চাকরিতে প্রবেশের বয়স সবার জন্যই ৩৫ হচ্ছে, আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই ৩৫ বছর করা হচ্ছে। একই বয়সসীমা নির্ধারণ করে একটি খসড়া প্রস্তাব আজ উপদেষ্টা পরিষদের সভায় উত্থাপন করা হবে। এজন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি সার-সংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নারী চাকরি প্রত্যাশীদের বয়সসীমা ৩৭ করা হলে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হবে। এছাড়া নারী চাকরি প্রার্থীরা এত বেশি বয়সে চাকরির আবেদন নাও করতে পারেন। তবে আজ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকেই এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। এটি সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশন, স্বশাসিত সংস্থায় সরাসরি নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়সসীমা অধ্যাদেশ-২০২৪ নামে অভিহিত হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এদিকে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধি নিয়ে একেকবার একেক ধরনের সিদ্ধান্তে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পর্যালোচনা কমিটির প্রধান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের করিডরে সাংবাদিকদের বলেন, চাকরিতে প্রবশের বয়সসীমা মেয়েদের জন্য ৩৭ এবং ছেলেদের ৩৫ বছর করার সুপারিশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মেয়েদের এ ধরনের সুবিধা পাশের দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্টরা জানান, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপনের জন্য মঙ্গলবার পাঠানো প্রস্তাবে ছেলে ও মেয়েদের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা একই (৩৫ বছর) করা হয়েছে। এর আগে বয়সসীমা নিয়ে তিন ধরনের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। মানুষ এখন কোনটি সঠিক হিসাবে বিবেচনা করবে? সরকারি সিদ্ধান্ত সুনির্দিষ্ট না হলে গণমানুষের কাছে বিভ্রান্তিকর বার্তা যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারি বিধিবিধান বইয়ের লেখক ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, পর্যালোচনা কমিটির রিপোর্ট পাবলিকলি হওয়া মোটেই ঠিক হয়নি। সরকারের ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা ও সমন্বয়হীনতা দেখা যাচ্ছে। এটি হওয়া ঠিক নয়। এতে গণমানুষের কাছে সরকার সম্পর্কে ভুল বার্তা যায়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পূজার বন্ধের মধ্যেই সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশ প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে মেয়েদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর নির্ধারণের সুপারিশ রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপাস্থনের জন্য পাঠানো সার সংক্ষেপে ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করতে বলা হয়েছে। তাই ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
তারা আরও জানান, পর্যালোচনা কমিটি বয়সসীমা পর্যালোচনা করে রিপোর্ট দিয়েছে। তাদের সুপারিশ রাখতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা চূড়ান্ত করবে উপদেষ্টা পরিষদ। এর আগের সব খবর শুধুই খবর। এতে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। তারা আরও জানান, অবসরের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়নি। কারণ বিষয়টি পর্যালোচনা কমিটির এখতিয়ারে ছিল না।
বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) মহাসচিব মো. মাহ্বুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সংগঠনের তরফ থেকে অবসরের বয়সসীমা ৬৫ বছর করার আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি সরকার সদয় বিবেচনা করবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের (বিআইএএম) তরফ থেকেও সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়সসীমা ৬৫ করার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসন ছাড়া অন্যান্য ক্যাডারের সংগঠনগুলোও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একই আবেদন করেছে।