USA

জয়ের পথে ভয়ের কাঁটা যেসব রণক্ষেত্র রাজ্য

যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি রাজ্য রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনে এগুলোর বেশির ভাগ ভোটার সাধারণত একই দলকে ভোট দেন– হয় ডেমোক্রেটিক অথবা রিপাবলিকান পার্টি। মাত্র কয়েকটি রাজ্য রয়েছে, যেখানে যে কোনো প্রার্থী জিততে পারেন। এগুলোকে রণক্ষেত্র বা দোদুল্যমান রাজ্য বলা হয়। এবারের নির্বাচনে এ রকম রাজ্য সাতটি। এগুলো আবার দুটি গ্রুপে বিভক্ত– ‘সান বেল্ট’ এবং ‘রাস্ট বেল্ট’।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মোট ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট রয়েছে এবং বিজয়ী প্রার্থীকে ২৭০টি বা তার বেশি ভোট পেতে হয়। দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে ৯৩টি ভোট রয়েছে। জয় পেতে হলে উভয় প্রার্থীকে এর মধ্যে অন্তত তিনটি রাজ্যে জিততে হবে।

পেনসিলভানিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিন রাস্ট বেল্টের অংশ। এ রাজ্যগুলো দেশটির উৎপাদন শিল্পের সাবেক কেন্দ্রস্থল। এই শিল্প ঐতিহ্যের রাজ্যগুলোর বেশির ভাগ ভোটার বহু বছর ধরে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দিয়ে আসছেন। ডেমোক্র্যাটরা গত আটটি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্যে সাতটিতে এসব রাজ্যে জয় পেয়েছেন। শুধু ২০১৬ সালে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এর প্রতিটিতে জয়লাভ করেন। এই তিনটি রাজ্যে জয় পেলেই কমলা হ্যারিস নির্বাচনে বিজয়ী হবেন। তবে ট্রাম্প এই তিনটি রাজ্যে জয়ী হলেও প্রেসিডেন্ট পদে বিজয়ী হওয়ার জন্য তাঁকে অন্য আরও অন্তত একটি রাজ্যে জয় পেতে হবে।

এসব রাজ্যে কমলার জয়ের চাবিকাঠি হলো শহর এবং এর আশপাশে ভোট পাওয়া নিশ্চিত করা। বিশেষ করে কৃষ্ণাঙ্গ, সংখ্যালঘু এবং কলেজ-শিক্ষিত ভোটারদের পাশাপাশি শহরতলির শ্বেতাঙ্গ নারীদের নির্বাচনের দিনে কেন্দ্রে উপস্থিত করতে হবে। এসব রাজ্যে ট্রাম্পের শক্তির জায়গা ঠিক উল্টো। তিনি ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই রাজ্যগুলোর গ্রামীণ এলাকায় বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেন।

ট্রাম্প আশা করছেন, তিনি এ বছর গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি ভোট পেতে পারেন। তাঁর প্রচার শিবির তরুণ পুরুষদের উদ্বুদ্ধ করার দিকে মনোনিবেশ করছে। তারা বড় সংখ্যায় কেন্দ্রে গেলে ট্রাম্পের জয় সহজ হতে পারে। 

পেনসিলভানিয়ায় দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে। এই সংখ্যা ১৯। কমলা হ্যারিস পেনসিলভানিয়া এবং রাস্ট বেল্ট গ্রুপ থেকে আরও একটিতে জয় পেলে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ছাড়িয়ে যাবেন।
 
পেনসিলভানিয়ার সঙ্গে কমলা সামগ্রিকভাবে মাত্র তিনটি দোদুল্যমান রাজ্যে জিতে ২৭০ ভোটের বাধা পার হতে পারেন। তবে নেভাদায় পর্যাপ্ত ইলেক্টোরাল কলেজ ভোট নেই। তাই পেনসিলভানিয়া এবং অন্য যে কোনো দুটি রাজ্যে তাঁর জয়ই যথেষ্ট হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের রাজ্যগুলোকে প্রায়ই সান বেল্ট হিসেবে উল্লেখ করা হয় এই কারণে, উত্তরের তুলনায় সেখানে উষ্ণ জলবায়ু রয়েছে।

এ নির্বাচনে দক্ষিণে চারটি দোদুল্যমান রাজ্য রয়েছে–অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাদা ও নর্থ ক্যারোলাইনা। রাস্ট বেল্টের মতোই কমলাকে প্রেসিডেন্ট হতে হলে এর চারটিতেই জয়ী হতে হবে। তবে এটি কমলার জয়ের জন্য একটি অসম্ভব পথ। কারণ, ১৯৪৮ সালে হ্যারি ট্রুম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ডেমোক্র্যাটরা এই চারটি রাজ্যে একই সঙ্গে কখনও জয়ী হননি।

ট্রাম্প সান বেল্টের সবগুলোতে জয়ী হলেও তাঁকে আরও একটি রাজ্যে জয় ছিনিয়ে নিতে হবে। তবে রিপাবলিকানদের এই রাজ্যগুলোতে জয়লাভের ইতিহাস রয়েছে। দলটির প্রার্থী নিক্সন, রিগান, বুশ এবং বুশ জুনিয়র প্রত্যেকে এক বা একাধিক নির্বাচনে এসব রাজ্যে জয়লাভ করেছিলেন।

মূলত দুটি গোষ্ঠী সান বেল্টের ফলাফল নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারে। তারা হলেন কৃষ্ণাঙ্গ এবং লাতিনো ভোটার। জর্জিয়া এবং উত্তর ক্যারোলাইনা উভয় রাজ্যেই যোগ্য ভোটারদের একটি বড় শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ। কমলা আশা করছেন, তিনিও জো বাইডেনের মতোই কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সমর্থন পাবেন। বাইডেন ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সব কৃষ্ণাঙ্গ ভোটের ৯২ শতাংশ জিতেছিলেন। তবে সাম্প্রতিক কিছু জরিপে মনে হচ্ছে, কমলা একই সংখ্যায় ভোট পেতে হিমশিম খাচ্ছেন। 

অ্যারিজোনা এবং নেভাদায় দ্রুত বর্ধনশীল লাতিনো জনসংখ্যা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাটরা ধরে নিয়েছেন, কোনো রাজ্যে লাতিনো ভোটারদের বৃদ্ধি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাদের জয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। 

ট্রাম্প গত দুটি নির্বাচনে নর্থ ক্যারোলাইনায় জয় ধরে রেখেছেন। এখানে জয় ধরে রাখতে ব্যর্থ হলে হোয়াইট হাউস জয় তাঁর জন্য আরও কঠিন হয়ে যাবে। এ অবস্থায় তাঁকে অন্তত দুটি রাস্ট বেল্ট এবং আরও দুটি সান বেল্টে জিততে হবে।

১৯৮০ সাল থেকে শুধু একবার নর্থ ক্যারোলাইনায় জয় পেয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী, ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট ওবামা জয়ী হন এখানে। তবে কমলা এখানকার কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ভোটদানে অনুপ্রাণিত করতে পারলে জয়ী হতে পারেন। 

পেনসিলভানিয়ায় ধাক্কা খেলেন ট্রাম্প
পেনসিলভানিয়ার কিছু ভোটারের মেইল ভোট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদের সশরীরে ভোট দেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। শুক্রবার এ রায় দেন আদালত। রিপাবলিকানরা এই ধরনের ভোট গণনা না করার আবেদন জানালেও আদালত তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা এতে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। আদালতের এ সিদ্ধান্ত হাজার হাজার মেইল-ইন ব্যালটকে প্রভাবিত করতে পারে। সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। 

পেনসিলভানিয়ায় উভয় প্রার্থীই ৪৮ শতাংশ সমর্থন নিয়ে সমানে সমান অবস্থানে রয়েছেন। পেনসিলভানিয়া এ নির্বাচনের প্রধান রণক্ষেত্র। পেনসিলভানিয়া ২০১৬ সালে জয় পান ট্রাম্প। তবে বাইডেন ২০২০ সালে বিজয়ী হন এখানে। 

এদিকে নির্বাচনের আর মাত্র দুই দিন বাকি। এ পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিস উভয়ই ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর জন্য দোদুল্যমান রাজ্যগুলো চষে বেড়িয়েছেন। গতকাল শনিবার তারা নর্থ ক্যারোলাইনা ও ভার্জিনিয়ায় ভাষণ দেন।
 
৭ কোটি আগাম ভোট

৫ নভেম্বর নির্বাচন হলেও এরই মধ্যে দেশটির ৭ কোটিরও বেশি মানুষ সশরীরে বা ডাকযোগে আগাম ভোট দিয়েছেন। এ নির্বাচনে ভোটার প্রায় সাড়ে ২৪ কোটি। 

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor