Bangladesh

চ্যালেঞ্জের ভোট আজ

দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি ৪৩৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার সঙ্গে উত্তাপ-উদ্বেগও বেশি * ভোটারদের কেন্দ্রে আনাসহ নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে ইসি

বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্যে আজ রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৯৯টি আসনের ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রে একযোগে ভোটগ্রহণ হবে। 

এদিন ৩০০টি আসনে ভোট নেওয়ার কথা থাকলেও একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ এ ভোট বাতিল করা হয়েছে। 

ইসির তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন ১৯৬৯ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ৯৬ জন নারী ও দুজন তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া), বাকি সব পুরুষ। এ নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। বিএনপিসহ ১৬টি রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্যে এ নির্বাচন শেষ হতে যাচ্ছে। 

আজ ভোটের দিন বিএনপিসহ কয়েকটি দল হরতাল কর্মসূচিও পালন করছে। এসব দলের বর্জনের কারণে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক কি না তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।

বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার শঙ্কা, ভোটকেন্দ্র, ভোটার ও প্রার্থীদের নিরাপত্তা, নির্বাচনি এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং দেশে-বিদেশে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন নিয়ে বহুমুখী চ্যালেঞ্জে রয়েছে নির্বাচন কমিশনও (ইসি)।

যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল শনিবার বলেছেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে এ নির্বাচন আয়োজন করেছেন। সব দল অংশ না নেওয়ায় এবারের ‘নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে না’ বলে স্বীকার করেছেন। তবে একেবারেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ও অংশগ্রহণমূলক নয়, এমনটিও মানতে রাজি নন তিনি। 

বিরোধী পক্ষের ভোট বর্জনের পাশাপাশি প্রতিহতের কর্মসূচি পালনের কারণে নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে উঠিয়ে আনা কঠিন হবে বলেও মন্তব্য করেছেন সিইসি। তিনি ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশের সব ব্যবস্থা নিয়েছেন বলেও জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছে তিনি।

নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন মহলের বিতর্ক উঠলেও সুষ্ঠু ভোট দৃশ্যমান করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরই অংশ হিসাবে এ নির্বাচনের ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৯ হাজার ৫৩টি কেন্দ্রে আজ সকালে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে।

ওই সব কেন্দ্রে নির্বাচনের অন্যান্য সামগ্রী গতকালই পাঠানো হয়েছে। যদিও দুর্গম ও চরাঞ্চল বিবেচনায় ২৯৭১টি কেন্দ্রে গতকাল ব্যালট পেপার পাঠানো হয়। 

পাশাপাশি রিটার্নিং কর্মকর্তা, এসপি, ইউএনও, ওসিসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যেকোনো স্থান থেকে আসা ‘শেষ মুহূর্তের মেসেজ’, ‘আগের রাতের মেসেজ’ ও ‘চূড়ান্ত মেসেজ’-ইত্যাদি আমলে না নিতে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট আয়োজনে শুধু ইসির নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে।

একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনে অনেক দল অংশ না নিলেও বিপুল সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে থাকায় অনেক আসনের প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। পছন্দের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে ওই সব আসনে ভোটারদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনে উত্তাপ-উদ্বেগও বেড়েছে। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১৫৩২ জন প্রার্থী রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি রয়েছে ৪৩৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থীও। বেশিরভাগ স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকারি দলের নেতাকর্মী।

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল অংশ নিয়েছিল। ওই নির্বাচনে ৮০ শতাংশ ভোট পড়ে। আওয়ামী লীগ ২৫৯টি, জাতীয় পার্টি ২০টি ও বিএনপি ৬টি আসনে জয় পায়। 

নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে বিতর্ক ওঠে। ওই নির্বাচনের প্রতিবেদনও প্রকাশ করেনি তৎকালীন কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। বর্তমান কাজী হাবিবুল আউয়াল দায়িত্ব পালনের ২২ মাসে সব দলকে নিয়ে নির্বাচন আয়োজনের কথা বারবারই বলে আসছেন। 

যদিও নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক বিভক্তি আরও বেড়েছে। এর প্রভাব নির্বাচনেও পড়ছে। প্রাধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল শনিবার জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন তাতেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। 

তিনি বলেছেন, অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য কাঙ্ক্ষিত অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশ প্রয়োজন। কিন্তু অনস্বীকার্য যে, নির্বাচন প্রশ্নে, রাজনৈতিক নেতৃত্বে মতভেদ রয়েছে। 
মতভেদ থেকে সংঘাতও সহিংসতা কাম্য নয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় নাশকতা ও সহিংসতা একেবারেই হচ্ছে না তা বলা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রীয় ধন-সম্পদের ক্ষতিসাধনের পাশাপাশি মানুষ আহত-নিহত হচ্ছে। নির্দোষ, নিরীহ, নিষ্পাপ শিশু, নারী, পুরুষের মর্মান্তিক ও মর্মন্তুদ মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। চলমান এহেন পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান ও অবসান প্রয়োজন। 

আজকে না হলেও ভবিষ্যতের জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা সবসময় বিশ্বাস করি আলাপ-আলোচনা ও গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় উপনীত হয়ে যে কোনো রাজনৈতিক সংকটের নিরসন সম্ভব।

নির্বাচনে ২৮ রাজনৈতিক দল: নির্বাচন কমিশনে বর্তমানে ৪৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত রয়েছে। তবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২৮টি রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ছাড়া বেশিরভাগ দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম কম, রাজনীতিতেও প্রভাব কম।

এ নির্বাচনে ২৬৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রয়েছে। দুটি আসনের প্রার্থী দিলেও তারা নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছেন। বাকি আসনগুলো মহাজোটের শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। 

অন্যান্য দলের মধ্যে জাতীয় পার্টি ২৬৪টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১২২টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস ৯৬টি আসনে প্রার্থী রয়েছে। তৃণমূল বিএনপি ১৩৫টি ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম’র ৫৬ জন প্রার্থী রয়েছে নির্বাচনের মাঠে। যদিও এসব দল ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনায় এসেছিল।

ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা: ইসি জানিয়েছে, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় পুলিশ ও আনসারের ১৫-১৭ জন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এবারই প্রথম প্রতিটি কেন্দ্রে অন্তত দুজন পুলিশ থাকছেন। ঝুঁকিপূর্ণ ও মেট্রোপলিটন এলাকা বিবেচনায় চারজন পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

শুধু ভোটকেন্দ্রের পাহারায় রয়েছেন ৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫৫ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য। তাদের মধ্যে পুলিশ ১ লাখ ৭৪ হাজার ৭৬৭ জন ও আনসার ৫ লাখ ১৪ হাজার ২৮৮ জন।

মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স সেনা, র‌্যাব ও বিজিবি: ভোটকেন্দ্রের বাইরের নিরাপত্তায় মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে মাঠে রয়েছেন সেনা, নৌ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আওতায় নির্বাচনি এলাকায় টহল দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এ নির্বাচনে ৬২ জেলায় ৩৮ হাজার ১৫৪ জন সেনা, ভোলা ও কক্সবাজারসহ উপকূলীয় এলাকায় ২৮৭২ জন নৌবাহিনীর সদস্য, ৪৫ হাজার ১৮৫ জন বিজিবি সদস্য, ১০ হাজার ১৯২ জন পুলিশ, ৪৪ হাজার ২১২ জন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্য এবং র‌্যাবের ৬০০টি টিম মাঠে রয়েছে। এর বাইরেও র‌্যাবের ৯৫টি টিম রিজার্ভ হিসাবে থাকছে।

ভোটার ও ভোটকেন্দ্র: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ৪২ হাজার ২৪টি ভোটকেন্দ্র এবং ২,৬০,৮৫৮টি ভোটকক্ষ রয়েছে। আর ভোটার রয়েছেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৭ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৫ লাখ ৯২ হাজার ১৬৯ জন, মহিলা ভোটার ৫ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ১৪০ জন এবং হিজড়া ৮৪৮ জন। ভোটগ্রহণের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন আট লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা।

নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমোদন পেয়েছেন ১২৬ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক : ইসি জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ৩৪টি দেশের ১২৬ জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন (অ্যাক্রিডিটেশন) পেয়েছেন। এছাড়া ইসির আমন্ত্রণে ৩২ জন পর্যবেক্ষক সাড়া দিয়েছেন। 

সূত্র জানিয়েছে, বিদেশি পর্যবেক্ষক অনুমোদন পাওয়া সবাই আসেননি। ৭০-৮০ জন ঢাকায় এসেছেন। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য মিশন যথাক্রমে তাদের ২৯ এবং ১০ জন কর্মীর পর্যবেক্ষণের অনুমতির জন্য আবেদন করে। পরে ওই দুটি মিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে না বলে ইসিকে জানিয়ে দেয়।

এবারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশিদের তালিকায় সংখ্যার শীর্ষে আছে কমনওয়েলথ।

সংস্থাটির ১৭ জন প্রতিনিধি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। এরপর এনডিআই এবং আইআরআইয়ের ১২ জন, আফ্রিকার ইলেক্টোরাল অ্যালায়েন্সের ১০ জন এবং ইইউর চারজন প্রতিনিধি যুক্ত থাকবেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে। বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের মধ্যে ঢাকায় জাপান দূতাবাসের ১৬ জন কর্মী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d