চূড়ান্ত লড়াইয়ে কমলা–ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন আগেই নিশ্চিত করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে কমলা হ্যারিসের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়া হয়েছে দলীয় মনোনয়ন। নির্বাচনের বাকি আর ১০ সপ্তাহ। গতকাল শুক্রবার থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনার চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামলেন ট্রাম্প ও কমলা।
বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সরাসরি বিতর্কের তিন সপ্তাহও হাতে নেই। আর এক মাস পরই সশরীর আগাম ভোট দেওয়া যাবে। এর আগে হওয়া বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে, হোয়াইট হাউসে যাওয়ার দৌড়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে ট্রাম্প ও কমলার মধ্যে।
জাতীয় সম্মেলন শেষে শিকাগো থেকে নিজের নির্বাচনী পালে হাওয়া লাগিয়ে ফিরছেন সাবেক সিনেটর ও অ্যাটর্নি কমলা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে গেলে গত মাসে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন নিশ্চিত হয় কমলার। বিভিন্ন জরিপে বাইডেনের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু কমলা এসে সে ব্যবধান ঘুচিয়ে ফেলেন এবং ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যান।
দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোতে কমলার প্রচার দলের পরিচালকের দায়িত্বে আছেন ড্যান ক্যানিনেন। অবশ্য সম্মেলনের ফাঁকে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। ক্যানিনেন বলেন, নির্বাচনী লড়াইয়ে মৌলিকভাবে সেই অর্থে কোনো পরিবর্তন আসেনি এবং এটি এখনো খুবই কঠিন লড়াইয়ের জায়গায় আছে।
ক্যানিনেন বলেন, ‘আমাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা আছে। আমি মনে করি, পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে। তবে এর সঙ্গে আমাদের আরও কিছু করতে হবে এবং এই শরতে ভোটারদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।’
শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক পার্টির চার দিনের সম্মেলনের শেষ দিন বৃহস্পতিবার রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের মনোনয়ন গ্রহণ করেন কমলা। এই সম্মেলনে বসেছিল তারকাদের মিলনমেলা। ডেমোক্রেটিক পার্টির সাবেক প্রেসিডেন্টদের পাশাপাশি দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারাও এতে উপস্থিত হয়েছিলেন। এই সম্মেলন থেকেই ৫ নভেম্বরের চূড়ান্ত লড়াইয়ের যাত্রা শুরু হয় কমলার।
জরিপে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস
ক্যালিফোর্নিয়ার ৫৯ বছর বয়সী রাজনীতিক কমলা জরিপে সামান্য এগিয়ে আছেন। একসময় জরিপগুলোতে দেখা যায়, বাইডেনের বিপরীতে জয় পেতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। পরে কমলাকে সমর্থন দিয়ে আকস্মিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান বাইডেন। এরপর জরিপের ফল পাল্টে দিতে থাকেন তিনি।
মাত্র এক মাসের মধ্যে রেকর্ড পরিমাণ ৫০ কোটি ডলার নির্বাচনী তহবিল সংগ্রহ করেছেন কমলা। বর্তমানে তিনি রাজনৈতিকভাবে অনেকটা মধুচন্দ্রিমা পার করছেন। শিগগিরই যে এর অবসান হবে, সে লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না।
তবে দলের নেতারা সতর্ক করে বলছেন, পাল্টা ঝড়ে এখনো নির্বাচনী প্রচারণার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ নিয়ে মার্কিন নীতির বিরুদ্ধে দেশটিতে চলা বিক্ষোভ। পাশাপাশি ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়রের নির্বাচন থেকে গতকাল সরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এটিও ভোটের হিসাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অঙ্গীকার
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণের পর ভাষণে কমলা হ্যারিস বলেন, তিনি সব মার্কিনের প্রেসিডেন্ট হবেন। পাশাপাশি বলেছেন, তিনি বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়বেন। এ সময় গাজা যুদ্ধ বন্ধেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
কমলা বলেন, ‘জনগণের পক্ষ থেকে, প্রত্যেক মার্কিনের পক্ষ থেকে; দল, জাতি, লিঙ্গ বা আপনার দাদি যে ভাষায় কথা বলেন, তা নির্বিশেষে আমি আপনাদের মনোনয়ন গ্রহণ করছি।’
অতীতের তিক্ততা, বিদ্বেষ ও বিভেদমূলক লড়াইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বলেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে তা কোনো একটি দল বা উপদলের সদস্য হিসেবে নয়, মার্কিন হিসেবে।
কমলা নিজের মনোনয়নকে একটি নতুন পথ তৈরির সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি সব মার্কিনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।’
এ সময় প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পকে ‘বিপজ্জনক’ মন্তব্য করে কমলা বলেন, ট্রাম্প মার্কিন ভোটারদের রায় ছুড়ে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। তা করতে ব্যর্থ হয়ে তিনি একটি সশস্ত্র উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ক্যাপিটলে পাঠান, যেখানে তারা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ওপর হামলা চালায়।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে মার্কিন জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করবেন বলে জানান কমলা। তিনি বলেন, ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারানোটা একেবারেই অপরিহার্য বিষয়।
স্বৈরশাসকদের কাছে ট্রাম্পের মাথা নত করার অভিযোগ করেন কমলা। বিশ্বজুড়ে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার অঙ্গীকার করেন তিনি বলেন, গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মধ্যকার স্থায়ী সংগ্রামে তাঁর অবস্থান কোথায়, তা তিনি জানেন। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোথায়, তা-ও তিনি জানেন।