Bangladesh

চোর-ডাকাতকেও তো মানুষ এভাবে মারে না: আদালতকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি

ধানম-ির বাসার দরজা ভেঙে গ্রেপ্তারের পর থানায় ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়েছে বলে আদালতের কাছে অভিযোগ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানী)। ধানমন্ডি থানার নাশকতার একটি মামলায় গতকাল রিমান্ড শুনানি চলাকালে তিনি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই অভিযোগ করেন। নির্যাতনের কথা বলতে গিয়ে আদালতের সামনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন শহীদ উদ্দীন চৌধুরী। তিনি কেঁদেও ফেলেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত আইনজীবীরা চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে দরজা ভেঙে গ্রেপ্তারের বিষয় শহীদ উদ্দীন চৌধুরী আদালতকে বলেন, ‘আমি জাতীয় সংসদের দুবার এমপি ছিলাম। ছাত্ররাজনীতি করে আমি আজ এই পর্যায়ে। গতকালও তো আমি জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রোগ্রাম করেছি। সেখান থেকেও তো আমাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারতো। কিন্তু সেটি না করে পুলিশ কেন মধ্যরাতে আমার বাসায় অভিযান চালালো?’

গ্রেফতারের সময় বাসায় ভাঙচুরের বর্ণনা দিয়ে বিএনপির সাবেক এই এমপি আদালতকে বলেন, ‘বাসায় আমার বাচ্চা ছিল। দরজা ভেঙে আমাকে টেনেহিঁচড়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমি তো চোরও না, ডাকাতও না। থানায় নিয়ে যাওয়ার পর আমাকে পুলিশ বেধড়ক পিটিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’

এই কথা বলার পর শহীদ উদ্দীন চৌধুরী আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। তিনি কাঁদতে থাকেন। এ পর্যায়ে শহীদ উদ্দীন আদালতকে আরো বলেন, ‘কারও গায়ে হাত তোলার অধিকার কি পুলিশের আছে? আমার ওপর অত্যাচার করেছে পুলিশ। চোর-ডাকাতকেও তো মানুষ এভাবে মারতে পারে না।’

ধানমন্ডি থেকে মধ্যরাতে গ্রেপ্তারের পর গতকাল বুধবার বেলা দুইটায় বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরীকে ঢাকার আদালতে হাজির করে পুলিশ। তখন থেকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঢাকার সিএমএম আদালতের হাজতখানায় ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর কড়া পুলিশ পাহারায় শহীদ উদ্দীন চৌধুরীকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। আদালতে আসার পর এজলাস কক্ষের বেঞ্চে বসেন তিনি। পরে আদালত কক্ষে আসেন ম্যাজিস্ট্রেট রশিদুল আলম। বিচারকের উপস্থিতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরীকে লোহার খাঁচার তৈরি আসামির কাঠগড়ায় যেতে বলা হয়।

এ সময় শহীদ উদ্দীনের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরী অসুস্থ। তার বাইপাস সার্জারি হয়েছে। তিনি ঠিকমতো হাঁটতে পারছেন না। তখন আদালত বলেন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী আসামির কাঠগড়ায় যাবেন। তার বসার ব্যবস্থা করা হবে। পরে শহীদ উদ্দীন লোহার খাঁচায় তৈরি আসামির কাঠগড়ায় যান। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি চেয়ার দেওয়া হয়। তিনি সেখানেই বসে ছিলেন।

এরপর শহীদ উদ্দীনকে কেন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা উচিত, তার পক্ষে যুক্তি আদালতের কাছে তুলে ধরেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধানমন্ডি থানার এসআই শহীদি হাসান। ওই পুলিশ কর্মকর্তা আদালতকে বলেন, গত ২৩ মে রাজধানীর সিটি কলেজের সামনে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ১০ থেকে ১৫ হাজার নেতা-কর্মী পদযাত্রার সমাপনী বক্তব্য শেষে চলে যাওয়ার সময় নাশকতামূলক কর্মকা- করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন আসামি শহীদ উদ্দীন। তার মদদে বিএনপির নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রসজ্জিত হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেন, ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান, গাড়ি ভাঙচুর করেন। পরে শহীদ উদ্দীনকে রিমান্ডে নেওয়ার পক্ষে আরো যুক্তি তুলে ধরেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবদুল্লাহ আবু।

অন্যদিকে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর আইনজীবীরা। তার আইনজীবী মোসলে উদ্দিন আদালতকে বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন দুবার জাতীয় সংসদের এমপি ছিলেন। তিনি অসুস্থ। বাইপাস সার্জারির রোগী। মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তার আরেক আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন তো পালিয়ে বেড়ান না। কেন তার বাসায় মধ্যরাতে অভিযান চালিয়ে দরজা ভেঙে গ্রেপ্তার করা হলো? রাজনীতি করা কি কোনো অপরাধ? বাসার দরজা ভেঙে গ্রেপ্তারের পর তাঁকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।

এ অভিযোগের বিষয়ে পিপি আবদুল্লাহ আবু আদালতকে বলেন, বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দীন চৌধুরীকে কোনো ধরনের নির্যাতন করেনি পুলিশ। তাঁকে নির্যাতন করার অভিযোগ সত্য নয়। তবে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী আদালতের কাছে তার ওপর পুলিশের নির্যাতনের ওই বিবরণ দিয়েছেন।

দুই পক্ষের বক্তব্য শুনে ধানমন্ডি থানার এই মামলায় শহীদ উদ্দীন চৌধুরীর ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতের সামনে শহীদ উদ্দীনের মুক্তির দাবি জানিয়ে সেøাগান দিতে থাকেন।

এদিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর কাজই অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা। যে পর্যায়ের নেতাই হোক, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে। এক্ষেত্রে কাউকে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, হবেও না। গতকাল বুধবার মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, আইন সবার জন্য সমান। সে রাজনৈতিক ব্যক্তিই হোক কিংবা অন্য যে কেউ। কারো বিরুদ্ধে যদি ওয়ারেন্ট ও সুস্পষ্ট মামলা থাকে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d