Hot

জাতীয় সংসদ ভোটের পর পুলিশে পদকের মচ্ছব

২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নমিনেশন ফরম বিক্রি-জমার কার্যক্রম চলছিল। দলটির নেতাকর্মী মিছিল, ব্যান্ড পার্টি ও ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় ভিড় করেছিল। এ সময় পুলিশ রাস্তা চালু করার নামে লাঠিপেটা, টিয়ার গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করে। মুহূর্তেই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। মনোনয়ন উৎসব রূপ নেয় সংঘাতে। ঘটনাস্থল থেকে ৫৯ জনকে আটক করা হয়।

এ ঘটনার জন্য ওই বছর পুলিশের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’ পান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের তৎকালীন উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। পদকপ্রাপ্তির প্রকাশনাতেই কারণ হিসেবে এর উল্লেখ করা হয়েছে।

শুধু আনোয়ার নন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওই বছরে এমন কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ পদক পেয়েছেন অনেকেই। মোট পদক দেওয়া হয় ৩৪৯ জনকে। এত বেশি সংখ্যক পুলিশ পদক ওই বছর ছিল ইতিহাসে সর্বোচ্চ। 

২০১৮ সালের নির্বাচনটি ‘রাতের ভোট’ হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত। সম্প্রতি নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে ওই নির্বাচনের রিটার্নিং ও সহকারী কর্মকর্তারা অনিয়মের জন্য পুলিশকে দায়ী করেন। পুলিশের দায়িত্বশীল সূত্রগুলোও বলছে, মূলত রাতের ভোটের কারিগর হিসেবে ওই সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের এত বেশি পদক দেওয়া হয়।
পদক তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরের বছরই (২০১৯) পুলিশ পদকের সংখ্যা নেমে আসে এক-তৃতীয়াংশে ১১৮ জন। এর পরের তিন বছরও চিত্র একই রকম; ২০২০, ২০২১ ও ২০২২ সালে পুলিশ পদক পান ১১৫ জন করে। পরের বছরের পদক দেওয়া হয় ২০২৪ সালে। পদক পান ৪০০ জন। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে এই সংখ্যা সর্বোচ্চ। ওই বছরের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। দেশে-বিদেশে তা ডামি নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি পায়।

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, বেশির ভাগ কর্মকর্তা নির্বাচনে বিশেষ ভূমিকা রাখার পুরস্কার হিসেবে এই পদক পেয়েছেন। নির্বাচনের আগে-পরে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে দমনপীড়নের স্বীকৃতি ছিল ওই পদক। 

পদক পাওয়া ওই কর্মকর্তাদের মধ্যে কয়েকজনকে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। কেউ কেউ দেশ ছেড়েছেন। কয়েকজন গ্রেপ্তারের পর কারাগারে রয়েছেন। একটি বড় অংশ এখনও পুলিশে রয়েছে।

পুলিশ সদস্যদের বীরত্ব, সাহসিকতা, সেবাসহ পেশাদারিত্ব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রতিবছর বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) দেওয়া হয়। বিপিএমের জন্য প্রত্যেক পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তা এককালীন হিসেবে পান এক লাখ টাকা এবং বিপিএম-সেবার জন্য পান ৭৫ হাজার টাকা। পিপিএমের জন্য পান এককালীন ৭৫ হাজার এবং পিপিএম-সেবার জন্য ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া বিপিএম ও বিপিএম-সেবার জন্য প্রতি মাসে দেড় হাজার এবং পিপিএম ও পিপিএম-সেবার জন্য মাসে এক হাজার টাকা করে ভাতা পান। পুলিশ সদস্যদের কাছে এই পদক অত্যন্ত সম্মানজনক ও মর্যাদাকর হিসেবে বিবেচিত।

গত ১০ বছরের পুলিশ পদকের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরে পুলিশ পদকের হিড়িক পড়ে যায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের বছরে ৩৪৯ জনকে বিপিএম-পিপিএম দেওয়া হয়েছিল। দেশের ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি), সব রেঞ্জ ডিআইজিসহ ইউনিটপ্রধানরা পদক পেয়েছিলেন। এর আগে ৬৪ জেলার এসপিসহ সব ইউনিটপ্রধানের একসঙ্গে পদক পাওয়ার নজির নেই।

গত ১৬ বছর নানাভাবে বঞ্চিত ছিলেন– এমন একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ভোট ডাকাতির পুরস্কার হিসেবে সে সময় দায়িত্ব পালন করা ৬৪ জেলার এসপি, সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, সব রেঞ্জ ডিআইজিসহ সব ইউনিটপ্রধানকে পুলিশ পদক দেওয়া হয়। 

বছরের হিসাব গড়াল সাড়ে ১৩ মাসে
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ২০২৪ সালের পুলিশ সপ্তাহে সর্বোচ্চ সংখ্যক কর্মকর্তাকে বিপিএম, পিপিএম দেওয়া হয়েছিল। ৪০০ কর্মকর্তা-সদস্য এই পদক পান। সাধারণত এক বছরের (১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর) কার্যক্রম বিবেচনায় বিপিএম-পিপিএম দেওয়া হলেও ২০২৩ সালে ব্যতিক্রম করা হয়। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত (১৩ মাস ১০ দিন) কার্যক্রম বিবেচনায় নিয়ে পদক দেওয়া হয়। যদিও ২০২২ সালের পদকের মধ্যেও ডিসেম্বরের কার্যক্রম যুক্ত ছিল। 

তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির গণসমাবেশ হওয়ার কথা ছিল। ৭ ডিসেম্বর নেতাকর্মী জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাসের শেল, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে নেতাকর্মীর ওপর। ওই কার্যক্রমে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের কয়েকজন পদকবঞ্চিত ছিলেন। তাদের পদক দিতে ব্যতিক্রম ঘটিয়ে পরের বছরের সঙ্গে ওই মাসটি যুক্ত করা হয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়া ২০২৪ সালের ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় যুক্ত করা হয়েছিল দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আগে-পরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ও আন্দোলন মোকাবিলা করা কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করতে। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

পদক প্রকাশনা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিরোধী দল ও নেতাকর্মীর দমনপীড়ন, দ্বাদশ নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাসহ নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশ পদক পেয়েছেন অন্তত ৫৭ কর্মকর্তা।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ সপ্তাহে সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৩ সালের পদক পরিয়ে দেন। পদক পান ৪০০ কর্মকর্তা। এর মধ্যে বিপিএম ৩৫ জন, বিপিএম-সেবা ৯৫, পিপিএম ৬০ ও পিপিএম-সেবা ২১০ জন। 

নথিপত্রে দেখা যায়, ২০২২ সালে পদক পেয়েছিলেন ১১৫ কর্মকর্তা। ২০২১ সালে ১১৫ জন, ২০২০ সালে ১১৫ ও ২০১৯ সালে ১১৮ জন। ২০১৮ সালে পুলিশ পদক পান ৩৪৯ কর্মকর্তা-সদস্য। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ২০১৯ সালের পুলিশ সপ্তাহে কর্মকর্তাদের এই পদক পরিয়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ৬৪ এসপির মধ্যে বিপিএম-সেবা পান ২৪ জন, ৩৯ জন পিপিএম-সেবা এবং একজন বিপিএম। এর আগে ২০১৭ সালে পদক পান ১৮২ জন, ২০১৬ সালে ১৩২, ২০১৫ সালে ১০২ এবং ২০১৪ সালে ৮৬ জন।

২০১৮ সালে পদক পাওয়া ৬৪ এসপির মধ্যে অন্তত ৩০ জন ২০তম বিসিএসের। অন্যরা ২১, ২২ ও ২৪ বিসিএসের। ২০১৮ সালের পর তাদের পদোন্নতিতে আর বাধা পেতে হয়নি। ২০তম বিসিএস কর্মকর্তার বেশির ভাগই পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি হন। ২১, ২২ ও ২৪ ব্যাচের কেউ কেউ হয়েছেন অ্যাডিশনাল ডিআইজি। তাদের বেশির ভাগই ৫ আগস্টের আগে পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তাদের কাউকে বদলি এবং কাউকে রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। দু’জন ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম ও হারুন অর রশীদ আত্মগোপনে রয়েছেন।

‘দেশবিরোধী নৈরাজ্য’ ঠেকিয়ে আশরাফের বিপিএম
ডিএমপির রমনা বিভাগের তৎকালীন উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন ২০২৩ সালে বিপিএম পান। তাঁর বিষয়ে পুলিশ পদক-সংক্রান্ত প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, দেশবিরোধী নৈরাজ্যজনক কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়। মহাসমাবেশের একটি অংশ প্রধান বিচারপতির বাসভবনের কাছে চলে আসে। আন্দোলনকারীরা শান্তিনগর, মালিবাগসহ আশপাশে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ করে। এ অবস্থায় আশরাফ হোসেনের প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব ও নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে (বিএনপি নেতাকর্মী) লাঠিচার্জ, শটগান ফায়ার, সাউন্ড গ্রেনেড, স্মোক গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস প্রয়োগ করে এলাকা পরিষ্কার করেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ পুলিশ পদকে ভূষিত হন আশরাফ হোসেন।

রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলায় ভূমিকা রেখে পদক
২০২৩ সালের পদকপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ডিএমপির ৭৩ জন ছিলেন। ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের আট কর্মকর্তা পদক পান। এই বিভাগের সে সময়ের উপকমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবিলায় সাহসী ভূমিকা রাখায় বিপিএম পদক পান বলে প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়।

পদক-সংক্রান্ত প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়, এক বছরে (২০২৩) ভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় ৩০০টি বড় ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি অসংখ্য কর্মসূচি পালিত হয় মতিঝিল বিভাগে। হায়াতুলের নেতৃত্বে এসব কর্মসূচিতে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে সহায়তা করে।

খিলগাঁও জোনের তৎকালীন অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার রাশেদুল ইসলামের পিপিএম-সেবা পদক পাওয়ার বিষয়ে প্রকাশনায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর একটি রাজনৈতিক দলের (বিএনপি) মহাসমাবেশ উপলক্ষে ৭ ডিসেম্বর ওই দলের পার্টি অফিসের সামনে নেতাকর্মী জড়ো হন। তাদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করলে পুলিশের ওপর হামলা করে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় নেতাকর্মীকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিরোধীদের শক্ত হাতে দমন
তৎকালীন পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন বিপিএম (সেবা) পদকে ভূষিত হন ২০২৩ সালে। পদকপ্রাপ্তির কারণ হিসেবে প্রকাশনায় বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন বাধাগ্রস্ত করতে স্বার্থান্বেষী মহল প্রচেষ্টা চালায়। তাঁর নেতৃত্বে রংপুর রেঞ্জ পুলিশ এই প্রচেষ্টা বানচাল করে দেয়। নির্বাচনী তপশিল ঘোষণার আগে ও পরে অগ্নিসন্ত্রাস সৃষ্টিকারী ও নাশকতাকারীদের সব পরিকল্পনা শক্ত হাতে দমন করা হয়। ফলে গণতন্ত্রবিরোধী গোষ্ঠী রাজপথসহ কোথাও উল্লেখযোগ্য নাশকতার ঘটনা ঘটাতে পারেনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় কাজী শফিকুল ইসলাম গাজীপুরের এসপি ছিলেন। নির্বাচনের পর তিনিও বিপিএম পেয়েছেন। তাঁর পদক পাওয়া সম্পর্কে প্রকাশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা ও বর্তমান সরকারের (ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার) উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নির্বাচনের আগে থেকেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে একটি স্বার্থান্বেষী মহল নির্বাচনকে ভন্ডুল করে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অংশ হিসেবে গাজীপুর জেলায় নাশকতা চালায়। তাঁর (এসপি শফিকুল) নেতৃত্বে নির্বাচন প্রতিহতকারী ২৫৬ দুষ্কৃতকারী গ্রেপ্তার এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়।

এখন কারা কোথায়
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর তাদের কাউকে গুরুত্বহীন জায়গায় বদলি এবং কাউকে বিভিন্ন রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়। নির্বাচনের পর পদক পাওয়া কর্মকর্তার মধ্যে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমানকে রেলওয়ে পুলিশ সংযুক্ত; বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি ইলিয়াছ শরীফকে অ্যান্টিটেররিজম ইউনিটে সংযুক্ত; ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেনকে ট্যুরিস্ট পুলিশে সংযুক্ত; বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনার জিহাদুল কবির ও সিলেট মহানগর কমিশনার জাকির হোসেন খানকে পিবিআইয়ে এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নুরে আলম মিনা, খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মঈনুল হক ও চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলামকে সারদা পুলিশ একাডেমিতে সংযুক্ত করা হয়। সম্প্রতি সাইফুল ইসলাম গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ছাড়া ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার এ বি এম মাসুদ হোসেনকে সারদায় বদলি ও যুগ্ম পুলিশ কমিশনার মো. শহীদুল্লাহকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়, অ্যাডিশনাল ডিআইজি আলমগীর কবিরকে পুলিশ সদরদপ্তর থেকে সারদায় বদলি করা হয়। শহীদুল্লাহ সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি টুটুল চক্রবর্তীকে খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় ও বরিশাল মহানগর পুলিশের উপকমিশনার এস এম তানভীর আরাফাতকে সিলেট রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। 

কে কী বলেন
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ২০১৮ সালে এসপির দায়িত্ব পালন করা ১২ জনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে সমকাল। চারজনের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। আটজনের মধ্যে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। লক্ষ্মীপুরের সাবেক এসপি আ স ম মাহাতাব উদ্দিন বলেন, ‘ভোটের বিষয় রিটার্নিং কর্মকর্তা কথা বলবেন। পুলিশ তো আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখেছে। পুলিশের বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ, সেটি জানি না।’

ফরিদপুরের সাবেক এসপি জাকির হোসেন খান বলেন, ‘এখন বাসের ভেতরে। এসব বিষয়ে কথা বলতে পারব না।’ তিনি বর্তমানে পিবিআইয়ে সংযুক্ত।
বাগেরহাটের সাবেক এসপি পংকজ চন্দ্র রায় সমকালকে বলেন, ‘সবার সঙ্গে সমন্বয় করে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি। আমাদের বিরুদ্ধে কে কোথায় কী অভিযোগ করেছে, জানি না।’ তিনি বর্তমানে রেলওয়ে পুলিশের অ্যাডিশনাল ডিআইজি।

প্রত্যাহারের উদ্যোগ
২০১৮ সালে বিতর্কিত নির্বাচনের বছরে পুলিশের ১০৩ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দেওয়া বিপিএম-পিপিএম প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সক্রিয় দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশের ১০৩ পদস্থ কর্মকর্তাকে ঢালাওভাবে পদক দিয়ে রাষ্ট্রীয় পদকের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

পুলিশ স্টাফ কলেজের অ্যাডিশনাল ডিআইজি আবদুর রাজ্জাক গত ৮ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। তিনি লিখেছেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রায় পুরোটাই জেলার ডিসি, পুলিশ সুপার, নির্বাচন অফিসার, অন্যান্য শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টায় নির্ধারিত দিনের আগেই সম্পন্ন হয়েছিল।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘নগদ অর্থের পুরস্কার স্বৈরাচারের কোষাগার থেকে মেটানো হলেও পুরস্কারপ্রাপ্তদের প্রতি মাসে আজীবন ভাতা দেওয়ার বিধান রয়েছে। দিনের পর দিন জনগণের কষ্টার্জিত অর্থে ভাতা পেতে থাকবেন, তা কীভাবে হয়? নির্বাচনী পদক ও খেতাবগুলো বাতিল করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে আবদুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন, ‘পদক-সংক্রান্ত বিষয়ে ফেসবুকেই তো স্ট্যাটাস দিয়েছি।’

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, দুই পর্যায়ে নির্বাচনের পর পুলিশের যে পদক দেওয়া হয়েছিল, সেটি বিতর্কিত ছিল। এটি বোঝাই গিয়েছিল পুলিশের যারা নির্বাচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে কর্তৃত্ববাদী সরকারের ক্ষমতা নিশ্চিত করার জন্য, তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন গবেষণায়ও প্রতীয়মান হয়েছে, নেতিবাচক দিক থেকে পুলিশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতায় অব্যাহত রাখার জন্য ভূমিকা রেখেছে। 

পদক বাতিলের বিষয়ে সম্প্রতি যে প্রশ্ন উঠেছে সেটি যৌক্তিক উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাতিল যেন ঢালাওভাবে না হয়। কোনো নিরপরাধ কর্মকর্তাকে যেন পদক থেকে বঞ্চিত করা না হয়।

সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা সমকালকে বলেন, যদি ভালো কাজ করা হয়ে থাকে, তাহলে পদক পেতেই পারে। তাই সংখ্যা বাড়ার ক্ষেত্রে আমি কোনো অস্বাভাবিকতা দেখি না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পদক দেওয়ার যে কারণ বলা হচ্ছে, সেগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। যেমন কাউকে অন্যায্য সুবিধা দেওয়া হয়েছে কিনা বা পুলিশ বাহিনী সরকারের দলীয় বাহিনীর মতো কাজ করেছে কিনা, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে আইনানুগভাবে কাজ করেছে কিনা– এসব। আইন অনুযায়ী কাজ করে থাকলে ঠিক আছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d