Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
Science & Tech

চীনে রোবটের হামলায় আতঙ্ক, প্রশ্নের মুখে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি

এইসব রোবট তৈরি করা হয় তারা যেন মানুষের সহকর্মী হিসেবে কাজ করতে পারে। শিল্প কারখানা, স্বাস্থ্যখাত কিংবা ঘরোয়া পরিবেশে এমন রোবট বা যন্ত্র মানবকে কাজে লাগান হয়।

চোখের সামনে যেন কল্পবিজ্ঞান থ্রিলারের কোনও দৃশ্য! চীনের একটি রোবট কারখানায় সম্প্রতি ঘটে গেল এক ভয়াবহ ঘটনা। তৈরির সময় হঠাৎ করেই এক হিউম্যানয়েড বা মানবাকৃতির রোবট নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। প্রকৌশলীদের ওপর আক্রমণ চালায়। লাথি, ধাক্কা, অপ্রত্যাশিত ভীতিকর ভাবে নড়াচড়া। সব মিলিয়ে দৃশ্যটা এতটাই ভয়ংকর ছিল যে মুহূর্তে ভাইরাল হয়ে যায় ঘটনাটির ভিডিও। আর সেই সাথে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে নতুন এক শঙ্কা—বুদ্ধিমান যন্ত্র যদি এমন ‘বিদ্রোহ’ করে, তবে তা সামাল দেওয়ার জন্য আমরা কি আদৌ প্রস্তুত?

হিউম্যানয়েড রোবট বলতে এমন রোবটকে বোঝায় যার গঠন বা আচরণ অনেকটাই মানুষের মতো। মাথা, হাত, পা—সবই থাকে মানুষের মতো। শুধু রূপেই নয়, তারা হাঁটতে পারে, কথা বলতে পারে, এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তও নিতে পারে। এইসব রোবট তৈরি করা হয় তারা যেন মানুষের সহকর্মী হিসেবে কাজ করতে পারে। শিল্প কারখানা, স্বাস্থ্যখাত কিংবা ঘরোয়া পরিবেশে এমন রোবট বা যন্ত্র মানবকে কাজে লাগান হয়।

চীনের ইউনিট্রি রোবোটিক্স নামের এক প্রতিষ্ঠানে ঘটনাটি ঘটে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের নতুন মডেলের হিউম্যানয়েড রোবট ‘এইচ ১’-এর অ্যাসেম্বলি চলাকালীন সময়েই ঘটল অঘটন। প্রায় ১.৮ মিটার লম্বা এবং প্রায় ৮০ হাজার ইউরোর দামের এই রোবট হঠাৎ করেই অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করে। ভিডিওতে দেখা যায়, রোবটটি হঠাৎ হাত-পা ছুঁড়তে শুরু করে। এক পর্যায়ে লাথিও মারতে থাকে। সামনে এগিয়ে যায় যেন পালাতে চাইছে। প্রকৌশলীরা আতঙ্কে সরে যান। পরে একজন কোনোভাবে রোবটটিকে থামাতে পারেন।

প্রোগ্রামিং এর ভুল, নাকি কিছু বেশি? এবারে সে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, এটি একটি কোডিং ভুলের ফল। সংবাদ মাধ্যমের-এর বরাতে এমনটাই জানা গেছে। যদিও আনুষ্ঠানিক ভাবে এর কোনও কারণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তা বলে থেমে নেই সামাজিক মাধ্যম। এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার সুনামি চলছে সেখানে। রোবটের এমন আচরণের পেছনে হ্যাকিং-এর হাত রয়েছে বলেও আভাস ইঙ্গিত দিচ্ছেন কেউ কেউ।

এইচ ১ নামের রোবটটি উন্নত অ্যালগরিদম ব্যবহার করে। আশপাশের পরিবেশ বুঝে কাজ করে। কিন্তু ঠিক এই জটিলতা থেকেই বের আসে ভয়ের বিষয়। অ্যালগরিদমে সামান্য ভুল। বা একটুখানি ভুল প্রোগ্রামিং-ই তৈরি করতে পারে ভয় ধরানো বিশৃঙ্খলা।

রোবটের খাপছাড়া আচরণ এই প্রথম ঘটনা নয়। কয়েক মাস আগে চীনের এক প্রকাশ্য প্রদর্শনী বা পাবলিক ডেমোতেও এক রোবট হঠাৎ দিকভ্রষ্ট হয়ে জনতার ভিড়ের দিকে এগিয়ে গিয়েছিল। তখনও প্রশ্ন, এইসব যন্ত্র ঠিক কতটা নিরাপদ? একাধিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি এখন অনেকের মনেই সন্দেহ তৈরি করেছে, প্রযুক্তির দৌড়ে আমরা কি প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করছি?

অনেকেই আরও একটি প্রশ্ন করতে পারেন, রোবট শব্দটি কোথা থেকে এলো? ‘রোবট’ শব্দটির জন্ম কিন্তু বিজ্ঞান গবেষণাগারে নয়। বরং সাহিত্যে। চেক লেখক কারেল চ্যাপক ১৯২০ সালে লেখা নাটক আর. ইউ. আর(রোসাম’স ইউনিভার্সাল রোবটস-এ প্রথম ‘রোবট’ শব্দটি ব্যবহার করেন। ‘রোবটা’ শব্দটি চেক ভাষায় অর্থ দাঁড়ায় ‘জবরদস্তি খাটুনি’ বা ‘দাসত্বমূলক শ্রম’। সেখান থেকেই বিজ্ঞান আর কল্পবিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ করে আজকের এই শক্তিশালী শব্দ।

প্রযুক্তির নৈতিক শৃঙ্খলা বিষয়ে ভাবনা করে অনুশাসনও দিয়েছেন মার্কিন বিজ্ঞান ও কল্পবিজ্ঞান লেখক আইজ্যাক অ্যাসিমভ। রোবটের বিপদ নিয়ে আলোচনার সময় বারবার ফিরে আসবে তার কথা। রোবট নিয়ে চিন্তার ভিত তিনি গড়ে দেন ১৯৪২ সালে, তাঁর বিখ্যাত ‘থ্রি লস অব রোবোটিক্স বা রোবটিক্সের তিন অনুশাসন দিয়ে। এই অনুশাসন মতে, রোবট কোনও মানুষের ক্ষতি করতে পারবে না, বা নিষ্ক্রিয় থেকে কোনও মানুষের ক্ষতির সুযোগ দিতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, রোবট অবশ্যই মানুষের আদেশ পালন করবে, যদি না সেই আদেশ প্রথম অনুশাসনের বিরোধী হয়। তৃতীয়ত রোবট নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করবে, যতক্ষণ না তা প্রথম বা দ্বিতীয় অনুশাসনের পরিপন্থী হয়। পরবর্তীতে অ্যাসিমভ আরও একটি শূন্যতম আইন বা জিরোথ ল-ও যোগ করেন। এতে বলা হয় রোবট মানবজাতির ক্ষতি করবে না, বা নিষ্ক্রিয় থেকে মানবজাতির ক্ষতির সুযোগ দেবে না— এমনকি যদি তা বাকি তিনটি অনুশাসনের পরিপন্থী হয় তবুও।

প্রযুক্তি সম্বন্ধে বই

এই অনুশাসনগুলো শুধু রোবট তৈরির নীতিমালা নয়, বরং একটি দর্শন—যেখানে প্রযুক্তি আর মানবতার সম্পর্ক নির্ধারিত হয় নৈতিকতার আলোকে। কিন্তু বাস্তবের এই ইউনিট্রি রোবট সেই নীতিমালার কোথাও দাঁড়িয়ে নেই। ফলে ভয় বাড়ছে।

এখন প্রশ্ন, আমরা রোবটের অযাচিত বা ভীতিকর আচরণ মোকাবেলায় প্রস্তুত তো? রোবট যখন শুধু গবেষণাগারে সীমাবদ্ধ ছিল, তখন ভয় ছিল কল্পনার। কিন্তু এখন তারা আমাদের কারখানায়, অফিসে, হাসপাতালেও। তাহলে প্রশ্নটা জরুরি,এই যন্ত্রগুলোকে কাজে লাগানোর আগে ঠিক কতটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার? যদি তারা হামলা করে, দায়টা হবে কার?

মানুষের সহকারী এবং সহকর্মী হিসেবে তৈরি রোবট যদি একদিন মানুষের শত্রুতে পরিণত হয়, তাহলে সেটা নিছক প্রযুক্তিগত ত্রুটি নয়, বরং এক ভয়ঙ্কর বার্তা। প্রযুক্তি যত দ্রুত এগোয়, তত বেশি দরকার সচেতনতা, নিরাপত্তা আর নৈতিক নিয়ন্ত্রণ। কারণ, যদি যন্ত্র মানবতা ভুলে যায়, তাহলে মানুষই হয়তো একদিন যন্ত্রের কাছে পরাজিত হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacantoto4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d toto
slot toto
bacan4d
bacan4d
togel online
Toto Slot
saraslot88
Bacan4d Login
bacantoto
Bacan4d Login
bacan4d
bacan4drtp
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot maxwin
slot bacan4d
slot maxwin
bacan4d togel
bacan4d login
bacan4d login
bacan4d login
bacantoto 4d
slot gacor
bacansport
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot77 gacor
JAVHD
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
gacor slot
slot gacor777
slot gacor bacan4d
bacan4d
bacansport
toto gacor
bacan4d
bacansports login
slot maxwin
slot dana
slot gacor
slot dana
slot gacor
bacansports
bacansport
bacansport
bacansport
bawan4d
bacansports
bacansport
slot gacor
judi bola
slot maxwin
slot maxwin
bacansport
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot demo
slot gacor
slot gacor
slot gacor
toto slot
slot gacor
demo slot gacor
slot maxwin
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacansport
slot gacor
slot toto