Trending

চীন-ভারতসহ ব্রিকস সদস্যদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

ব্রিকস জোট বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ও ৪০ শতাংশ বৈশ্বিক উৎপাদন প্রতিনিধিত্ব করে।

‘যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী নীতি’ অনুসরণ করার অভিযোগে চীন ও ভারতসহ ব্রিকস সদস্যদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরোতে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনের শেষ দিনটিকে উত্তপ্ত করে তুলেছেন তিনি।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বিশ্বের দ্রুততম বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ১১ জাতির এই জোটটি ট্রাম্পের ‘অবিবেচক’, ক্ষতিকর ও আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে এক বিবৃতিতে সতর্ক করার পর রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ হুমকি দেন।

ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘যে কোনো দেশ, যারা ব্রিকসের যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী নীতির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করবে, তাদের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।’

ব্রিকস জোট বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা ও ৪০ শতাংশ বৈশ্বিক উৎপাদন প্রতিনিধিত্ব করে।

চীন, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা ট্রাম্পের এই হুমকিকে গুরুত্ব না দিয়ে জানান, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সঙ্ঘাত চায় না। তবে আয়োজক দেশ ব্রাজিলের বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা এই বিষয়ে ছিলেন আরো সোচ্চার।

লুলা বলেন, ‘আমরা স্বাধীন দেশ। আমরা কোনো সম্রাট চাই না।’

দুই দশক আগে উদীয়মান অর্থনীতির একটি ফোরাম হিসেবে যাত্রা শুরু করা ব্রিকস এখন অনেকের চোখে চীনের নেতৃত্বে গঠিত এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যার লক্ষ্য বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব সীমিত করা।

এই জোটে এখন এমন দেশ রয়েছে যারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র (যেমন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত), আবার এতে আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী ইরান ও রাশিয়াও।

তবে, অনেক মিত্র দেশ সম্মেলনের বিবৃতিতে ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ না করেই সমালোচনা করার চেষ্টা করেছে।

সৌদি আরব, যারা যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ প্রযুক্তির অস্ত্রের অন্যতম বৃহৎ ক্রেতা, তারা এমনকি রোববারের আলোচনায় তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠায়নি এবং সম্মেলনের যৌথ ছবিতেও অংশ নেয়নি।

ধারণা করা হচ্ছে, ওয়াশিংটনের অসন্তোষ এড়াতেই এমন কূটনৈতিক কৌশল নেয়া হয়েছে।

তবে, ট্রাম্প এতে কর্ণপাত না করে সাফ জানিয়ে দেন, ‘এই নীতির কোনো ব্যতিক্রম থাকবে না।’

এপ্রিল মাসে, ট্রাম্প অনেক দেশের ওপর ধারাবাহিক শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন। কিন্তু তীব্র বাজার পতনের কারণে তিনি সেই পরিকল্পনা স্থগিত করেন।

এখন তিনি হুমকি দিচ্ছেন যে, যদি তার বাণিজ্য অংশীদাররা ১ আগস্টের মধ্যে ‘চুক্তি’ করতে না পারে, তাহলে একতরফা শুল্ক আরোপ করবেন তিনি আর এতে ব্রিকস দেশগুলোর ক্ষেত্রে শুল্কের হার হতে পারে আরো বেশি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সদস্য দেশ ইরানের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ব্রিকস নেতাদের সাম্প্রতিক মার্কিন ও ইসরায়েলের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণের নিন্দা প্রকাশ করায় পরিস্থিতিকে আরো জটিল করতে বাধ্য করেছে।

চীন সোমবার জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সঙ্ঘাতে জড়াতে চায় না। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং বলেন, ‘বাণিজ্য যুদ্ধের কোনো বিজয়ী নেই, সুরক্ষা বাণিজ্যবাদ কোনো সমাধান নয়।’

বেইজিং ব্লকটিকে ‘উদীয়মান বাজার এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম’ হিসাবেও রক্ষা করেছে।

মাও আরো বলেন, এটি খোলামেলা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরস্পরের উপকারে ভিত্তি করে সহযোগিতার পক্ষে কাজ করে।

তিনি আরো বলেন, ‘ব্রিকস কোনো গোষ্ঠীগত সংঘাতে বিশ্বাস করে না এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশের বিরুদ্ধেও নয়। ক্রেমলিন থেকেও একই ধরনের বার্তা আসে।

রুশ মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ রাশিয়ার গণমাধ্যমকে জানান, ‘ব্রিকসের সহযোগিতা কখনোই তৃতীয় কোনো দেশের বিরুদ্ধে ছিল না এবং হবেও না।’

এবারের সম্মেলনে বড় নেতাদের অনুপস্থিতি এর রাজনৈতিক গুরুত্বকে অনেকটাই ম্লান করে দিয়েছে।

চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ১২ বছরে এই প্রথম এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেননি।

ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ থাকায় তিনি সম্মেলনে সরাসরি অংশ না নিয়ে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে যুক্ত হন।

তিনি তার ব্রিকস অংশীদারদের বলেন, ব্রিকস এখন বৈশ্বিক শাসন কাঠামোয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto