চার শিশুর একটি উচ্চঝুঁকিতে
চলতি বছর ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত এক হাজার ২৭২ জনের প্রাণ গেছে। এর মধ্যে ১৫ বছর পর্যন্ত শিশুর সংখ্যা ১৩৮। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি শিশু ডেঙ্গু রোগীদের ওপর চালানো এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি চার শিশুর একজনের ডেঙ্গুর উচ্চঝুঁকি বা শক সিনড্রোম ছিল।
চলতি বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৭৮১ শিশুর ওপর চালানো এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ২৬৯ (৩৪.৪%) জনের ডেঙ্গু ফিভার, ২৩৫ (৩০.০%) জনের বিপজ্জনক উপসর্গসহ জ্বর, ১৯৩ (২৪.৭%) জনের ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও ৮৪ (১০.৯%) জনের ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ছিল।
সমীক্ষাটি পরিচালনা করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ, অধ্যাপক ডা. লুত্ফন নেসা ও কনসালট্যান্ট ডা. নূসরাত জাহান পাপড়ি।
ফ্লুইড ব্যবস্থাপনা মুখ্য
অধ্যাপক ডা. লুত্ফন নেসা বলেন, ‘ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রোম—এ দুটিই ঝুঁকিপূর্ণ। শকে যারা যায়, তাদের কিডনি, লিভার, ফুসফুস—এসব আক্রান্ত হয়। আরেকটি দিক হচ্ছে রক্তপাত হওয়া।
যেমন—ফুসফুসে রক্তক্ষরণ। এ ছাড়া আরেকটি বিষয় ছিল অ্যালবুমিনের মাত্রা কমে যাওয়া। এতে পেটে ও ফুসফুসে পানি জমে যায়। এ সময় আমরা স্যালাইন দিই।’
অধ্যাপক ডা. লুত্ফন নেসা বলেন, ডেঙ্গুর মূল বিষয় হচ্ছে ম্যানেজমেন্ট। শকে যাওয়া রোগীর শিরাগুলো রক্ত ধরে রাখতে পারে না। তখন রক্তের জলীয় অংশ বিভিন্ন অঙ্গে চলে যায়। তখন পেটে পানি জমে, ফুসফুসে পানি জমে। এ অস্থায় রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের ক্ষেত্রে ১৪ শতাংশের ফুসফুসে পানি জমে, যেটি সাধারণ ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ০.৯ শতাংশ ছিল। আবার ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের ক্ষেত্রে ফুসফুসে পানি ছিল ১০ শতাংশ রোগীর।
শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগী বেশি
ডা. নূসরাত জাহান পাপড়ি বলেন, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার মতো লক্ষণ নিয়ে রোগীরা বেশি আসছে। তবে যেসব রোগীর নাক দিয়ে সর্দি পড়া, কাশির মতো লক্ষণ দেখা দিয়েছে, তাদের মারাত্মক ডেঙ্গু হয়নি। কিন্তু যেসব রোগীর নিউমোনিয়া, বুকে পানি জমা, ফুসফুসে পানি জমা, আবার তাদের হার্ট আক্রান্ত হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে মৃত্যু হচ্ছে।
এক দিনে মৃত্যু ১৭, হাসপাতালে ২০১৪
দেশে গত এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরো ১৭ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে সাতজন। একই সময়ে দুই হাজার ১৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৫৪ জন ও ঢাকার বাইরে এক হাজার ৫৬০ জন। গতকাল সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ নিয়ে চলতি বছরে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে দুই লাখ ৫৭ হাজার ৬০।