International

চেরনোবিল পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে ড্রোন হামলা

ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে আঘাত হেনেছে একটি সশস্ত্র ড্রোন। এতে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুরক্ষা কাঠামোতে গর্ত তৈরি হয়েছে। এছাড়া সেখানে আগুনও ধরে যায়।

শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এ জন্য ইউক্রেন রাশিয়াকে দায়ী করলেও তা অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) খবরে তা জানা গেছে।

এ ঘটনায় নাজুক এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে বিকিরণের মাত্রা বাড়েনি বলে নিশ্চিত করেছে জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইইএই) ও কিয়েভ।

আইইএই জানায়, ড্রোনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাইরের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করলেও ভেতরের পারমাণবিক কনটেইনার শেলে আঘাত হানতে পারেনি।

সংস্থাটি আরো জানায়, চেরনোবিলে অবস্থানরত প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা একটি বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে সেখানে গেলে ড্রোনটি দেখতে পান। তবে এই ঘটনায় কারা দায়ী এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সংস্থাটি।

ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ফের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল।

উল্লেখ্য, চেরনোবিলে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ বেসামরিক পারমাণবিক বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল। ১৯৮৬ সালে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চারটি চুল্লির একটি বিস্ফোরিত হয়।

এতে চুল্লিটির দীর্ঘমেয়াদি তেজস্ক্রিয়তা নিয়ন্ত্রণে সুরক্ষা প্রাচীর দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনায় ৩০ জন প্রাণ হারান এবং উত্তর গোলার্ধের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে।

চেরনোবিলে যেকোনো সময়ে ড্রোন কিংবা অন্য যুদ্ধাস্ত্র আঘাত হানার শঙ্কা করা হচ্ছিল। এর পেছনে অন্যতম কারণ ছিল, ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে বেশ কয়েকবার ইউরোপের সবচেয়ে বড় জাপোরিজঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে আঘাত হেনেছে ড্রোন।

এমন সময় এ ঘটনা ঘটেছে যখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনা করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে জড়ো হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপের নেতারা।

অন্যদিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হামলায় পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন ইউক্রেনের সেনারা। ইউরোপের সামরিক সাহায্য পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দেশটি।

চেরনোবিলে হামলা নিয়ে এক বিবৃতিতে জেলেনস্কি বলেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ধ্বংস হওয়া ইউনিটের সুরক্ষা প্রাচীরে রাশিয়ার ড্রোন আঘাত হানে। এতে সেখানে আগুন ধরে যায়। পরে আগুন নিভিয়ে ফেলা হয়।
তিনি বলেন, প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী, সুরক্ষা প্রাচীরের উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে যেন নতুন করে দুর্ঘটনা না ঘটে, সেকারণে ২০১৬ সালে বাইরে সুরক্ষা প্রাচীর তৈরি করা হয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে ইউক্রেনের জরুরি বিভাগের পোস্ট করা একটি ছবিতে প্রাচীরের গায়ে একটি বড় গর্ত দেখা যায়।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে এই হামলার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরবেন বলেও জানিয়েছেন।

জেলেনস্কি বলেন, ‘কোনো ধরনের পরিণতির কথা না ভেবে আজকের দিনে এ ধরনের স্থাপনায় হামলা চালানো, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল করে নেয়া এবং যুদ্ধ শুরু করার কাজটি একমাত্র রাশিয়াই করতে পারে।’

এই হামলা প্রমাণ করে রাশিয়া আলোচনার জন্য প্রস্তুত নয় অভিযোগ করে যুদ্ধ বন্ধের যেকোনো আলোচনার আগে তিনি তার দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত চান বলে জানান জেলেনস্কি।

তবে কিয়েভের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘কোনো ধরনের পারমাণবিক অবকাঠামোতে বা শক্তিকেন্দ্রে হামলার প্রশ্নই উঠে না। আমাদের সেনারা এমন কোনো কাজ করেনি।’

পেসকভ বলেন, রাশিয়াকে দোষারোপ করতে এবং যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্প-পুতিনের আলোচনাকে ভেস্তে দিতেই এই হামলার ‘মিথ্যে নাটক’ সাজিয়েছে কিয়েভ। এই ড্রোন হামলা ও এতে রাশিয়াকে অভিযুক্ত করার নিন্দা জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। তিনি এটিকে ইউক্রেনের একটি ‘বেপরোয়া’ পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।

তিনি জানান, ‘যে সুরক্ষা প্রাচীরে হামলার অভিযোগ ইউক্রেন করছে, সেটি নির্মাণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে রাশিয়াও অংশীদার ছিল।’

এর আগে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধের তৎপরতা শুরু করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সাথে এ বিষয়ে ফোনালাপ করেন। ক্রেমলিন ও কিয়েভ থেকেও ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

বর্তমানে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে জার্মানিতে অবস্থান করছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। গতকাল সম্মেলন শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে তার বৈঠকের কথা রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button