Hot

চানখাঁরপুলে গণহত্যার দায় হাসিনার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল: প্রতিবেদনে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুরসহ ৮ জন আসামি * ৯০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি ১৯৫ দিনে সম্পন্ন হয়েছে * ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ঢাকার চানখাঁরপুল এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তদন্তে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধেও গণহত্যার সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়া গেছে। শেখ হাসিনাসহ তারা সবাই গণহত্যার নির্দেশদাতা। তারা ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে বৈধ ও অবৈধ প্রক্রিয়ায় সরকারি বাহিনীগুলোকে ব্যবহার করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থা সোমবার এই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়েছে। এই আট আসামির মধ্যে চারজন গ্রেফতার আছেন, আর পলাতক রয়েছেন অন্য চারজন।

৯০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি ১৯৫ দিনে সম্পন্ন হয়েছে। এতে মোট ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে এটিই প্রথম পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন।

তাজুল ইসলাম বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় প্রধান আসামি শেখ হাসিনাসহ তার সুপিরিয়র কমান্ডারদের বিরুদ্ধে আলাদাভাবে আরেকটি তদন্ত হচ্ছে। কারণ, সারা দেশে যেসব এলাকায় অপরাধ হয়েছে, প্রতিটি অপরাধের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হয়েছে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটির (ঊর্ধ্বতন দায়) আলাদাভাবে তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে, যা খুব তাড়াতাড়ি উপস্থাপন করতে পারব।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীর চানখাঁরপুল এলাকায় এই আসামি নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিককে গুলি করে। তারা শহিদ হন।

আরও জানানো হয়, তদন্তকালে পলাতক আসামি সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ অন্য আসামিরা সরাসরি তত্ত্বাবধান/অংশগ্রহণ, অধীনস্থদের নির্দেশ প্রদান, সহযোগিতা, কোনো ব্যবস্থা না নেওয়াসহ অন্যান্য উপায়ে ভূমিকা রাখার জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সোমবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদসহ অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। নিয়মানুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর ফরমাল চার্জ প্রস্তুত করে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন। ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ গ্রহণের পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করবেন।

তাজুল ইসলাম বলেন, চানখাঁরপুলের গণহত্যার তদন্তকাজ শেষ হয়েছে। রোববার তদন্ত সংস্থা আমাদের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জুলাই-আগস্টে গণহত্যার প্রথম কোনো ঘটনার তদন্তের কাজ শেষ হয়েছে। চানখাঁরপুলের ৫ আগস্টের ঘটনায় ছয়জন নিহত হন। এ রিপোর্টে আমরা ৮ জনকে আসামি হিসাবে পেয়েছি।

তিনি বলেন, এই ৮ জন আসামির মধ্যে রয়েছেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা জোনের সাবেক এডিসি শাহ আলম, রমনা জোনের সাবেক এসি মো. ইমরুল, শাহবাগ থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন, কনস্টেবল ইমাদ হোসেন এবং কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম। চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ মামলার গ্রেফতার আছেন পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, কনস্টেবল সুজন, কনস্টেবল ইমাদ হোসেন ও কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম।

তিনি আরও বলেন, যারা সিনিয়র অফিসার, তাদের বিরুদ্ধে কমান্ড রেসপনসিবিলিটির অভিযোগে এবং যারা সরাসরি গুলি করেছেন, বিভিন্ন ভিডিওর মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ মিলেছে। যে কারণে এ আটজনের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

তাজুল ইসলাম বলেন, এই আটজনের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় প্রমাণ পাওয়া গেছে সেগুলো হচ্ছে-ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩-এর অ্যাক্ট ৩-এর (২), ৩-এর (২ এ, এফ, জি, এইচ) এবং ৪-এর (১), ৪-এর (২) এবং ৪-এর (৩) ধারায় মানবতাবিরোধী অপরাধ। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী মোট ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে সংযুক্ত আছে ১৯টি ভিডিও, ১১টি পত্রিকার প্রতিবেদন, ২টি অডিও, ১১টি বই ও রিপোর্ট এবং ৬টি মৃত্যুসনদ। ঘটনার সময়কাল ছিল ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট।

এর আগে প্রসিকিউশন জানিয়েছিল, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো, চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড, রামপুরা কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তিকে গুলির পরিপ্রেক্ষিতে করা শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমে চিফ প্রসিকিউটরসহ ১৭ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। আর ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় মোট তদন্তকারী কর্মকর্তার সংখ্যা বর্তমানে ২৪ জন। তদন্ত সংস্থার সব সদস্যই পুলিশবাহিনী থেকে প্রেষণে বা চুক্তিভিত্তিক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছেন।

গত জুলাই-আগস্টে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার ও তার অনুগত প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ৫ আগস্ট দেশত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে টানা প্রায় ১৬ বছরের শাসনের অবসান হয়। এসব অপরাধের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

প্রসিকিউশনের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৩৩০টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যেখানে ৩৯টি তদন্ত কার্যক্রম (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার অনুসারে) চলমান। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মিস কেস হয়েছে ২২টি। এসব মিস কেসে সর্বমোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন। এর মধ্যে গ্রেফতার রয়েছেন ৫৪ জন, আর ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক ৮৭ জন। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বেসামরিক ব্যক্তি হচ্ছেন ৭০ জন, পুলিশ ৬২ জন, আর সামরিক হচ্ছেন ৯ জন। ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।

তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়া : ট্রাইব্যুনালের তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, যে কোনো ভুক্তভোগী তদন্ত সংস্থা কিংবা চিফ প্রসিকিউটর বরাবর অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন। চিফ প্রসিকিউটরের কাছে দাখিলকৃত অভিযোগ পরবর্তী সময়ে তদন্ত সংস্থায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রাপ্ত অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করবেন। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে আসামি গ্রেফতারের জন্য ওয়ারেন্ট চাইতে পারেন। গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, সাক্ষ্যপ্রমাণ সংরক্ষণ বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য অনুমতি চাইতে পারেন। এক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনালে একটি ‘মিস কেস’ চালু হয়। তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা চিফ প্রসিকিউটর বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পরে চিফ প্রসিকিউটর ফরমাল চার্জ প্রস্তুত করে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করবেন। ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ গ্রহণ করার পর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করার মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম শুরু করবেন। যেসব আসামি গ্রেফতার আছেন, তাদের আইনজীবীদের প্রস্তুতির জন্য নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হবে। প্রসিকিউশনের ওপেনিং স্টেটমেন্টের মাধ্যমে মূল কার্যক্রম শুরু হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor