Bangladesh

জাতীয় পার্টি অফিসে দিনভর নাটকীয়তা

কয়েকদিন ধরেই আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছিল আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে। শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় দেন-দরবার চলে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন রোববারও দিনভর হয়েছে নানা নাটকীয়তা। দীর্ঘ ২৬ দিন পর দলীয় কার্যালয়ে যান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তবে তিনি কথা বলেননি গণমাধ্যমের সঙ্গে। সকালে কার্যালয়ে প্রবেশের সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শুধু বলেছিলেন ‘ভিক্ষার সিট আমি চাই না’। এরপর দিনটি ছিল ঘটনাবহুল। জিএম কাদের কার্যালয়ে অবস্থান করার সময় সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংখ্যক সদস্য উপস্থিত ছিলো। উপস্থিতি ছিলো বিশেষ ব্যক্তিদেরও। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কি যাবে না- তা জানতে সকাল থেকে সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন অনেক নেতাকর্মী।

তারা সময়ে সময়ে বিক্ষোভও করেন। স্লোগান দেন। কেউ কেউ নির্বাচনে না যেতে স্লোগান দেন। নেতাকর্মীদের এমন বিক্ষোভ চলার মধ্যে বেলা একটার পর দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সংবাদ সম্মেলনে এসে জানান, জাপা নির্বাচনে যাবে কিনা তা বিকালে জানানো হবে। তার এই বক্তব্য দেয়ার পর নেতাকর্মীদের মাঝে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা নতুন করে স্লোগান দিতে থাকেন, ‘জিএম কাদেরের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘নির্বাচন না বর্জন, বর্জন বর্জন’। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মুজিবুল হক চুন্নু আবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন। নানামুখী চাপের গুঞ্জনের মধ্যেই ঘোষণা দেয়া হয় নির্বাচনে থাকার।

জাতীয় পার্টি অন্তত ৪০টি আসনের ছাড় দেয়ার দাবি করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৬টি আসনে ছাড় পেয়েছে। ঢাকার দুটি আসনে ছাড় চেয়েছিল জাতীয় পার্টি; ঢাকা ৪ ও ৬। এই দুই আসনে ছাড় না পেলেও ঢাকা-১৮ আসনটি আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিয়েছে। এ আসনে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের নির্বাচন করছেন। তবে, জাপা চেয়ারম্যানের স্ত্রীর মনোয়ন নিয়েও চলছে দলে নানা আলোচনা সমালোচনা।

ঢাকা-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাড় না পাওয়ায় তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ছাড় না পেলেও তিনি নির্বাচনে আছেন। 

ঢাকা-১৭ আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন চেয়ারম্যান জিএম কাদের। সমঝোতা হওয়া রংপুর-৩ আসন থেকে তিনি নির্বাচন করবেন। সমঝোতায় মন খারাপ হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য সালমা ইসলামেরও। 

জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা আসন সমঝোতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অস্বস্তিতে ছিলেন। এনিয়ে শনিবার গভীর রাত পর্যন্ত চলে আলাপ-আলোচনা। গুলশানে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদের বাড়িতে শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন। এমনকি সম্মানজনক আসন সমঝোতা না হলে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের চিঠিও প্রস্তুত করে রাখেন তারা। একাধিকবার জাপা মহাসচিব ফোনে লাউড স্পিকারে কথা বলেন ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি রাতেই সমঝোতার কথা বলেন। সমঝোতা হবে এমন আসনে নৌকা প্রত্যাহারের দাবি জানান। 

রোববার সকাল থেকেই নেতাকর্মীদের ভিড় ছিল  দলটির বনানীস্থ চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে। সকাল থেকেই বিক্ষোভ করছিলেন নেতাকর্মীরা। স্লোগান দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা শুনেছি চাপের মুখে নির্বাচনে যেতে রাজি করানো হবে চেয়ারম্যানকে। আমরা জিএম কাদেরকে নেতা হিসেবে মানি। আমরা চাই তিনি কোনো চাপের কাছে নিজেকে সমর্পণ করবেন না।

বেলা ১১টার দিকে কার্যালয়ে আসেন মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, সালমা ইসলাম ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এর পরপর আসেন জিএম কাদের। তিনি আসার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় লেগে যায় কার্যালয়জুড়ে। কার্যালয়ে প্রবেশ করতে করতে জিএম কাদের গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভিক্ষার সিট আমি চাই না’। পূর্বে কিছু সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিত থাকলেও জিএম কাদের আসার পর এই সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। জিএম কাদেরের পর দলের একে একে আসতে থাকেন অন্য শীর্ষ নেতারা। 

নেতাদের নিয়ে পার্টি অফিসের নিজ কক্ষে যান জিএম কাদের। সেখানে গণমাধ্যমকর্মী কিংবা সব নেতাকর্মীদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। বেলা ১টার দিকে প্রথম দফায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন চুন্নু। তিনি তখন বলেন, জাতীয় পার্টির নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিকালে জানানো হবে। ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন করার জন্য আমরা আসছি। আমরা নির্বাচনী পরিবেশ-পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করছিলাম। আজ (গতকাল রোববার) এবং আগামীকাল (আজ সোমবার) এই দুইটা দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই নির্বাচনটা আমরা করবো না কি করবো না তা পরিষ্কার হওয়া দরকার। আমাদের চেয়ারম্যান পার্টি অফিসে আছেন তিনি সিনিয়র নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আমাদের আরও একটু আলোচনা করা দরকার। বিকালে আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে দেবো।

এসময় আসন সমঝোতার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান তিনি। কার্যালয়ের বাইরে পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা ক্রমে বাড়তে থাকে। তারা পার্টি অফিসের ফটকে ও রাস্তার দু’পাশে অবস্থান নেন। 
এসময় মৌলভীবাজার-১ আসনের প্রার্থী আহমদ রিয়াজ বেশ শোরগোল শুরু করেন। তিনি বলেন, ২৬ জনকে সংসদে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা রাজনীতি করি না। জাতীয় পার্টি এখন পরের উপর চেয়ে থাকে। ২৬ জনই সমঝোতার নির্বাচনে অংশ নেন, আমরা বাকি সবাই নির্বাচন থেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবো। 

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে ফের সংবাদ সম্মেলনে আসেন মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, জাতীয় পার্টি ২৮৩টি আসনে ভোটে অংশ নেবে। নির্বাচন ভালো হবে- এই আস্থা আমরা পেয়েছি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের নির্দেশে পার্টি সকল নেতাকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য চিঠি দিচ্ছে। তবে কিছু কিছু আসনে সিনিয়র নেতারা নির্বাচন করছেন তাদের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না কোনো চাপ নেই। সরকার যদি চাপ দিতো তাহলে অনেককেই নির্বাচনে আনা সম্ভব হতো।

নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পরপরই মঞ্চের পাশেই বিরোধিতা করেন যশোর-৫ আসন থেকে লাঙ্গল পাওয়া এমএ হালিম। তিনি বলেন, আমরা জাতির কাছে কী বলবো? আমরা আজ যদি নির্বাচন থেকে সরে আসতাম তাহলে জাতির জন্য ভালো হতো। আমরা কিং হয়ে থাকতাম। সামান্য কিছু আসনের জন্য জাতীয় পার্টিকে বিপদে ফেললেন, দেশকে বিপদে ফেললেন। 

নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর পার্টি অফিসের সামনে থাকা নেতাকর্মীরা অনেকটা নীরব হয়ে যান। জাতীয় পার্টি নীলফামারী-১ আসন থেকে নির্বাচন করছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তসলিম হোসেন। তিনি বলেন, এখন আমাদের ভোটের মাঠেই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। আমি চাই- সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই আসন থেকে জাতীয় পার্টি জয়ী হয়ে আসবে। এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই নানা দুর্নীতি চলে আসছে। এই দুর্নীতিমুক্ত এলাকা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ভোট চাইবো আমি।

আসন সমঝোতায় বাদ পড়া সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, আমার এলাকা একটি নির্বাচনের মাঠ। আমি এই এলাকার সংসদ সদস্য, এই এলাকার মানুষের জন্য কাজ করেছি। তারা আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। তিনি বলেন, সোমবার বিকাল ৩টায় শ্যামপুর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবো। নির্বাচনের মাঠে আমি থাকবো।

জাতীয় পার্টিকে যেসব আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছাড় দেয়া হয়েছে সেই আসন এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা হলেন- ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ, নীলফামারী-৩ রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আহসান আদেলুর রহমান, রংপুর-১ হোসেন মকবুল শাহরিয়ার, রংপুর-৩ জিএম কাদের, কুড়িগ্রাম-১ একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-২ শামীম হায়দার পাটোয়ারী, গাইবান্ধা-২ মো. আব্দুর রশিদ সরকার, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার, সাতক্ষীরা-২ মো. আশরাফুজ্জামান, পটুয়াখালী-১ এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, রবিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপু, পিরোজপুর-৩ মো. মাশরেকুল আজম (রবি), ময়মনসিংহ-৮ সালাহ উদ্দিন (মুক্তি), ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ মো. মজিবুল হক চুন্নু, মানিকগঞ্জ-১ মোহা. জহিরুল আলম রুবেল, ঢাকা-১৮ শেরীফা কাদের, হবিগঞ্জ-১ মোহাম্মদ আব্দুল মুনিম চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ রেজাউল করিম, ফেনী-৩ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৮ সোলায়মান আলম শেঠকে ছাড় দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর বাইরে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে কে এম এম নাসিম ওসমান জাতীয় পার্টির হয়ে ভোট করবেন। সেখানে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d