জাতিসঙ্ঘে বড় সংস্কার সুপারিশ : একীভূত হতে পারে একাধিক সংস্থা

‘বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন এবং বিদেশী সাহায্যের বাজেট হ্রাসের কারণে জাতিসঙ্ঘের কার্যকারিতা ও বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।’
জাতিসঙ্ঘের একটি বিশেষ টাস্কফোর্স সংস্থাটির আর্থিক সংঙ্কট ও অকার্যকারিতা মোকাবেলায় বড় ধরনের কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে। প্রস্তাবিত সংস্কারের মধ্যে রয়েছে জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন সংস্থা ও দফতরকে একীভূত করা, বাজেট সাশ্রয় এবং কাজে গতি আনা ও সমন্বয় বাড়ানো।
নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদরদফতর থেকে এএফপি জানায়, এ বছরের মার্চ মাসে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘জাতিসঙ্ঘ ৮০’ নামের একটি উদ্যোগ শুরু করেন। উদ্দেশ্য ছিল জাতিসঙ্ঘের দীর্ঘস্থায়ী আর্থিক সঙ্কট সমাধান এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা বাড়ানো।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে আন্তর্জাতিক সহায়তা তহবিলে ব্যাপক কাটছাঁট এবং সম্প্রতি বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ একাধিক সংস্থার বাজেট সংকোচনের কারণে এই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়েছে।
বিস্তৃত কাঠামো, দ্বৈততা ও অকার্যকারিতা
টাস্কফোর্সের ছয় পৃষ্ঠার অভ্যন্তরীণ স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘গত কয়েক দশকে সংস্থার বিভিন্ন তহবিল, কর্মসূচি ও সংস্থার ধাপে ধাপে বিস্তার জাতিসঙ্ঘে একটি খণ্ডিত উন্নয়ন ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এর ফলে অনেক দায়িত্বে দ্বৈততা, সম্পদের অপচয় এবং সেবার অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে।’
এছাড়া জাতিসঙ্ঘের কিছু কাজের পদ্ধতি এখন পুরোনো হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সংখ্যা অতিরিক্ত হওয়ায় বাজেট চাপ আরো বেড়েছে।
স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়, ‘বিশ্ব রাজনীতির পরিবর্তন এবং বিদেশী সাহায্যের বাজেট হ্রাসের কারণে জাতিসঙ্ঘের কার্যকারিতা ও বৈধতা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।’
এই প্রেক্ষাপটে একটি ‘সুশৃঙ্খল, কার্যকর এবং আর্থিকভাবে দায়িত্বশীল’ জাতিসঙ্ঘ গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে টাস্কফোর্স।
একীভূতকরণের সুপারিশ
টাস্কফোর্সের প্রস্তাব অনুযায়ী, জাতিসঙ্ঘের বেশ কয়েকটি বিভাগ ও সংস্থাকে একত্র করে সমন্বিত কাঠামো গঠনের আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবিত কিছু একীভূতকরণ নিচে তুলে ধরা হলো-
রাজনৈতিক ও শান্তি নির্মাণ সংক্রান্ত বিভাগ এবং শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বিভাগ : এই দুটি বিভাগকে একীভূত করে শান্তি ও রাজনীতি বিষয়ক একটি অভিন্ন বিভাগ গঠনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
মানবিক সহায়তা সমন্বয় দফতর, শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা- এই তিনটি সংস্থাকে একীভূত করে একটি একক মানবিক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব এসেছে।
জাতিসঙ্ঘ জলবায়ু সংস্থা এবং জাতিসঙ্ঘ পরিবেশ কর্মসূচি- এ দুটি সংস্থাকে একীভূত করে একটি শক্তিশালী পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক সংস্থা গঠনের কথা বলা হয়েছে।
জাতিসঙ্ঘ জনসংখ্যা তহবিল (যা মূলত মাতৃত্ব ও শিশুস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করে) ও জাতিসঙ্ঘ নারী সংস্থা- এই দুটি সংস্থাকেও একীভূত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
বাস্তবায়নে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
আন্তর্জাতিক সঙ্কট বিষয়ক সংস্থা আন্তর্জাতিক সঙ্কট গ্রুপুএর বিশ্লেষক রিচার্ড গাওয়ান মন্তব্য করেছেন, ‘স্মারকলিপিটি বাস্তব অর্থেই বেশ র্যাডিকাল বা সাহসী। তবে এই ধরনের বড় সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদসহ বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন লাগবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন স্বার্থ জড়িত। ফলে এই সংস্কার প্রক্রিয়াটি জটিল ও বিতর্কিত হয়ে উঠতে পারে।’