Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Bangladesh

চিকিৎসক থেকে আর্থিক খাতের মাফিয়া

নাভানা ফার্মার নামে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার থেকে নিয়েছেন ৫০০ কোটি টাকার বেশি * ব্যাংকের পরিচালকসহ একাধিক বড় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার জুনায়েদ শফিক * দেশে-বিদেশে সম্পদের পাহাড়

স্বৈরশাসকের দোসর হিসাবে তার পরিচিতি এবং বিত্তবৈভবের বিস্তৃতি ঘটে গত এক দশকে। চিকিৎসক পেশা ছাপিয়ে বনে যান আর্থিক খাতের মাফিয়াদের একজন। এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের ‘কাজিন’ পরিচয়। বাড়তে থাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং দেশে-বিদেশে বিনিয়োগ। নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের নামে ব্যাংক ও পুঁজিবাজার থেকে তিনি তুলে নিয়েছেন ৫০০ কোটি টাকার বেশি। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে আবাসন খাতে তার বিপুল বিনিয়োগের তথ্য রয়েছে। মানুষের স্বাস্থ্যসেবার ব্রত নিয়ে কর্মজীবন শুরু করা এ ব্যক্তির নাম ডা. জুনায়েদ শফিক। তিনি দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক, পেইন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) পেইন মেডিসিন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা ডা. শফিক জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালেরও অন্যতম কর্ণধার। এখন তার চিকিৎসক পরিচয় খুঁজে পাওয়া দায়। সেবকের পরিচয় ছাপিয়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য খাতে পরিচিত মুখ তিনি। তবে তার এই অঢেল সম্পদ গড়ে তোলার পেছনে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা যায়, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি উদ্যোক্তা ও ব্যাংকের পরিচালক হিসাবে তিনি দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেন। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের কাজিন ডা. শফিক পুঁজিবাজার ও ব্যাংক থেকে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের নামে তুলেছেন ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। অভিযোগ আছে, এসব অর্থ তিনি প্রতিষ্ঠানের কাজে না লাগিয়ে বিদেশে পাচার এবং ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন। নথিপত্রে দেখা যায়, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসাবে আছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি। তার স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরী পরিচালক। নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. জুনায়েদ শফিক। স্ত্রী মাসুমা পারভীন পরিচালক হিসাবে রয়েছেন। প্রয়াত শিল্পপতি জহুরুল ইসলামের উত্তরসূরিদের হটিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে এখন একক আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে ডা. শফিক, রনি ও আদনান সিন্ডিকেট। আর জহুরুল ইসলামের ছেলে মনজুরুল ইসলাম এখন একজন শেয়ারহোল্ডার মাত্র।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের ২০২০ সালের জুন শেষে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ৮৫ কোটি টাকা। ডা. জুনায়েদ শফিক পর্ষদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কোম্পানিটির ঋণ বাড়তে থাকে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) আগে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ শেষে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯২ কোটি টাকায়। সর্বশেষ চলতি বছরের মার্চ শেষে কোম্পানিটির ঋণ ৪৭৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। আইপিওতে আসার আগে ২০২০ সালের জুন শেষে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিশোধিত মূলধন ছিল মাত্র ৮ লাখ ১ হাজার ৫০০ টাকা। তবে এক বছর পরই তা বেড়ে ৮০ কোটি ২৩ লাখ ১ হাজার ৫০০ টাকায় দাঁড়ায়। প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে মূলত আইপিওর আগে কোম্পানিটির মূলধন ৮০ কোটি টাকারও বেশি বাড়ানো হয়েছে। উদ্যোক্তা পরিচালকসহ ২৭ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এ মূলধন। এর মধ্যে এনএমআই হোল্ডিংস লিমিটেডের অনুকূলে ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ১১০টি, স্ট্যাটাস হোল্ডিংস লিমিটেডের অনুকূলে ৮৭ লাখ ১৪ হাজার ৯৫৩টি ও মন্টেনিয়া হোল্ডিংস লিমিটেডের অনুকূলে ৫৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩৯টি শেয়ার ইস্যু করা হয়েছে। এর মধ্যে এনএমআই হোল্ডিংসের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে সেন্ট পিটার রোড, গার্নসে এবং স্ট্যাটাস হোল্ডিংস ও মন্টেনিয়া হোল্ডিংসের ঠিকানা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই দেওয়া হয়েছে। স্ট্যাটাস হোল্ডিংস নামে যুক্তরাজ্যেও কোম্পানি রয়েছে। ব্রিটিশ নাগরিকদের দিয়ে বেনামে এ কোম্পানির নামে অর্থ পাচার করে সেখানে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আর এনএমআই হোল্ডিংসের ক্ষেত্রে গার্নসের যে ঠিকানা দেওয়া, সেটি অফশোর লিকসে থাকা বিভিন্ন কোম্পানির নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে। মূলত কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য এসব দেশে কোম্পানির নিবন্ধন করা হয়।

আরও জানা যায়, নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার ধারণ কাঠামোয় দীর্ঘদিন ধরেই বিদেশিদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ দেখানো হচ্ছে ২৭ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আগস্ট শেষেও এর পরিমাণ অপরিবর্তিত রয়েছে। আইপিওর আগে প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করা এ তিন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা শেয়ারই মূলত বিদেশি বিনিয়োগ হিসাবে দেখানো হয়েছে। আইপিওর পর এ তিন কোম্পানির কাছে থাকা শেয়ারের পরিমাণ ছিল ১৮ দশমিক ৫২ শতাংশ।

এছাড়া বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস পুঁজিবাজার থেকে ২০২২ সালে ৭৫ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ২১ কোটি ১৮ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। এ বছরের মার্চে ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য কোম্পানিটিকে ১৫০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সব মিলিয়ে গত চার বছরে পুঁজিবাজার ও ব্যাংক থেকে ৫৫০ কোটি টাকা নিয়েছে নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে দেশের শীর্ষ ওষুধ বিক্রেতা ২০ কোম্পানির তালিকায় নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালসের নাম নেই। চিকিৎসকরা কোম্পানিটির চর্মরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ তুলনামূলক বেশি লেখেন। এছাড়া ঢাকা মেডিকেলের বহির্বিভাগে কোম্পানিটির বিক্রয় প্রতিনিধিরা তাদের গ্যাস্ট্রিকের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধের বিষয়টিই চিকিৎসকদের কাছে প্রচার করেন। কোম্পানিটি পশু ও পোলট্রির চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধও উৎপাদন করে থাকে। তবে এক্ষেত্রেও শীর্ষ কোম্পানিগুলোর তালিকায় নেই নাভানা ফার্মাসিউটিক্যালস।

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের একাধিক সূত্র জানায়, জুনায়েদ শফিক ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন। তিনি বর্তমানে মেঘনা ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিরও ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানি জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেডের প্রতিনিধি হিসাবে তিনি ডেল্টা লাইফের পর্ষদে আসেন। জেনেক্স ইনফোসিসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আদনান ইমাম, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামসহ পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গেই সখ্য গড়ে তোলেন তিনি। মূলত বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে সম্পর্ক কাজে লাগিয়ে নিজের কোম্পানিকে আইপিওতে অনুমোদনের পাশাপাশি এ বছর বন্ড ইস্যুর অনুমোদন নিয়েছেন। শিবলী রুবাইয়াতের মাধ্যমে ডেল্টা লাইফের পর্ষদের চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলেন তিনি। যদিও তার সে চেষ্টা সফল হয়নি।

অভিযোগ আছে, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর কাজিন হিসাবে বিগত সময়ে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন জুনায়েদ। বিশেষ করে আইপিও ও বন্ডের অনুমোদন, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রভাব কাজে লাগিয়েছেন। ব্যাংক ঋণের অর্থ কোম্পানির স্বার্থে ব্যবহার হয়েছে নাকি তিনি ও তার সহযোগীরা ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন, সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ছিল নীবর। তার কাছে অনেক নগদ অর্থ থাকার বিষয়টি তিনি প্রায়ই ঘনিষ্ঠদের গর্ব করে বলতেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে তার সম্পদ রয়েছে বলেও ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। তাছাড়া পুঁজিবাজারের বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জুনায়েদ জড়িত বলে অভিযোগ আছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট স্বৈরশাসনের পতনের পর ভোল পালটে বড় একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সখ্য বাড়াতে চেষ্টা করছেন। এসব বিষয়ে জানতে ডা. জুনায়েদ শফিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার অফিসে গিয়েও দেখা করার অনুমতি পাননি এ প্রতিবেদক। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
slot demo
bacan4d
bacan4d
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot toto