Bangladesh

ছাত্র-জনতাকে গুলির নির্দেশদাতা আসাদুজ্জামান কামাল এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে

পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে নিয়োগ বাণিজ্যে ঘুষ নিতেন বস্তায়। পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার অন্যতম নির্দেশদাতা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এখনও ধরাছোয়ার বাইরে। কতিপয় দুনীতিবাজ পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা তাকে রক্ষায় ভুমিকা রাখছেন। আর এর বিনিময়ে খোদ সাবেক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকেই নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। এমন অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্তে নেমেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এরই মধ্যে কামালের বিরুদ্ধে হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে নিয়োগ বাণিজ্যে ঘুষ হিসেবে বস্তায় বস্তায় টাকা নিতেন তিনি। দেশ থেকে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। আসাদুজ্জামান খান, তার পরিবার এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের অর্থ সঞ্চয় ও পাচারের তথ্য মিলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নবম জাতীয় সংসদে ঢাকা-১১ এবং দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচিত হন। তিনি এ সময় পর্যন্ত টানা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তার প্রভাবের কারণে দলীয় অন্যরা এই মন্ত্রণালয় পাননি।

সিআইডির এক কর্মকর্তা বলেন, তারা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার ঘনিষ্ঠদের বিদেশে অর্থপাচারের বিষয়ে তদন্ত করছেন। গুরুত্বসহকারে তা তদন্ত করা হচ্ছে। এরই মধ্যে হাজার কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছেন আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। যা আরো সময় নিয়ে তদন্ত করে তথ্য প্রমান সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুর্নীতির সব ধরনের তথ্য অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৫ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক তথ্য বেরিয়ে আসছে। তিনি মাফিয়াদের গডফাদার ছিলেন। তার নিয়ন্ত্রণে ছিল একটি বড় দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। তিনিসহ এই সিন্ডিকেটের সব সদস্য এখন গাঢাকা দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগে সর্বনিম্ন ৮০ লাখ থেকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত নিত এই চক্র। এ ছাড়া পুলিশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এক থেকে তিন কোটি টাকা নিত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়ন্ত্রণাধীন এই সিন্ডিকেট।

দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, দুদকের অনুসন্ধানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে ৫০০ কোটি টাকার বেশি স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ব্যাংকে নগদ অর্থ, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও জমি রয়েছে। অনুসন্ধানে তাদের ব্যাংক হিসাবেই শতকোটি টাকার বেশি অর্থের সন্ধান মিলেছে। এ ছাড়া সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে বস্তায় বস্তায় কোটি কোটি টাকা আদায় করার অভিযোগ ছিল। অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন, সে কারণে আদালতের অনুমতিক্রমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তার স্ত্রী, দুই সন্তান এবং মন্ত্রীর পিএস, এপিএসসহ ওই ১০ ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির কোটি কোটি টাকার ভাগ পেতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানতে পেরেছেন, সাবেক এক স্বরাষ্ট্রসচিবের মাধ্যমে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এই সিন্ডিকেটের আশীর্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনো জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতেন না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে এক থেকে তিন কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই চক্রের অন্যরা হলেন তার সাবেক পিএস অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশিদ বিশ্বাস, যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন ও সহকারী একান্ত সচিব মনির হোসেন প্রমুখ। দুদকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, মন্ত্রণালয়ের সব ঘুষ, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঝুঁকি এড়াতে দুর্নীতির টাকাগুলো তিনি বিভিন্ন সময়ে দেশের বাইরে পাঠিয়েছেন। কক্সবাজারে হোটেলের পাশাপাশি জমিও রয়েছে তার।

তদন্তে উঠে আসছে, ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান পুলিশের সাবেক ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। সে সময় পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে মোল্ল্যা নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এ ছাড়া এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে গিয়ে প্রতি সংস্থা থেকে ৮০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা দিতে হতো আসাদুজ্জামান খান কামালের দরবারে। এর মধ্যে ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি উন্নয়ন সংস্থার এনওসি নিতে গেলে বিপত্তি শুরু হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা, জেলা প্রশাসক, এনএসআই ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে। তার পরও অদৃশ্য কারণে ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় মন্ত্রণালয়ে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে কোনো সার্কুলার হলেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি তালিকা পাঠানো হতো। সে অনুযায়ী তাদের নিয়োগ দিতে ফায়ার সার্ভিসকে বাধ্য করতেন সাবেক এই মন্ত্রী। ২০২৩ সালের ২ অক্টোবর ৫৩৫ জনকে নিয়োগ দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এর মধ্যে ছিলেন ৪৩৬ জন পুরুষ, ১৫ জন নারী ফায়ারফাইটার এবং ৮৪ জন গাড়িচালক। নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২৫০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। সাবেক এই মন্ত্রীর নির্দেশে সেই তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস। নিয়োগের জন্য জনপ্রতি আট থেকে ১২ লাখ টাকা নিত কামাল-হারুন সিন্ডিকেট।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুলিশের এসআই ও সার্জেন্ট পদে নিয়োগের মাধ্যমে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট এই বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি গোপন প্রতিবেদন জমা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানতে পেরেছেন, এই নিয়োগ দুর্নীতিতে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষে একেকজন প্রার্থীর কাছ থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে পছন্দের তালিকা তৈরি করা হয়। আর চাহিদামতো ঘুষ না দিলে তাঁকে ভাইভায় ফেল করিয়ে দেওয়া হতো।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor