চাহিদা কমছে, এক বছরেই মার্কিন ডাক বিভাগের ক্ষতি ৬৫০ কোটি ডলার
যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আগের এক বছরে অর্থাৎ ১২ মাসে দ্য ইউ এস পোস্টাল সার্ভিস (ইউএসপিএস) ৬৫০ কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এমনকি আগামী বছরও তারা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না বলে জানিয়েছে। জানা গেছে, তাদের প্রথম শ্রেণির ডাক সেবার চাহিদা ১৯৬৮ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পোস্টাল সার্ভিসের রাজস্ব শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৭৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার বা ৭ হাজার ৮২০ কোটি ডলারে নেমেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ক্ষতি হয়েছে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন বা ২৬০ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ বলছে, এই ক্ষতি তাদের ধারণার বাইরে এবং তা ঠিক পুষিয়ে নেওয়ার মতো নয়। তারা এতে খুশি নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ডাক বিভাগ অনেক দিন ধরেই আর্থিকভাবে ধুকে ধুকে চলছে। ই-মেইল ও হোয়াটসঅ্যাপের যুগে মানুষ চিঠি লেখা ছেড়েই দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই ডাক বিভাগ ক্ষতির মুখে। এই বাস্তবতায় সংস্থাটি পুনর্গঠনের পরিকল্পনা হাতে নেয় ২০২১ সালে। তখন তারা ধারণা করেছিল, আগামী এক দশকে ১৬০ বিলিয়ন বা ১৬ হাজার কোটি ডলারের সম্ভাব্য ক্ষতি এড়ানো যাবে।
দেশটির পোস্টমাস্টার জেনারেল লুইস ডি জয় বলেন, ‘খরচ কমানোসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়ার পরও ২০২৪ সালের আগে আমরা ব্রেক ইভেন বা লাভ-ক্ষতি সমান-সমান করতে পারব না। তবে ২০২১ সালে আমরা যে ১৬ হাজার কোটি ডলার ক্ষতির পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, সেটা ৬০ বিলিয়ন বা ৬ হাজার কোটি ডলারে নামানো গেছে।’
প্রথম শ্রেণির ডাক অনেকটাই কমেছে। ২০২৩ সালে প্রথম শ্রেণির ডাক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৪৬ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ৬০ লাখে নেমেছে। ২০০৬ সালের তুলনায় যা কমেছে ৫৩ শতাংশ। তবে স্ট্যাম্পের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রথম শ্রেণির ডাক থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে ৫১ কোটি ৫০ লাখ ডলার।
ক্ষতিবৃদ্ধির পেছনে অবশ্য হিসাববিজ্ঞানের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রভাব আছে। বিভিন্ন ছাড়ের হার পরিবর্তন ও অ্যাকচুয়ারিয়াল পুনর্মূল্যায়নের কারণে এটি ঘটেছে। এই পরিস্থিতিতে ডাক বিভাগ আগামী বছর পরিবহন ব্যয় কমাতে চায় ১০০ কোটি ডলার।
৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া বছরে ডাক বিভাগের মোট পরিচালন ব্যয় ছিল ৮৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন বা ৮ হাজার ৫৪০ কোটি ডলার। আগের বছরের তুলনায় ব্যয় বেড়েছে ৫৮০ কোটি ডলার বা ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। তারল্য ধরে রাখতে চলতি মাসে অবসরকালীন ভাতা হিসেবে যে ৫১০ কোটি ডলার তাদের দেওয়ার কথা ছিল, সেটা তারা ছাড় করবে না।
এদিকে ২০২২ সালের এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউএসপিএসের জন্য ৫০ বিলিয়ন বা ৫ হাজার কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজে সই করেন।
গত অক্টোবরে ইউএসপিএস জানায়, প্রথম শ্রেণির ডাক মাশুল ৬৬ সেন্ট থেকে বাড়িয়ে ৬৮ সেন্ট করার অনুমোদন চাইছে তারা, যা আগামী ২১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। ২০১৯ সালের পর স্ট্যাম্পের দাম ৩২ শতাংশ বেড়েছে।
প্রথম শ্রেণির ডাকে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ সাধারণত পরিষেবা মাশুল ও চিঠি পাঠায়। সে জন্য সব শ্রেণির ডাকের মধ্যে এই প্রথম শ্রেণির ডাক থেকে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় হয়।