Bangladesh

চোরাই পথে ঢুকছে মহিষের সিদ্ধ মাংস, মূল ক্রেতা হোটেল রেস্তোরাঁর মালিক

কম দামে কিনে গরুর মাংস বলে ভোক্তাকে খাওয়ানো হচ্ছে বেশি দামে * বেশি লবণ এবং রাসায়নিকদ্রব্য মেশানো থাকায় স্বাস্থ্যঝুঁকি

আমদানির অনুমতি না থাকলেও চোরাই পথে আনা হচ্ছে মহিষের সিদ্ধ মাংস। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন নামে পেজ খুলে এই মাংস বিক্রি হচ্ছে। দাম কম থাকায় হোটেল ও রেস্তোরাঁর মালিকরা এই মাংসের বড় ক্রেতা। তারা সাধারণ মানুষকে গরুর মাংস বলে এটা খাওয়াচ্ছে। দামও রাখছে অনেক বেশি। পাশাপাশি এই মাংস বাজারজাত করার পাঁয়তারাও চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন-প্রক্রিয়াজাত মাংসে বেশি পরিমাণ লবণ থাকে। সঙ্গে রাসায়নিকদ্রব্য মেশানো থাকায় এ মাংস খেলে নানা রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আমদানি করা সিদ্ধ ও রাসায়নিকদ্রব্য মেশানো মহিষের মাংস বিক্রির জন্য রয়েছে বেশ কয়েকটি ফেসবুক পেজ। হিমায়িত মাংসের ভিডিও দিয়ে মহিষের মাংস ঢাকা সিটিতে হোম ডেলিভারি এবং সারা দেশে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানোর বিষয় প্রচার করছে। পরিচয় গোপন রেখে একটি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়-আগে ভারত থেকে মহিষের কাঁচা মাংস আসত। কিন্তু এখন সেই সুযোগ না থাকায় মাংসে লবণ ও হলুদ মিশিয়ে সিদ্ধ করার পর ছোট ছাট টুকরো করে শুকিয়ে আনা হচ্ছে। এগুলো দেশে এনে কোল্ড স্টোরেজে রেখে বিভিন্ন হোটেলে বিক্রি করা হচ্ছে। এক প্যাকেটে তিন কেজি মাংস থাকে। কেজিপ্রতি দাম ২৫০-৩০০ টাকা। যা রান্না করলে ফুলেফেঁপে পাঁচ কেজির মতো হয়।

রাজধানীর রামপুরার একটি তেহারির দোকানের কর্মচারী নাজমুল হক বলেন, বাজারে গরুর মাংস ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। এই দাম দিয়ে মাংস কিনে ১২০ টাকা তেহারির প্লেট বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই হোটেলের মালিক একটি অনলাইন মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখে প্রথমে তাদের ফোন নম্বররে কথা বলেন। পরে সেখান থেকে জানায়, কেজিপ্রতি ৩০০ টাকা দাম। পরে সেই অনলাইনে অর্ডার করে কম টাকায় এনে রান্না করে বিক্রি হচ্ছে। এতে লাভ থাকে। তবে কখনো এই মাংস খারাপ মনে হয়নি বলে জানান ওই কর্মচারী।

জানতে চাইলে হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান বলেন, বাজারে ৮০০ টাকা কেজি গরুর মাংস। কিন্তু অনেক হোটেল বা তেহারির দোকানে কী করে প্লোট ১০০ টাকায় বিক্রি করে তা জানি না। আমাদের নিবন্ধিত যেসব হোটেল আছে তারা এই অবৈধ পথে আসা মহিষের সিদ্ধ মাংস কেনে না। তবে নিবন্ধিত নয় এমন হোটেল বা রেস্তোরাঁয় কিনতে পারে। তাদের বিষয়ে আমি কথা বলতে চাই না।

এদিকে দেশে গরুর মাংস উদ্বৃত্ত থাকায় ক্রেতার স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রান্তিক খামারিদের কথা চিন্তা করে সরকার গত বছর থেকে হিমায়িত মাংস আমদানিতে কঠোর হয়। বর্তমানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া মহিষের মাংস আমদানি করা যাচ্ছে না। আর অধিদপ্তর গত দেড় বছর কাউকে অনুমতিও দেয়নি। এছাড়া সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে মাংস আমদানি করে ধরা পড়েছে। মে মাসে নারায়ণগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এনবি ট্রেডিং ভারত থেকে ফ্রোজেন বাফেলো মিট আমদানি করে। কিন্তু প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে আমদানি করায় চালানটি খালাস দেওয়া হয়নি। যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে চালানটি নিলামে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গত ১০ মে ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এক টন হিমায়িত মহিষের মাংস দেশে আনে মেডলাইফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ নামের একটি কোম্পানি। নিয়ম না মেনে মহিষের মাংস আমদানি করায় আটকে যায় মাংস। বেরিয়ে আসে ওই কোম্পানির নানা অনিয়মের তথ্য। মাংস দিয়ে আচার বানিয়ে রপ্তানি করার কথা থাকলেও নেই কোনো কারখানা। এ বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। কাস্টমস কর্তৃপক্ষের তদন্তেও নিয়ম না মানার প্রমাণ মেলে। পরে মাংসগুলো রাজধানীর একটি কোল্ড স্টোরেজে জব্দ করে রাখা হয়। দীর্ঘ ৮০ দিন পর গত ২ আগস্ট উচ্চ আদালতের নির্দেশে মাংসগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত না করার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মাংসের পুষ্টিগুণ নষ্ট হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। প্রক্রিয়াজাত মাংসে বেশি পরিমাণ লবণ এবং রাসায়নিকদ্রব্য মেশানো থাকে। যে কারণে এসব খেলে নানা রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উৎপাদন) ডা. এবিএম খালেদুজ্জামান জানান, অনেক উন্নত দেশে দৈনিক জনপ্রতি ২০০ গ্রাম মাংস খায়। আমরা এখন ১২০ গ্রাম ধরছি। ২০৩০ সালে হয়তো ১৫০ গ্রাম ধরব। ২০৪১ সালে হয়তো আরও বাড়বে। ন্যূনতম ১২০ গ্রাম চাহিদা ধরে বার্ষিক উৎপাদন বেশি আছে। আমরা মাংস উৎপাদনে এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই হিমায়িত মাংস আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভারত থেকে হালাল নয়, এমন নিম্নমানের হিমায়িত মহিষের মাংস আমদানি করে দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় কম দামে বিক্রি করছে। সরকারকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত।

বাংলাদেশ মিট ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমআইটিএ) সূত্র জানায়, ফ্রোজেন মিটের প্রধান গ্রাহক প্রান্তিক শ্রেণির ক্রেতারা। এছাড়া বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট ফ্রোজেন মিটগুলোর ক্রেতা। অথচ এখন আমদানি বন্ধ থাকার ফলে দাম যেমন বাড়ছে, আবার দেশের পুষ্টি নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d