Hot

চার সংকটে কমছে বাজেট বাস্তবায়ন

৮ মাসে ব্যয় হয়েছে ৩.১৮ লাখ কোটি টাকা * জুনের মধ্যে ব্যয় করতে হবে ৪.২৬ লাখ কোটি টাকা

পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্প বাদ দেওয়ায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি কমছে। মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী ও বিনিয়োগে মন্দার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, শ্রমিক অসন্তোষের মুখে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রাজস্ব আহরণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমছে। এসব সংকটের কারণে চলতি অর্থবছরের শুরুতে (জুলাই) ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেও ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে জুনের মধ্যে সংশোধিত বাজেটের আকার অনুযায়ী অবশিষ্ট চার লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।

এদিকে অর্থ ব্যয় না হওয়ার শঙ্কায় চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেট থেকে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এতে সংশোধিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।

অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্টদের মতে, বছরের শেষ সময়ে একসঙ্গে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। পাশাপাশি অপচয়, দুর্নীতি ও গুণগত মান নষ্ট হওয়ার শঙ্কা থাকে। অর্থ বিভাগ এ শঙ্কার কথা জানিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে চিঠি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, শেষ সময়ে মন্ত্রণালয়গুলোর অস্বাভাবিক খরচের কারণে সরকারের আয় ও ব্যয়ের মধ্যে এক ধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এছাড়া রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়-এ দুয়ের মধ্যে কোনো পরিকল্পনা থাকছে না। এতে অপরিকল্পিত ঋণ গ্রহণ এবং ঋণসংক্রান্ত ব্যয়ের দায়ভার বহন করতে হয় সরকারকে। যা আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট করে দিচ্ছে।

জানতে চাইলে সাবেক সিনিয়র অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে জানান, উন্নয়ন কাজ অনেক স্থানে শেষ হলেও বিলগুলো দেওয়া হয়নি এখনো, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে এসব বিল যাচাই-বাছাই করে দিচ্ছে। যে কারণে ব্যয় কম হচ্ছে। তবে কোনো বছরই বাজেটের পুরো অর্থ ব্যয় হয় না। তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শেষ সময়ে একসঙ্গে তাড়াহুড়া করে টাকা ব্যয় করতে গিয়ে অপচয়, দুর্নীতি ও অর্থব্যয়ের গুণগতমান নষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে তাড়াহুড়া না করে উন্নয়ন কাজের বিল যাচাই-বাছাই করে দেওয়া ভালো হবে। বাজেট কাটছাঁট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অপ্রয়োজনীয় কিছু প্রকল্প যেগুলো রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নেওয়া সেগুলো বাদ দেওয়া হচ্ছে। যে কারণে বেশ কিছু টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন কম হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি সংকট শনাক্ত করা হয়েছে। বিশেষ করে সামগ্রিকভাবে অর্থ সংকট বাস্তবায়নে বড় সমস্যা। এছাড়া বৈদেশিক ঋণ চলতি অর্থবছরে বেড়েছে। এই অর্থ ছাড় ও এর ব্যবহার করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে অর্থায়ন নিয়ে ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।

এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব রয়েছে। আগের সরকার রাজনৈতিকভাবে অনেক প্রকল্প নিয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার এসে এ ধরনের প্রকল্প বাদ দিয়েছে। এছাড়া অর্থবছরের শুরুতে চলে আসে রাজনৈতিক অস্থিরতা, যা গত ৮ মাস ধরে অব্যাহত আছে। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এটি বড় ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ভারসাম্যে সংকট এবং বিনিয়োগ কমে আসায় এ বাজেট বাস্তবায়নে বড় ধাক্কা লেগেছে।

সূত্রমতে, মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে বাজেট বাস্তবায়ন কম বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে সরকারের আয়-ব্যয় ঘাটতি পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে রাজস্ব আহরণ, মোট ব্যয়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) বাস্তবায়ন ও পরিচালন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে আছে।

জুনে চলতি বাজেট জাতীয় সংসদে পাশ হয়। তবে ওই সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও জুলাইয়ে আন্দোলনে দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে। দেশের বন্দরগুলো অকার্যকর হয়ে পড়লে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য ব্যহত হয়। সারা দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে (এডিপি) নেমে আসে স্থবিরতা। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি এই ৮ মাসে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে ২৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। সূত্রমতে, বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হয় ৫ লাখ ৬ হাজার ২ কোটি টাকা। সেখানে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের পর্যবেক্ষণে বাজেট বাস্তবায়নে প্রথম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে অর্থায়নের সমস্যা।

এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার পরও অনেক মন্ত্রণালয়ের ব্যয় করার সক্ষমতা থাকছে না। এটি একটি সমস্যা। দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে অর্থ ব্যয়ের কোনো পরিকল্পনা নেই, বছরের শুরুতে বেতন-ভাতা, ইউটিলিটি বিল ছাড়া অন্য কোনো ব্যয় তেমন করা হয় না। কিন্তু শেষ দিকে আবার অস্বাভাবিক ভাবে টাকা খরচ হয়।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d