চিপ তৈরির বৃহত্তম রাষ্ট্রীয় তহবিলে চীনের আরও অর্থ বিনিয়োগ
সেমিকন্ডাক্টরশিল্পে আধিপত্য বাড়ানোর লক্ষ্যে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করছে চীন। এ শিল্পে বিনিয়োগের জন্য এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় তহবিল গঠন করছে দেশটি।
উচ্চপ্রযুক্তিতে চীনের উত্থান ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বেইজিং নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে সেমিকন্ডাক্টরশিল্পে ৪ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চীন।
সিএনএনের সংবাদে বলা হয়েছে, আইসিবিসি ও চায়না কনস্ট্রাকশন ব্যাংকের মতো চীনের ছয়টি বড় রাষ্ট্রীয় ব্যাংক এ তহবিলে বিনিয়োগ করবে। এর মধ্য দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং উচ্চপ্রযুক্তির জগতে মহাশক্তি হয়ে উঠতে চান।
‘মেড ইন চায়না ২০২৫’ শীর্ষক কর্মসূচির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ফাইভ–জি বেতার প্রযুক্তিসহ বেশ কয়েকটি শিল্পে বৈশ্বিক নেতৃত্ব দেওয়ার উচ্চাশা নির্ধারণ করেছে চীন।
সর্বশেষ এই ৪ হাজার ৭৫০ কোটি ডলারের তহবিল চায়না ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ইন্ডাস্ট্রি ফান্ডের তৃতীয় ধাপ, যা বিগ ফান্ড নামে পরিচিত। গত শুক্রবার এ তহবিল দেওয়া হয়েছে।
এদিকে এ বিনিয়োগের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর চীনের শীর্ষ চিপ কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম চুক্তিভিত্তিক চিপ কোম্পানি সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের (এসএমআইসি) শেয়ারের দাম ৭ শতাংশ বেড়েছে। এ ছাড়া চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম চিপ নির্মাণকারী কোম্পানি হুয়া হং সেমিকন্ডাক্টরের শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। এ কোম্পানি হুয়াওয়ের জন্য চিপ তৈরি করে।
এ তহবিল প্রথম গঠন করা হয় ২০১৪ সালে। প্রথম ধাপে এতে ১৩ হাজার ৮৭০ কোটি ডলার দেয় চীন সরকার। দ্বিতীয় ধাপে ২ হাজার ৮২০ কোটি ডলার দেওয়া হয় ২০১৯ সালে।
সংবাদে বলা হয়েছে, চীনের সেমিকন্ডাক্টরশিল্পকে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বমানে নিয়ে যাওয়া এই তহবিল গঠনের উদ্দেশ্য। এ তহবিলের অর্থ মূলত চিপ তৈরি, ডিজাইন ও উপকরণ তৈরিতে ব্যবহার করা হবে।
তবে চীনের এ তহবিলের ইতিহাস খুব একটা সুখকর নয়। এ তহবিলের অর্থ নয়ছয় করার অভিযোগ আছে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছে উচ্চপ্রযুক্তির পণ্য রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তাতে চিপশিল্পে চীনের উত্থান হুমকির মুখে পড়েছে।
এর জবাবে চিপ তৈরির কাঁচামাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে চীন। পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হুয়াওয়ে গত বছর সাত ন্যানোমিটারের প্রসেসর–সংবলিত স্মার্টফোন বাজারে নিয়ে এসে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়।
এদিকে উন্নত মানের সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে যে লিথোগ্রাফি যন্ত্র প্রয়োজন হয়, সেটা তৈরি করে একমাত্র নেদারল্যান্ডসের এএসএমএল কোম্পানি। কিন্তু ডাচ সরকার এ যন্ত্র চীনের কাছে রপ্তানিরে ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এ বাস্তবতায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটকে গত মার্চে বলেছেন, চীনের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত উত্থান কেউ রুখতে পারবে না।