Trending

চীনা প্রকল্প বাস্তবায়ন চায় তিস্তার মানুষ

ফিজিবিলিটি স্টাডিতে ৯ বছর পার : অন্তর্বর্তী সরকারের এখনো নেই কোনো নির্দেশনা : ভারতের তাবেদার পালিয়েছে নদী পাড়ের মানুষ চায় তিস্তা মহাপ্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়ন

স্বাধীন বাংলাদেশের মাটি-নদী-জমি, তারপরও দিল্লির মোদি ও মমতার বাধায় তিস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে পারছে না সরকার। চীনের ঋণ নিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বিশদ সমীক্ষা শুরু করে বাংলাদেশ ও চীন। ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে তিস্তা মহাপ্রকল্পের কিছু অগ্রগতি হলেও গত ২৪ জুন তিস্তার পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও ভারত আন্তরিক বলে আটকে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। চীনকে নিয়ে তিস্তায় মহাবিপদে ভারত। তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে কৌশলে বাংলাদেশ। তিস্তা নদী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ মহাপ্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন প্রকল্প বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করা হয় প্রথমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি দিয়ে। গত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৯ সাল এবং ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল এবং চলতি বছরের গত ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চীন সরকারে সাথে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি চুক্তি ছিল তা যথাযথভাবে কাজ করেছে চীন। তবে এ চুক্তি আগামী ২৬ সাল পর্যন্ত বাড়াতে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে ৯ বছর পার করেছে, কাজ নেই। তবে দিল্লির মোদির এবং পানিসম্পাদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু ফ্যাসিবাদ কর্মকর্তার কারণে তিস্তা মহাপ্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দফতরে পড়ে আছে বলে জানা গেছে। এদিকে তিস্তা প্রকল্পের বাস্তবায়ন ও অর্থসহ সব কিছু ঠিক থাকলেও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে হওয়া জাতীয় নির্বাচনের পরে তিস্তা প্রকল্পের কাজ একা চীন নয়, ভারতকেও যুক্ত করা হবেÑ এমন ঘোষণা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ঘোষণায় পরে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে রশি টানাটানি থমকে আছে। এ মধ্যে সুযোগ নিয়েছে ভারত। পতিত সরকার পতনের পর ভারতকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত করার সম্ভাবনা নেই। তবে অর্থায়নের উৎস যেখান থেকে আসুক না কেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি একটি অপরিহার্য মহাপরিকল্পনা। জনস্বার্থে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন জরুরি। তবে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো ইআরডিকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তবে তিস্তার পাড়ের মানুষের অভিযোগ, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো নির্দেশনা না দিলে অন্তর্বর্তী সরকার এ বিপ্লবের সাথে বেঈমানি করবে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের প্রকল্প তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো তৎপরতা নেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। কিন্তু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে ভারত ও চীন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিস্তায় ভারতের সম্ভাবনার বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিপরীতে এই প্রকল্পের নিজেদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রত্যাশা জেগেছে চীনের। এতে বিপাকে ভারত। কেননা, প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাব দিয়েছিল চীন। পরবর্তীতে প্রস্তাব দেয় ভারতও। তবে কি তিস্তা প্রকল্পের কাজ চীনই করবে?
এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়টি নিয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানান। তবে ফাইল মন্ত্রণালয়ে আছে সেটি নিশ্চিত করেছেন তিনি। পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য ভুল।
পাওয়ার চায়না প্রস্তাব ফিজিবিলিটি স্ট্যাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ দিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দফতরে পাঠানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনা কোম্পানি মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সম্পর্কিত একটি নন-বাইডিং সমঝোতা স্মারক গত ২০২৬ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষরিত হয়। নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি)টির মেয়াদ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। পরবর্তীতে স্মারক ১, ২ ও ৩ মোতাবেক বর্ণিত নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারকটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্পতি সাপেক্ষে তিন দফায় যথাক্রমে ২০২০-২২ এবং ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ সরকার। চিঠিতে আরো বলা হয়, গত ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ইআরডির মাধ্যমে তিস্তা রিভার কমপ্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টোরেশন শীর্ষক প্রকল্পটি প্রস্তবানা চীনা সরকারের কাছে পাঠানো হয়। চীন সরকার আবেদনটি যাচাই-বাছাই করার পরে বাংলাদেশের চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডিতে কিছু মতামত ও সুপারিশ প্রদান করে। পাওয়ার চায়না সেই মোতাবেক ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সমৃদ্ধ করে পুনরায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ও প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। চিঠিতে আরো বলা হয়Ñ সম্প্রতি পাওয়ার চায়না প্রকল্পটি শুরুর আগে উল্লিখিত কাজগুলো ছাড়াও আরো কিছু প্রকৌশলগত কাজ সম্পন্ন করা এবং মাহামারি কোভিডের কারণে কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে মর্মে আবেদনে উল্লেখ করে নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারকের মেয়াদ আগামী ২০২৬ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করার আবেদন করেছে। চায়না কোম্পানি আবেদন মোতাবেক নন-বাইন্ডিং সমঝোতা স্মারক (চুক্তি) বৃদ্ধির প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে চার মাস পূর্ণ হয়েছে গত ১৫ ডিসেম্বর। গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বস¤প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। আমাদের ছাত্র ও যুবসমাজের আন্দোলন প্রথম দিকে মূলত ছিল বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে পুরো বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু পতিত হাসিনার পতন হয়েছে। তিস্তা মহাপরিকল্পা বাস্তবায়নে ভারতের সম্ভাবনা থাকছে। তবে তিস্তা মহাপরিকল্পা বাস্তবায়নে চীনের আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশে ভারতীয় দোসরদের কারণে রংপুর অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নের প্রকল্প তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে এই মুহূর্তে কোনো তৎপরতা নেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। কিন্তু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় প্রহর গুনছে চীন। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতের অর্থায়নের সম্ভাবনার বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে এসেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিপরীতে এই প্রকল্পের নিজেদের যুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রত্যাশা জেগেছে চীনের। কেননা, প্রথম পর্যায়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের অনেক কাজ বাস্তবায়ন করেছে চীন। পরবর্তীতে প্রস্তাব দেয় ভারতও। তবে শেষ পর্যন্ত তৃতীয় কোনো উৎস থেকে অর্থায়নের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তিস্তা নদীকে ঘিরে উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে চীন। গত ২০২০ সালের আগস্টে আট হাজার ২১০ কোটি টাকার পিডিপিপি (প্রিলিমিনারি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোজাল) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে জমা দেয়া হয়েছিল। পিডিপিপির ব্যাপারে চীন সরকার গত বছরের ৫ মার্চ একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন পাঠায়। প্রতিবেদনে বড় আকারের ভ‚মি উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা এবং বড় আকারের বিনিয়োগ বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সাবেক সচিব তৌহিদ হোসেন এর আগে বলেছিলেন, ভারতের মাধ্যমেই সম্ভবত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্পষ্টতই সেটি যদি হয় তাহলে দীর্ঘসূত্রতার পাল্লায় যে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, এটি ঝুলে যাবে এবং আগামী দুই-চার বছরের মধ্যে এখানে বড় কোনো প্রগ্রেস দেখতে পারবÑ এরকম কোনো আশা করি না। যদি হয় তাহলে তো উই উইলবি হ্যাপি কিন্তু আশা করা যায় না।
তিস্তা প্রকল্পে ভারতের আগ্রহ নিয়ে পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, পানিচুক্তি ছাড়া তিস্তা প্রকল্প সমস্যা সমাধানে কাজে আসবে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেকটি কাজে স্বচ্ছতা থাকতে হবে, জবাবদিহিতা থাকতে হবে। চীনের সাথে কী হচ্ছে, আর ভারত যখন এসে বলেছে আমাদের প্রজেক্ট বাস্তবায়ন করে দেবো। এখন তো তার থেকেও পেছনে গেলো। এর সমীক্ষা চালাতে কাজ করেছে চীন। এখন আমাকে যদি ফিজিবিলিটি করতে দেয় আমি তো মিনিমাম দুই-তিন বছর চাইব। ড. আইনুন নিশাত বলছেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নের পলিটিক্যাল যে অ্যাপ্রোচ নেবে ভারত আর বাংলাদেশ সেটিও ভিন্ন ভিন্ন হবে। আমি তো মনে করি, ভারত এটিকে ঝুলিয়ে দিলো আরো। কালক্ষেপণ করবে।
প্রায় ২৪০ বছরের পুরোনো নদী তিস্তা। এর সঙ্গে রয়েছে উত্তরের ২৫টি নদীর প্রবাহ। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি একেবারেই শুকিয়ে যায়। নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার রাজাহাট, উলিপুর, চিলমারী, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে নদীটি। তবে শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা। এ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের মধ্যে সাতটিই তিস্তা নদীবেষ্টিত। নদীশাসন না হওয়ায় গত পাঁচ বছরে গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে তিস্তাপাড় হয়ে উঠবে পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির মতো সুন্দর নগরী। চীনের হোয়াংহো নদীকে একসময় বলা হতো চীনের দুঃখ। প্রতি বছর ওই নদীর পানি ভাসিয়ে দিত শত শত মাইল জনপদ। ভেঙে নিয়ে যেত বহু গ্রাম-পথ-ঘাট জনপদ। সেই সর্বনাশা নদীশাসন করায় (পরিকল্পিত ড্রেজিং) চীনের মানুষের দুঃখ ঘুচেছে। হোয়াংহো এখন হয়ে গেছে চীনের কৃষকদের জন্য আশীর্বাদ। হোয়াংহোর মতোই এখন বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলের ‘পাগলা নদী’ খ্যাত তিস্তা ড্রেজিং করে কোটি মানুষের দুঃখ ঘোচানো সম্ভব বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞরা।
জানা গেছে, তিস্তা নদীর পানি আটকিয়ে বৃহত্তর রংপুর ও বগুড়া জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার জমিতে সেচ দিয়ে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে ব্যারাজ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়। স্বাধীনতার পরে ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ডালিয়ায় ব্যারাজ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। সম্পূর্ণ দেশি প্রযুক্তিতে দেশের প্রকৌশলীরা ব্যারাজসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করেন। ব্যারাজ, বিভিন্ন অবকাঠামো, সিল্টট্রাফ ও বিভিন্ন ক্যানেল নির্মাণে ব্যয় হয় ৯৩৫ কোটি টাকা। বিগত ১৯৯০ সালের ৫ আগস্ট ব্যারাজ নির্মাণকাজ শেষ হলে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। শুষ্ক মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়া জেলার ৩৩টি উপজেলায় তিন লাখ ৮১ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিয়ে অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন করে দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এতে ৪৫২ কোটি টাকার অতিরিক্ত ফসল উৎপাদন আশা করা হয়। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন অব চায়না বা পাওয়ার চায়নার মধ্যে ২০১৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। মহাপরিকল্পনায় পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের সুকিয়ান সিটির আদলে তিস্তার দুই পাড়ে পরিকল্পিত স্যাটেলাইট শহর গড়ে তোলার প্রাথমিক প্রস্তাব করা হয়। সরকার চীনের সেই প্রস্তাবনার আলোকেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলেছিল। চলতি বছরের শুরুতে ভারত সফর করেন পতিত আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সময় দিল্লিতে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারত ও বাংলাদেশকে সংযুক্ত করেছে ৫৪টি নদী। বন্যা ব্যবস্থাপনা, আগাম সতর্কতা, পানীয় জলের প্রকল্পের ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করছি। ১৯৯৬ সালের গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নের বিষয়ে কারিগরি পর্যায়ের আলোচনা শুরুর সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। বাংলাদেশে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আলোচনার জন্য একটি কারিগরি দল শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবে। এরপর সেই কারিগরি দলের আর আসা হয়নি।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে এখনো কোনো প্রকল্প আমাদের কাছে আসেনি। কিংবা এ নিয়ে কোনো আলোচনাও শুনিনি। তবে তিস্তা নিয়ে ছোট একটি প্রকল্প চলমান আছে। গত ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বর্তমান সরকারের একনেক (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) বৈঠকে অনুমোদন পায় মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি। এটি বাস্তবায়নে দীর্ঘদিন ভারত ও চীনের মধ্যে টানাটানি ছিল। কিন্তু সর্বশেষ এই দুই দেশকে বাদ দিয়ে জাপানের কাছ থেকে ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয় পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, এই মুহূর্তে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে ভাবা হয়নি। ভারত ও চীনের প্রস্তাব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেখা যাক সামনে কী করা যায়।
এ প্রসঙ্গে ইআরডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, চীন তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়ন করতে মুখিয়ে আছে। এই প্রকল্পে ব্যাপক আগ্রহ চীনের থাকলেও ভারত চেয়েছিল এটি যেন ভারতকেই দেয়া হয়। এ অবস্থায় আওয়ামী সরকার এই দুটি দেশের কাউকেই অখুশি করাতে না পেরে প্রকল্পটি ঝুলিয়ে দেয়। কিন্তু এখন চীন মনে করে তারা এটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পেতে পারে। সরকার পতনের পর ভারতকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত করার সম্ভাবনা কমে এসেছে। তবে অর্থায়নের উৎস যেখান থেকে আসুক না কেন, রংপুর অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি একটি অপরিহার্য মহাপরিকল্পনা। জনস্বার্থে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন জরুরি। তবে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এখনো ইআরডিকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।
চীনের প্রস্তাবিত ‘তিস্তা প্রকল্প’ বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষের ভাগ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। নদীর গভীরতা প্রায় ১০ মিটার বাড়বে। বন্যার পানি প্লাবিত হয়ে ভাসাবে না গ্রামগঞ্জের জনপদ। সারা বছর নৌ-চলাচলের মতো পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা যাবে। এতে আছে ১০৮ কিলোমিটার নদী খনন, নদীর দুপারে ১৭৩ কিলোমিটার তীর রক্ষা, চর খনন, নদীর দুই ধারে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ, বালু সরিয়ে কৃষিজমি উদ্ধার ও এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা এবং প্রতি বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার ফসল উৎপাদন। নৌ-বন্দর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দুই পারে থানা, কোস্টগার্ড ও সেনাবাহিনীর জন্য ক্যাম্পের ব্যবস্থার প্রস্তাবও রাখা হয়েছে প্রকল্পটিতে।
এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আমি এ মন্ত্রণালয়ের নতুন এসেছি। খুব বেশি কিছু জানি না। তবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বিষয়ে যেটুকু মনে পড়ে চীনের একটি বিস্তারিত স্টাডি করে জমা দেয়ার কথা ছিল। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এ মহাপরিকল্পনার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি। এ নিয়ে আপাতত কোনো কাজও করা হচ্ছে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor