USA

ছেলে দোষী সাব্যস্ত হলেও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখার অঙ্গীকার বাইডেনের

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগ্নেয়াস্ত্র মামলায় ছেলে হান্টারকে দোষী সাব্যস্ত করে জুরিবোর্ডর দেওয়া সিদ্ধান্তের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা বজায় রাখবেন। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বাইডেন এ কথা বলেছেন।

বাইডেন–পুত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৮ সালে উইলমিংটনের আগ্নেয়াস্ত্রের একটি দোকান থেকে তিনি একটি রিভলবার কিনেছিলেন। আগ্নেয়াস্ত্রটি কেনার সময় তিনি নিজের মাদকাসক্তি নিয়ে ফেডারেল কাগজপত্রে মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন। নিজের মাদকাসক্তির কথা গোপন করেছিলেন তিনি। এ ঘটনায় হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনেছেন সরকারি কৌঁসুলিরা।

প্রথম অভিযোগ, আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সময় মিথ্যা তথ্য দেন হান্টার বাইডেন। দ্বিতীয় অভিযোগ, অস্ত্র বিক্রেতার নথিপত্রেও মিথ্যা তথ্য থাকার বন্দোবস্ত করেন তিনি। আর তৃতীয় অভিযোগ হলো, হান্টার বাইডেন অবৈধভাবে আগ্নেয়াস্ত্র নিজের কাছে রেখেছিলেন।

এক সপ্তাহ ধরে বিচারকাজ চলার পর গতকাল ৫৪ বছর বয়সী হান্টার বাইডেনকে দোষী সাব্যস্ত করেন ১২ সদস্যবিশিষ্ট জুরিবোর্ড। হান্টার হলেন প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের সন্তান, যিনি ফৌজদারি মামলায় বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।

আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে বাইডেন যখন নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত, তখনই এমন সিদ্ধান্ত জানালেন জুরিবোর্ড।

এত দিন ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের আদালতে হান্টারের বিরুদ্ধে বিচার চলাকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কোনো শুনানিতে অংশ নেননি। যদিও ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনসহ পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিয়মিতই শুনানিতে উপস্থিত থাকতেন। গতকাল রায় ঘোষণার পর বাইডেন ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তাঁর ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন।

এক বিবৃতিতে বাইডেন বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট, তা ঠিক আছে; কিন্তু আমি তো একজন বাবাও। সে (হান্টার) এখন যে ধরনের মানুষ, তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত।’

বিবৃতিতে বাইডেন আরও বলেছেন, হান্টার আপিল করার কথা ভাবছেন। এমন অবস্থায় এ মামলায় তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে যে ধরনের সাজাই ঘোষণা করা হোক না কেন, এ বিচারপ্রক্রিয়ার প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা বজায় থাকবে।  

বাইডেন এর আগেও বলেছেন, হান্টার দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি তাঁর ক্ষমতাবলে ছেলের সাজা মওকুফ করে দেবেন না।

বিচার চলাকালে হান্টারের সাবেক স্ত্রী ক্যাথলিন বুহলে ও সাবেক প্রেমিকা জো জোয়ে কেস্তানের বক্তব্য শুনেছেন জুরিবোর্ড। দুজনই বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকাকালে হান্টার প্রায়ই মাদক সেবন করতেন। তাঁর মাদকাসক্তির কথা প্রমাণ করে—এমন কিছু খুদে বার্তা ও ছবিও আদালতে দেখিয়েছেন তাঁরা।

বাইডেনের সহযোগীরা মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, এ মামলাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন বাইডেন। এ বিচার কার্যক্রম তাঁর আবেগ-অনুভূতিকে নাড়া দিয়ে গেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই বিচারের এ বিষয় বাইডেনকে ভাবাচ্ছিল। সম্প্রতি ডি-ডে বার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রান্স সফরে যাওয়ার সময় বাইডেন পরিবারের সদস্যদের বলে গিয়েছিলেন, তাঁকে যেন মামলার ব্যাপারে নিয়মিত জানানো হয়।

সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, বাইডেন এ ঘটনার জন্য নিজেকেও দোষী বলে মনে করেন। তাঁর বিশ্বাস, ছেলের এমন আইনি জটিলতায় পড়ার পেছনে তাঁর (বাইডেন) রাজনৈতিক জীবনের প্রভাব আছে।

আগামী ১২০ দিনের মধ্যে হান্টার বাইডেনের বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করা হবে। তবে মামলাটি তদারকের দায়িত্বে থাকা বিচারকেরা এখনো সাজা ঘোষণার তারিখ জানাননি। হান্টারের ২৫ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে আইনবিশেষজ্ঞদের ধারণা, হান্টারকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, তিনি প্রথমবারের মতো বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন এবং তিনি সহিংস অপরাধী নন।

এটাই শেষ নয়, ১৪ লাখ ডলার কর ফাঁকির অভিযোগে আগামী সেপ্টেম্বরে ক্যালিফোর্নিয়ায়ও বিচারের মুখোমুখি হতে পারেন হান্টার। ওই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর ১৭ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button