Bangladesh

ছিলেন পৌর সচিব, এখন বিপুল সম্পদের মালিক

যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বেনাপোল পৌরসভার সচিব ছিলেন রফিকুল ইসলাম। চাকরিকালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

রফিকুলের বিরুদ্ধে শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান করছে বলে সূত্র প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘রাইসা বিল্ডার্স’ নামের একটি নির্মাণপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক পদে আছেন রফিকুল। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী তাঁর স্ত্রী ইসরাত জাহান। রফিকুল পৌর সচিব থাকাকালে প্রতিষ্ঠানটি চালু করা হয়।

রাইসা বিল্ডার্স রাজধানীর মিরপুরের পীরেরবাগে একটি ১০ তলা (আবাসিক-বাণিজ্যিক) ও একটি ৯ তলা ভবন (আবাসিক) নির্মাণ করেছে। পীরেরবাগে প্রতিষ্ঠানটির আরেকটি ১০ তলা আবাসিক ভবন নির্মাণাধীন। এসব ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কোথাও থেকে ঋণ নিতে হয়নি বলে রফিকুল নিজেই প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, চাকরিকালে ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় জুতার একটি কারখানা গড়ে তোলেন রফিকুল। বর্তমানে এই কারখানায় প্রায় দুই শ শ্রমিক কাজ করছেন।

বেনাপোল পৌরসভার সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম

বেনাপোল পৌরসভার সাবেক সচিব রফিকুল ইসলাম

বেনাপোল পৌরসভা-সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের ভাষ্য, চাকরিকালে পৌরসভার বিভিন্ন কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ, অর্থের বিনিময়ে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া, কাজ শেষ হওয়ার আগেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে টাকা পরিশোধের ব্যবস্থা করতেন রফিকুল। এসব করে তিনি বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা পেতেন। এ ছাড়া তিনি অন্য ঠিকাদারের লাইসেন্সে নিজেই পৌরসভার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ করতেন। এভাবে তিনি অবৈধভাবে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

রফিকুলের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, তিনি ১৯৯৮ সালে পৌর সচিব পদে চাকরি শুরু করেন। বেনাপোল পৌরসভায় কর্মরত অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে। ২০২১ সালের আগস্টে তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

দেশে তিন শ্রেণির পৌরসভা আছে। প্রথম (ক) শ্রেণির পৌরসভায় কর্মরত নির্বাহীদের (সাবেক পৌর সচিব) বেতন স্কেল ৯ম গ্রেডের, দ্বিতীয় (খ) শ্রেণির ১০ম গ্রেডের, তৃতীয় (গ) শ্রেণির ১১তম গ্রেডের। বেনাপোল পৌরসভাকে ২০১১ সালে ক শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়।

রফিকুল সচিব থাকাকালে তিনি বেনাপোল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আশরাফুল আলমের কাছ থেকে নানা অবৈধ সুযোগ পেতেন বলে অভিযোগ আছে। তবে এই অস্বীকার করেছেন সাবেক মেয়র আশরাফুল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার কাছ থেকে রফিকুল কোনো অবৈধ সুবিধা পাননি।’

পৌরসভার সচিব পদে চাকরি করে কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন, তা জানতে সম্প্রতি রফিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমার যত সম্পদ আছে, সবকিছু আয়কর বিবরণীতে দেখানো আছে।’

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রফিকুল ফোন কেটে দেন। পরে তাঁর স্ত্রী ইসরাতের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। নির্মাণপ্রতিষ্ঠান খুলে একাধিক বহুতল ভবন করার জন্য টাকা কোথায় পেলেন, তা জানতে চাইলে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন ধরেননি।

জানতে চাইলে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (যশোর) উপপরিচালক মো. আল আমিন সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রফিকুলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগটি অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে।’

দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগ অনুযায়ী, বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকাও রয়েছে রফিকুল-ইসরাত দম্পতির। আছে একাধিক গাড়িও।

রাইসা বিল্ডার্সের বানানো আরেকটি বহুতল ভবন

রাইসা বিল্ডার্সের বানানো আরেকটি বহুতল ভবন

আরও অভিযোগ

মিরপুরের পীরেরবাগের ৬০ ফিট সড়কের পাশে ‘রাইসা অ্যান্ড শিকদার টাওয়ার’ নামের একটি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করেছে রফিকুল-ইসরাতের রাইসা বিল্ডার্স। তিনজন মালিকের প্রায় আট কাঠা জমির ওপর ২০১৪ সালে ভবনটি নির্মাণ করা হয় বলে জানা যায়। তবে চুক্তি অনুযায়ী জমির মালিকেরা তাঁদের ফ্ল্যাটের অংশ ঠিকঠাক বুঝে পাননি বলে অভিযোগ।

জমির দুজন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, নিজের অংশের ফ্ল্যাটের কাজ ঠিকভাবে শেষ করেছেন রফিকুল। কিন্তু জমির মালিকদের অংশের সব ফ্ল্যাটের কাজ শেষ করা হয়নি। এই কাজ রফিকুল করেও দিচ্ছেন না।

জমির তিন মালিকের একজন রেহেনা রউফ। তিনি সম্প্রতি বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী, জমির মালিকদের ভবনের মোট ফ্ল্যাটের ৫০ শতাংশ দেওয়ার কথা। কিন্তু আমাদের অংশ সঠিকভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আমার ভাগে দুটি ফ্ল্যাটের কাজ শেষ করা হয়নি। পরে কিছুদিন আগে আমি নিজের টাকায় এই কাজ শেষ করেছি।’

রেহেনা রউফ আরও বলেন, ‘আমাদের অংশ বুঝিয়ে না দিয়ে উল্টো মামলা করা হয়েছে। এতে আমরা হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমিও আমার পাওনা ঠিকভাবে বুঝে পেতে মামলা করেছি।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button