International

চীনে হঠাৎ লবণ কেনার হিড়িক, লবণশূন্য সাংহাই-বেইজিংসহ বড় শহরগুলো

বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সমালোচনা সত্ত্বেও ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি প্রশান্ত মহাসাগরে ছাড়তে শুরু করেছে জাপান। বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি এই পানি ছাড়তে শুরু করে। জাপানের এই কাণ্ডে লবণ কেনার হিড়িক পড়েছে চীনে।

এমনকি রাজধানী বেইজিং এবং অন্যতম বড় শহর সাংহাইসহ আরও কিছু এলাকা লবণশূন্য হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে জনসাধারণকে আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেছে চীনের বৃহত্তম লবণ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। শুক্রবার (২৫ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের দৃঢ় বিরোধিতা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে জাপান প্রশান্ত মহাসাগরে তেজস্ক্রিয় পানি নিঃসরণ শুরু করার পরে চীনে বিভিন্ন এলাকায় লবণ কেনার হিড়িক পড়েছে। আর তাই আতঙ্কিত হয়ে বেশি বেশি লবণ না কিনতে লোকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে চীনের বৃহত্তম লবণ উৎপাদনকারী গ্রুপ।

বিশ্বের বৃহত্তম সাধারণ লবণ উৎপাদক হচ্ছে চীনের রাষ্ট্র-চালিত ন্যাশনাল সল্ট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ। ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি জাপান সাগরে ছাড়তে শুরু করার কয়েক ঘণ্টা পর দেওয়া এক বিবৃতিতে চীনের রাষ্ট্র-চালিত এই সংস্থা বলেছে, চীনের কিছু অংশে মানুষ লবণ মজুদ করতে ছুটে আসায় তারা বাজারে লবণের সরবরাহ আরও বাড়াচ্ছে।

রয়টার্স বলছে, পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, রাজধানী বেইজিং এবং অন্যতম বৃহত্তম শহর সাংহাইসহ চীনের বেশ কিছু জায়গায় সুপারমার্কেটগুলোতে লবণের তাক খালি হয়ে গেছে। এমনকি অনলাইন বিক্রয় প্ল্যাটফর্মগুলোতেও মজুদ শেষের কথা জানিয়ে লবণ বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে।

চীন অবশ্য জাপানের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি সমুদ্রে ছাড়ার এই পদক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করেছে। দেশটি বলেছে, জাপান সরকার প্রমাণ করতে পারেনি যে, নিষ্কাশন করা পানি নিরাপদ হবে। আর এই কারণে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে জাপানি সামুদ্রিক খাদ্য আমদানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে চীন।

এছাড়া একই পদক্ষেপ নিয়েছে জাপানের আরেক প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়াও।

এদিকে লবণের সংকট দেখা দেওয়ার পর চীনের ন্যাশনাল সল্ট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘আমরা লবণ উৎপাদন, বিতরণ এবং বাজার সরবরাহের নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য ওভারটাইম কাজ করছি। অনুগ্রহ করে যৌক্তিকভাবে কিনুন এবং অন্ধের মতো আতঙ্কিত হয়ে কিনবেন না।’

ন্যাশনাল সল্ট গ্রুপ বলেছে, মানুষ যে পরিমাণ লবণ ব্যবহার করে তার মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ সামুদ্রিক উৎস থেকে আসে। আর বাকিগুলো ভালো এবং দূষণ থেকে নিরাপদ। তারা বলছে, তাদের লবণের সরবরাহ যথেষ্ট রয়েছে এবং এই কারণে মজুদের ঘাটতিও হবে সাময়িক।

এদিকে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে, চীনের বিভিন্ন এলাকায় লবণের দাম নিয়ন্ত্রণে জরুরি নোটিশ জারি করা হয়েছে। হুনান প্রদেশের বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, বেআইনি কাজের জন্য দাম উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি পেলে দোষীদের ১০ লাখ থেকে ৫০ লাখ ইউয়ান পর্যন্ত জরিমানা করা হতে পারে।

অন্যান্য স্থানীয় বাজারের সুপারভাইজাররা লবণ শিল্প অপারেটরদের দাম স্থিতিশীল করার আহ্বান জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ‘বৈজ্ঞানিকভাবে ভিত্তিহীন দাবি’ ছড়ানোর জন্য চীনের সমালোচনা করেছে জাপান। দেশটির দাবি, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থাও (আইএইএ) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে, ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তেজস্ক্রিয় পানি মানুষ এবং পরিবেশের ওপর ‘নগণ্য’ প্রভাব ফেলবে।

উল্লেখ্য, ১০ লাখ টনের বেশি তেজস্ক্রিয় পানি জমা হয়েছে ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। আগামী ৩০ বছরে এই পানি সমুদ্রে ছাড়া হবে। জাপানের দাবি, এই পানি নিরাপদ।

তবে সমালোচকরা বলছে, এ নিয়ে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার ছিল। এই পানি ছাড়ার পরিকল্পনা আপাতত বন্ধ রাখা উচিত। কারণ এই পানি এখনও বিষাক্ত ও ক্ষতিকর। এর ফলে গোটা বিশ্বই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button