USA

জর্জ ক্লুনির কড়া সমালোচনার পর আরও কোণঠাসা বাইডেন

যুক্তরাষ্ট্রে আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের প্রার্থী থাকা না–থাকার বিতর্কে সবচেয়ে কড়া বয়ানটি কোনো রাজনীতিক কিংবা বিশ্লেষকদের পক্ষ থেকে নয়, বরং একজন চলচ্চিত্র তারকার পক্ষ থেকে এসেছে। আর তিনি হলেন হলিউড তারকা জর্জ ক্লুনি।

নিউইয়র্ক টাইমসে একটি কলামে বাইডেনের বিরুদ্ধে কড়া কথা বলেছেন জর্জ ক্লুনি। গত মাসে লস অ্যাঞ্জেলেসে দাতাদের সঙ্গে একটি আয়োজনে ছিলেন বাইডেন ও ক্লুনি। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে জর্জ ক্লুনি লিখেছেন, ‘সপ্তাহ তিনেক আগে যে জো বাইডেনকে আমি দেখেছি, তিনি ২০১০ সালে দেখা বাইডেন নন। এমনকি তিনি ২০২০ সালে দেখা বাইডেনও নন। বরং তিনি সেই ব্যক্তি, যাকে আমরা বিতর্কের মঞ্চে (ট্রাম্পের সঙ্গে) দেখেছি।’

শুধু জর্জ ক্লুনি একা নন, বরং নিজের দল ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চাপ ক্রমে বাড়ছে বাইডেনের ওপর। দলীয় আইনপ্রণেতা থেকে দাতা—অনেকেই বাইডেনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার চাইছেন।

গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় ভারমন্টের ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর পিটার ওয়েলচ প্রকাশ্যে বাইডেনের প্রার্থিতা থেকে সরে আসার দাবি তোলেন। সংবাদপত্রে লেখা এক কলামে তিনি বলেন, ‘এটা দেশের জন্য ভালো হবে।’ ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে পিটার প্রথম সিনেটর, যিনি প্রকাশ্যে বাইডেনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের দাবি তুললেন।

সপ্তাহ দু-এক আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন বাইডেন। বিতর্কে মোটেও ভালো করতে পারেননি তিনি। মূলত এর পর থেকেই প্রার্থিতা প্রত্যাহারে বাইডেনের ওপর চাপ ক্রমেই বাড়তে থাকে।

ওই বিতর্কের পর আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন বাইডেন। সামরিক জোট ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন শেষে ওয়াশিংটনে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি। বাইডেনের জন্য এই সংবাদ সম্মেলন বড় একটি অলিখিত পরীক্ষা হতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আগামী সোমবার এনবিসি নিউজের উপস্থাপক লেস্টার হল্টকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা রয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের। এর আগেই তাঁর বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য দেন জর্জ ক্লুনি। তিনি বাইডেনের দল ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম একজন তহবিল সংগ্রাহক।

জর্জ ক্লুনি

জর্জ ক্লুনিইনস্টাগ্রাম

আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারানোর সক্ষমতা বাইডেনের নেই—লস অ্যাঞ্জেলেসের ওই আয়োজনের সপ্তাহ তিনেক পর প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের কলামে এমনটাই মন্তব্য জর্জ ক্লুনির। তিনি লিখেন, বাইডেনের প্রচারণা দল দাবি করে, তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে ভোটারদের সবচেয়ে সেরা পছন্দ ছিলেন। এটাকে ‘অযৌক্তিক’ বলেন ক্লুনি।

জর্জ ক্লুনি লিখেছেন, বাইডেনের সক্ষমতা ও আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য ফল কেমন হতে পারে, এসব নিয়ে প্রভাবশালী ডেমোক্রেটিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। প্রায় সবাই বাইডেনের সক্ষমতা নিয়ে সংশয়ের কথা বলেছেন। যদিও অনেকেই প্রকাশ্যে এটা নিয়ে কথা বলতে নারাজ। অনেকে বলছেন।

‘আমরা বালিতে মুখ গুজে রাখতে পারি। আর নভেম্বরে অলৌকিক কিছু ঘটার জন্য প্রার্থনা করতে পারি। কিংবা আমরা প্রকাশ্যে সত্য উচ্চারণ করতে পারি।’—এমনটাই মন্তব্য করেন জর্জ ক্লুনি।

উইসকনসিনের ম্যাডিসনে একটি নির্বাচনী সমাবেশে জো বাইডেনকে প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার দাবি নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে এক ডেমোক্র্যাট সমর্থক

উইসকনসিনের ম্যাডিসনে একটি নির্বাচনী সমাবেশে জো বাইডেনকে প্রার্থিতা থেকে সরে যাওয়ার দাবি নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে এক ডেমোক্র্যাট সমর্থক

বাইডেনের প্রচারণা কর্মকর্তারা বলছেন, গাজা ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসনের নীতি নিয়ে হলিউড তারকা জর্জ ক্লুনি ও তাঁর স্ত্রী প্রখ্যাত মানবাধিকার আইনজীবী আমাল ক্লুনির মতামতের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের তীব্র দ্বিমত রয়েছে।

ক্লুনি শুধু একজন হলিউড তারকাই নন, বছরের পর বছর ধরে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির শীর্ষ তহবিল সংগ্রাহকদের একজন। বিশেষ করে হলিউড–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছ থেকে দলের জন্য তহবিল সংগ্রহ করেন তিনি। আর দলীয় তহবিলের বেশ বড় একটি অংশ আসে হলিউড থেকে। তাই এখন ক্লুনির এমন অবস্থান বাইডেনের জন্য বড় হুমকি।  

বাইডেনের প্রার্থী থাকা না–থাকা নিয়ে এখনকার অনিশ্চিত পরিস্থিতির সমালোচনা করেছেন নেটফ্লিক্সের চেয়ারম্যান রিড হেস্টিংস ও আইএসির চেয়ারম্যান বেরি ডিলারের মতো ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম বড় দাতারা। ক্লুনির কলাম প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাইডেনকে আবারও খোঁচা দিয়ে পোস্ট করেছেন ট্রাম্প।

এ পরিস্থিতিতে বাইডেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন ন্যান্সি পেলোসি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী নেতা। বাইডেনের সমালোচনাকারীদের ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনারা মুখ বন্ধ রাখুন।’ একই সঙ্গে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুরুত্বের কথা বাইডেনকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তিনি।

ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের রানিংমেট ছিলেন। তিনি গতকাল বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দেশপ্রেমিকের মতোই কাজ করবেন বাইডেন।’

মার্কিন কংগ্রেসের প্রগতিশীল ককাসের চেয়ার আইনপ্রণেতা প্রমীলা জয়পাল স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, যতক্ষণ ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে বাইডেনের প্রার্থিতা তুলে নেওয়া না হচ্ছে, ততক্ষণ তিনি বাইডেনের পাশেই আছেন।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের কৌশল নিয়ে জর্জ ক্লুনি তাঁর মতামতে লিখেছেন, এখন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটারদের আবারও এগিয়ে আসতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নতুন একজন প্রার্থীকে বেছে নিতে হবে। তবে আসছে নভেম্বরের নির্বাচনের আগে এত অল্প সময়ের মধ্যে সেটা কীভাবে সম্ভব—সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু লিখেননি ক্লুনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button