চাঁদে কি সত্যিই মানুষের পা পড়েছে
১৯৬৯ সালে নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন চাঁদের বুকে প্রথম অবতরণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার চন্দ্র বিজয় অভিযান মানব ইতিহাসের স্মরণীয় একটি ঘটনা হিসেবে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে; কিন্তু এই অভিযানকে সন্দেহ আর দ্বিধার মধ্যে ফেলে দিয়েছেন গবেষক বিল কায়সিং। এক লেখনীর মাধ্যমে চন্দ্র বিজয়কে ভুয়া বলে অভিহিত করেছেন তিনি।
বিল কায়সিং নিজেই নাসার মহাকাশ কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ১৯৫৬ থেকে ১৯৬৩ সাল সময়ে ‘রকেটডাইনের’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে গবেষক হিসেবে কাজ করার সময় বিল ‘স্যাটার্ন ৫’ রকেটের ইঞ্জিনের নকশা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিল ১৯৭৬ সালে ‘উই নেভার ওয়েন্ট টু দ্য মুন’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন। সেই বই অবলম্বনে পরে হলিউডে সিনেমাসহ বিভিন্ন তথ্যচিত্রও তৈরি করা হয়। রাশিয়া, জাপান বা চীনের বিজ্ঞানীরা চাঁদে মানুষের অবতরণকে স্বীকার করলেও বিল কায়সিংয়ের বই, সিনেমা ও তথ্যচিত্রের কারণে এখনো নীল আর্মস্ট্রংদের চাঁদের বুকে প্রথম অবতরণকে ভুয়া বলে মনে করেন অনেকে।
এ বিষয়ে নাসার সাবেক প্রধান ইতিহাসবিদ রজার লাউনিয়াস বলেন, বাস্তবতা হচ্ছে ইন্টারনেটের কারণে আগের চেয়ে আরও বেশি মানুষ যা খুশি তা–ই বলতে পারছে। সত্যি কথা হচ্ছে, মার্কিনরা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পছন্দ করে। প্রতিবারই বড় কোনো ঘটনা ঘটলে পাল্টা ব্যাখ্যা আসবেই।
শুধু মার্কিনরা নয়, ব্রিটিশরাও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পছন্দ করে। গত বছর দেশটির একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দাবি করা হয়, চাঁদ আলো দিয়ে তৈরি, তাই কেউ চাঁদে হাঁটতে পারে না। মার্টিন কেনি নামের এক ব্যক্তি সেই টেলিভিশন অনুষ্ঠানে দাবি করেন, এত দিন চাঁদে অবতরণ প্রমাণের কোনো উপায় ছিল না। এখন প্রযুক্তির যুগে অনেক তরুণ নিজেরাই বিষয়টি অনুসন্ধান করছেন। একটি জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ছয়জনের মধ্যে একজন ব্রিটিশ চাঁদে অবতরণের ঘটনাকে নাটক বলে মনে করেন। ৪ শতাংশ বিশ্বাস করেন চন্দ্র বিজয় একটি প্রতারণা। তরুণদের মধ্যে চন্দ্র বিজয় হয়নি বলে বিশ্বাস বেশি। ২৪ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ২১ শতাংশ চাঁদে অবতরণকে নাটক বলে মনে করেন।
১৯৭৬ সালের পরে বিল কায়সিংয়ের চন্দ্র বিজয় নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন। প্রশ্নগুলো হচ্ছে, চন্দ্র বিজয়ের ছবিতে কোনো তারা নেই কেন? নভোচারীদের ছায়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিল। ২০০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিল কায়সিং চন্দ্র বিজয়কে প্রতারণা বলে দাবি করেছেন। কোনো একটি স্টুডিওতে চন্দ্র বিজয়ের পুরো নাটক চিত্রায়িত হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। সেই সময়ে নাসার সক্ষমতা নিয়ে তার প্রশ্ন ছিল। ১৯৫৭ সালের অক্টোবরে রুশরা স্পুতনিক–১ যান প্রেরণ করে মহাকাশে। তখন মার্কিন মহাকাশ কর্মসূচির অস্তিত্ব ছিল না। নাসা ১৯৫৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬১ সালের নাসা অ্যালান শেপার্ডকে মহাকাশে প্রেরণ করে। চন্দ্র বিজয়ের লক্ষ্যে কাজ শুরু করলেও অনেক বাধা ছিল নাসার সামনে। অ্যাপলো–১ নভোযান দুর্ঘটনায় তখন তিনজন নভোচারী মারা যান।
চন্দ্র বিজয় নিয়ে মিথ্যা প্রচারণার জন্য জেমস বন্ডের একটি সিনেমারও অবদান রয়েছে বেশ। ডায়মন্ডস আর ফরএভার সিনেমায় ১৯৭১ সালে শন কনোরি লাস ভেগাসের ক্যাসি থেকে নাসার একটি গবেষণা কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। সেই দৃশ্য দেখে চন্দ্র বিজয় নিয়ে অবিশ্বাসীদের প্রচারণা আরও বেড়ে যায়। ১৯৮০ সালে ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি নাসার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে, ওয়াল্ট ডিজনির অর্থে আর্থার সি ক্লার্কের স্ক্রিপ্টে স্ট্যানলি কুবরিক চন্দ্র বিজয়ের ভিডিও ধারণ করেছে।
চন্দ্র বিজয় নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে ২০০১ সালে। সেই সময় ফক্স নিউজ ‘ডিড উই ল্যান্ড অন দ্য মুন’ নামে একটি তথ্যচিত্রে বিলের সব প্রশ্নই নতুন করে উপস্থাপন করা হয়। সেই সময়ের জরিপ অনুসারে ২০ ভাগ মার্কিনি চন্দ্র বিজয়কে মিথ্যা বলে মনে করেন।