিতে সমগ্র মালয়েশিয়ার হটস্পটগুলোতে অপারেসি সাপু, অপারেসি সেলেরা, অপারেসি পিন্টু, অপারেসি মাহির এবং অপারেসি পিকআপের মতো বিভিন্ন নামে অভিযান চালিয়ে প্রতিদিন বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের নাগরিকদের আটক করছে দেশটির ইমিগ্রেশন পুলিশ। ফলে মালয়েশিয়া সরকারের দেয়া এতো সুযোগ সত্ত্বেও দেশটিতে বর্তমানে থাকা প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা অবৈধভাবে বসবাস করছেন তাদের মধ্যে বিরাজ করছে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা।

নানা জটিলতায় মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরতে পারে প্রায় ১ লাখ বাংলাদেশি যার প্রভাব পড়তে পারে রেমিটেন্স প্রেরণেও। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের দেয়া তথ্য বলছে, গত ১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচির অধীনে প্রথম ২০ দিনে নিজ নিজ দেশে ফিরেছে প্রায় ১১ হাজার ৯৪৩ জন অভিবাসী এর মধ্যে ২ হাজার ৫৩০ জনই বাংলাদেশি। এখনও ইমিগ্রেশনে ভিড় জমছে প্রতিদিনই। এছাড়া ইমিগ্রেশন বিভাগের অনলাইন এ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য অপেক্ষা করছে হাজারো মানুষ।

দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের ধারণা, বিভিন্ন দেশের ৩ থেকে ৪ লাখ কাগজপত্রবিহীন অবৈধ অভিবাসী এই কর্মসূচির আওতায় শাস্তি ছাড়াই নিজ নিজ দেশে ফিরবে। ঘোষণা অনুযায়ী দেশে ফিরতে হলে সরাসরি এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে ইমিগ্রেশন বিভাগের। সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে ওয়ান ওয়ে এয়ার টিকিট ও পাসপোর্ট। যাদের পাসপোর্ট নেই তাদের সংগ্রহ করতে হবে নিজ নিজ হাইকমিশন থেকে ট্রাভেল পারমিট। এরপরে ইমিগ্রেশন বিভাগে ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে স্পেশাল পাস দিলে পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে দেশে ফিরতে পারবে অবৈধরা। দেশে ফেরা প্রবাসীদের এই তালিকায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা বেশ লম্বা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।

এদিকে চারিদিকে সাঁড়াশি অভিযান, অন্যদিকে জেলের ঘানির চিন্তায় যেন তটস্থ করে তুলছে অবৈধদের। দেয়ালবিহীন এ প্রবাস নামক কারাগারে আত্মহত্যা না করতে চাইলে, দেশে ফেরা ছাড়া দ্বিতীয় আর কোন উপায় নেই তাদের সামনে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কর্মসূচির আওতায় যারা দেশে ফিরছেন তাদের বেশিরভাগই কর্মহীন কিংবা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রবিহীন। অনেকেই সাম্প্রতিক সময়ে কলিং ভিসায় এসে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না পেয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফিরে যাচ্ছেন দেশে। এভাবে দেশে ফেরাদের সংখ্যা দিনে দিনে ভারী থেকে ভারী হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকা প্রবাসী রোবেল মিয়া বলেন, ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় এসেছি। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত ভিসা করতে পারিনি। বিভিন্ন লোকের কাছে টাকা দিয়ে ভিসা পাইনি। এখন ভিসার পাশাপাশি কাজেরও সমস্যা হচ্ছে। তাই দেশে চলে যাচ্ছি।

রোবেল মিয়ার মতো অনেকেই আছেন যারা নানা জটিলতায় ভিসা করতে পারেনি। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার কর্মী ছাটাইও করছে। এছাড়া ফ্রি ভিসার নামে কলিং ভিসায় মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়ে এসেছেন অনেক নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান। ফলে অবৈধ যেন নিয়ম হয়ে পড়েছে সিস্টেমের যাঁতাকলে।

এ নিয়ে সম্প্রতি এক বক্তব্যে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামিম আহসান বলেন, মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কাগজপত্রবিহীন রয়েছে এমন বাংলাদেশিদের দেশে ফিরে যাওয়া উচিত। আর যাদের অবহেলায় কর্মীরা বৈধভাবে এসে প্রতারিত হয়েছে তাদের ব্যাপারেও হাইকমিশন বাড়তি সতর্কতায় রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশি কর্মী সবুজ শুক্রবার (২৪ মে) জানান, অনেকই দেশে ফিরতে চায়। তবে এয়ারপোর্টে বেশি রিঙ্গিত দেয়া আর হয়রানির জন্য ফিরতে পারছেনা তারা। ৫০০ রিঙ্গিত দিয়ে ফিরতে বলা হলেও দালালদের খপ্পরে পড়ে হাজারও রিঙ্গিত নেয়া হচ্ছে তাদের থেকে। আবার অনেকের কাছে এ রিঙ্গিত দেয়ার ক্ষমতাও নেই। তাদের অবস্থা এখন করুণ!

এদিকে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি রুসলিন জুসোহ জানিয়েছেন, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এখান থেকে সব অবৈধ অভিবাসী প্রত্যাবাসন কর্মসূচির পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। যারা ওই তারিখের মধ্যে দেশে ফিরবেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি আরো বলেছেন, বৈধকরণ প্রকল্পে যারা নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের আটক করা হবে। দেশের নিরাপত্তা রক্ষার তাগিদে কোনো পক্ষের সঙ্গে আপসে যাবে না মালয়েশিয়া।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button