Hot

জটিল সমীকরণে রাজনীতি, বাড়ছে অনৈক্য সংশয় সন্দেহ

রাজনীতির মাঠে অনৈক্যের সুর ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। ভোটের হিসাব-নিকাশ যত এগিয়ে আসছে বিরোধ ততই প্রকাশ্যে রূপ নিচ্ছে। দীর্ঘদিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ভোটের অধিকারসহ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে যারা রাজপথে শামিল ছিলেন, মাত্র ৫ মাসের মাথায় এসে তারা এখন একে অপরকে নিশানা বানাচ্ছেন।

এমনকি জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত সফল গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কদের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে পালটাপালটি বক্তব্যসহ এক ধরনের বিরোধ স্পষ্ট হচ্ছে। যদিও স্বৈরাচারী হাসিনাবিরোধী ১৫ বছরের আন্দোলনে বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যাপক অবদান ও ত্যাগ রয়েছে।

কিন্তু নির্বাচনের সময় নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার ইস্যুর সমাধান না হতেই এখন নতুন করে যুক্ত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম জাতীয় নাগরিক কমিটির তত্ত্বাবধানে শিগগির নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখছে। 

বিএনপি নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি অন্তর্বর্তী সরকারের সহায়তায় তারা দল গঠন করেন তাহলে সরকার নিরপেক্ষতা হারাবে। এ সরকারের পক্ষে তখন নিরপেক্ষ নির্বাচন করা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।

বিপরীতে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, যদি কোনো উপদেষ্টা নতুন রাজনৈতিক দলে যুক্ত হন তাহলে তিনি সরকারি দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে দল করবেন। এক্ষেত্রে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে না। এছাড়া সমন্বয়কদের কয়েকজন বলেন, এত মানুষের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত গণ-অভ্যুত্থান শুধু নির্বাচন করার জন্য হয়নি। প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং আওয়ামী লীগের খুনি, দুর্নীতিবাজ এবং অর্থ পাচারকারীদের বিচারের আগে নির্বাচন হবে না। 

এদিকে এমন বৈরী সম্পর্কের মধ্যে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে কেউ কেউ বিশেষ ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এমন পরিস্থিতির সুযোগ নেবে, এটাই স্বাভাবিক। ইতোমধ্যে দলের অনেক পলাতক নেতা বিদেশে থাকাবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে দ্রুত নির্বাচনসহ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার দাবি তুলছেন। যে কারণে সরকার ও সমন্বয়কদের তরফে বলা হয়েছে-বিএনপি তো আওয়ামী লীগের সুরে কথা বলছে। 

এ রকম পরিস্থিতিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জটিল সমীকরণ বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তারা বলছেন, নির্বাচন সংস্কার কতটুকু হবে, কবে নাগাদ হবে এবং সংস্কার শেষে নির্বাচন কবে হবে-এমন বিতর্কের পর এখন নতুন করে যুক্ত হলো অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতার প্রশ্ন। এটি পানি অনেক ঘোলা করতে পারে।

এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হওয়ার পর সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। তখন সামনে চলে আসতে পারে বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল, নতুন সংবিধান রচনা, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, এমনকি রেফারেন্ডাম বা গণভোটের আয়োজন নিয়েও মাঠ সরগরম হতে পারে। এক কথায় বলা যায়, স্বার্থের দ্বন্দ্বে ভেঙে পড়ছে জুলাই বিপ্লবের জাতীয় ঐক্য। তবে দেশের স্বার্থে এ মুহূর্তে সবার আগে ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী শক্তিগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য থাকাটা জরুরি। 

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল যুগান্তরকে বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ছয় মাস, এক বছর কিংবা দেড় বছর পর হোক, নির্বাচন এ দেশে হবেই। নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে, বিরোধগুলোও তত স্পষ্ট হতে থাকবে। যার যার স্বার্থের বিষয়ে রাখঢাক সরে যাবে। কে কাকে ল্যাং মেরে এগিয়ে যাবে সেই চেষ্টা চলতে থাকবে। আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণ বাড়বে। বিএনপি যদি দেখে সামনের নির্বাচনে ছাত্ররা তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী, তাহলে তারা ছাত্রদেরও ছাড় দেবে না। এটাই স্বাভাবিক। এটাই রাজনীতি। অন্যদিকে ছাত্ররাও দেখছে তাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী এখন বিএনপি। তাই তারাও বিএনপির বিষয়ে কথা বলছে। ইতোমধ্যে এসব আলামত কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। 

তিনি আরও বলেন, সরকারে থেকে বা সরকারের আশীর্বাদ নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে। এতে করে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিরপেক্ষতা হারাবে। আমি মনে করি, যারা দল করতে চান, তাদের এখনই সরকার থেকে বের করে দেওয়া উচিত। একইভাবে হঠাৎ করে এক-এগারোর কথা বলা হচ্ছে। আমি তো মনে করি এটাও এক ধরনের উসকানি। ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য কেউ কেউ এরকমটা করছেন বলে মনে হচ্ছে।

মাসুদ কামাল বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনী উচ্চ আদালতে বাতিল হয়েছে। এ কারণে আপনা আপনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরে এসেছে। বর্তমান সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলা যাবে না। এটা একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কেউ যদি এই সরকারের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করে, তা করার যথেষ্ট কারণও রয়েছে। তিনি মনে করেন, এ সরকার সামনের দিনগুলোতে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে না পারলে নির্বাচন আয়োজনের যোগ্যতা হারাবে।

সম্প্রতি বিবিসি বাংলার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে বেরিয়ে এসে সেটা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দল গঠন করা গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সেক্ষেত্রে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। কিন্তু একটা কথা অলরেডি উঠে আসছে মিডিয়াতে। কিংস পার্টি বলে একটা কথা উঠছে। আমি মনে করি, এখান থেকে তাদের বেরিয়ে আসা উচিত। অর্থাৎ সরকারের কোনো সাহায্য না নিয়ে তারা যদি দল গঠন করতে চান, সেটা তাদের জন্যই ভালো হবে।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে না পারলে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বলে জানা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টানাপোড়েনের মাঝে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিএনপির ‘কথার টোন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে।’ উপদেষ্টা আরও বলেন, তিনি রাজনৈতিক দলে যোগ দিলে সরকার থেকে বের হয়ে যাবেন। বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে আরেকটা এক-এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত হিসাবে বৃহস্পতিবার ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এক-এগারো এবং মাইনাস টুর আলাপটা কিন্তু সর্বপ্রথম বিএনপিই রাজনীতির মাঠে এনেছে কিছুদিন আগে।’ অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি এবং অংশীজনদের সমর্থনেই সরকার গঠন হয়েছে উল্লেখ করে মো. নাহিদ ইসলাম বিএনপি মহাসচিবের ‘নিরপেক্ষতা’সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে ‘সন্দেহ’ প্রকাশ করেন। অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করতে বা সরাতে ‘দেশি-বিদেশি চক্রান্ত’র পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক অবস্থানের সঙ্গেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ওই বক্তব্যের সাদৃশ্য দেখছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যুগান্তরকে বলেন, পতিত সরকারের লোকজন বিদেশে গিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তারা দেশের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। অতি দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা দেওয়া হলে জনগণ নির্বাচনমুখী হবে। তখন আর কেউ ষড়যন্ত্র করতে সাহস পাবে না।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা যারা স্লোগান দিয়েছি, জান-প্রাণ দিয়ে লড়াই করলাম, তাদের নিজেদের মধ্যে অনৈক্যের সুর এখন তীব্র হচ্ছে। আমরা একটা সংকট ও ক্রান্তির মধ্যে আছি। এটা উত্তরণের জন্য একটাই পথ, সেটা হলো জাতীয় ঐক্য। 

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিজেও বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের কথা বলে আসছেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাউস শোয়াবের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘দেশের মানুষ কোন ধরনের নির্বাচন চায়, সেটি না জেনে সরকার নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে না।’ ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সরকার নির্বাচন আয়োজনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে এখন দেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রক্রিয়াটি কেমন হবে। তারা কি ছোট পরিসরের সংস্কার কর্মসূচিতে যাবে, নাকি দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার চাইবে। যদি মানুষ দ্রুত সংস্কার চায়, তাহলে আমরা এ বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন করার লক্ষ্য নিয়েছি। আর যদি বলে, না আমাদের দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার দরকার, তাহলে আমাদের আরও ৬ মাস সময় লাগবে।’

শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে ‘মার্চ ফর ইউনিটি অ্যান্ড জাস্টিস’ শীর্ষক ছাত্র সমাবেশে অংশ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, একদলীয় সংবিধানে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে অসম্ভব।

তিনি বলেছেন, মুজিবীয় সংবিধান ছিঁড়ে ফেলে বহুদলীয় সংবিধান রচনা করতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণপরিষদ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে। যদিও বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল সংবিধানে হাত না দেওয়ার পক্ষে। একই অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, আমরা বাংলাদেশকে পুনর্গঠন করতে চাই। এর জন্য আমাদের প্রয়োজন সংস্কার। প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর গণপরিষদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এর বাইরে অন্যকিছু ভাবার সুযোগ নেই। 

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ৫ আগস্টের পক্ষে যারা ভূমিকা রেখেছেন তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি কাম্য নয়। ঐক্যে ফাটল ধরলে ফ্যাসিস্টরা সুবিধা নেবে বলেও মনে করেন তিনি। সম্প্রতি নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের একাধিক উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্বের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতের এই নেতা একথা বলেন। তিনি আরও বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন চাই। আমরা বলেছি যে, ২০২৫ সালের ভেতরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ছাত্ররা দল গঠন করবে, খুবই ভালো কথা। আমরা তারুণ্যের শক্তিকে স্বাগত জানাব। কিন্তু কিংস পার্টি গঠন হলে ছাত্রদের আদর্শটা থাকে না। এটা হবে খুবই অপ্রত্যাশিত। এতে পরিস্থিতি খুবই খারাপের দিকে যাবে এবং ক্ষতি হবে এই গণ-অভ্যুত্থানের। তিনি আরও বলেন, ছাত্ররা সরকারের ভেতরে থেকে যদি দল গঠন করে, তাহলে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠবে। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বোঝাপড়ায় যে ফাটল রয়েছে, সেটি দিন দিন আরও স্পষ্ট হচ্ছে। আর এতে করে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা। কেউ কেউ বলছেন, সরকারের সহযোগিতায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে বলে যে গুঞ্জন চলছে, সেই গুঞ্জন এই ফাটলকে আরও বড় করছে। বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আন্দোলনে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সম্প্র্রতি এক ধরনের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। সব মিলিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর এবং এক দলের সঙ্গে অন্য দলের পারস্পরিক অবিশ্বাস, সংশয়, সন্দেহ বাড়ছে। 

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম প্রধান শরিক দল বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক এ প্রসঙ্গে যুগান্তরকে বলেন, আমরা কোনোভাবেই চাইব না ছাত্রদের সঙ্গে, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বেড়ে যাক। কিন্তু দুঃখের বিষয়-সম্প্রতি ছাত্রদের মুখের ভাষা, শরীরের ভাষা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে দম্ভ ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ। তরুণদের কথাবার্তায় আরও প্রজ্ঞার পরিচয় প্রত্যাশা করে দেশের মানুষ। তিনি আরও বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার দরকার। সুতরাং অল্প ও বেশি সংস্কার নিয়ে আলোচনা করাটা অবান্তর। সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে আগামী ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব। এক্ষেত্রে নির্বাচন আয়োজনে যত কালক্ষেপণ করা হবে, পারস্পরিক সন্দেহ-অবিশ্বাস, দূরত্ব তৈরি হওয়াসহ নানা সমস্যা তত বাড়তেই থাকবে। 

এদিকে এক-এগারো নিয়েও আলোচনা চলছে হঠাৎ করেই। বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার মতে, তাদের টার্গেট করেই এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সামনে এসব আরও দেখা যাবে বলে মনে করেন তারা। বিএনপি নেতারা মনে করেন, হঠাৎ করেই এক-এগারোর প্রসঙ্গ টেনে এনে আরও সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়ানো হচ্ছে। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে এক-এগারোর ঘটনায় সবচেয়ে ক্ষতির শিকার বিএনপি। প্রতিটি নেতাকর্মী থেকে শুরু করে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পর্যন্ত এক-এগারোর নির্মম রোষানলে পড়েন।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করা উচিত অন্তর্বর্তী সরকারের। তিনি বলেন, আমরা এই সরকারের কাছ থেকে সব প্রত্যাশা করি না। এটি বিপ্লবী সরকার নয়, আবার নির্বাচিত সরকারও নয়। সুতরাং সব নয়, অল্প কিছু কাজ এ সরকারকে করে যেতে হবে। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে পারলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। 

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ব্যানারে গড়ে ওঠা কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষমেশ সরকার পতনের একদফার আপসহীন সংগ্রামে রূপ নেয়। মৃত্যু ভয়ে ভীত না হয়ে দেশের ছাত্র-জনতা, সাধারণ মানুষ পুলিশের বন্দুকের সামনে দাঁড়িয়ে যান।

রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষাথী আবু সাঈদের অকুতোভয় বিপ্লবী মৃত্যু ক্ষোভে-বিক্ষোভে সবাইকে রাজপথে এনে শামিল করে। একে একে শহিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ দেশের জন্য অকাতরে জীবন উৎসর্গ করেন। আহত হন হাজার হাজার। এরপর আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ছত্রিশে জুলাই (৫ আগস্ট)। জনতার বিজয়। গণমানুষের বিজয়। 

সফল গণ-অভ্যুত্থানের ২ দিন পর ছাত্র-জনতার আহ্বানে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ফ্রান্স থেকে দেশে ফিরে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল, কোটি কোটি মানুষের সমর্থন নিয়ে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। ৮ ফেব্রুয়ারি এ সরকারের ৬ মাস পূর্ণ হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
Toto Gacor
bacan4d
bacansport login
slot gacor
pasaran togel resmi
bacan4d
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
slotgacor
bacan4d rtp
bacan4d
bacan4d toto
Slot Casino
bacan4d toto
slot gacor
bacan4d
bacan4d
Slot Toto
bacan4d
bacan4d login
totoslotgacor
slot gacor
TOTO GACOR
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto slot
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
Slot Gacor
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
xx1toto
bacansport
bacan4d
toto slot
situs toto
slot gacor
Toto Slot
slot maxwin
slot demo
bacan4d toto slot
bacan4d toto slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d slot
bacansports
bacansports
bacansports
bacan4d slot
bacan4d slot
bacan4d
slot gacor
pasaran togel resmi
situs toto
bacan4d login
pasaran togel
pasaran togel
situs toto
bacan4d
bacan4d gacor
bacan4d slot
bacan4d rtp
bacan4d rtp
bacan4d slot gacor
toto slot
situs toto
bacan4d
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
toto gacor Toto Gacor bacan4d slot toto casino slot slot gacor bacantoto totogacorslot Toto gacor bacan4d login slotgacor bacan4d bacan4d toto Slot Gacor toto 4d bacan4d toto slot bacan4d slot gacor