Bangladesh

জাপার অজনপ্রিয় প্রার্থীদের আসন ছাড়ে নারাজ আ. লীগ

জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতার আলোচনা চললেও দলটির বেশির ভাগ প্রার্থীর বিষয়ে আওয়ামী লীগের মনোভাব ইতিবাচক নয়। এসব প্রার্থীর বেশির ভাগেরই নির্বাচনী আসনে জনসমর্থন প্রায় শূন্যের কোঠায়, সাংগঠনিক অবস্থাও দুর্বল। এমন প্রার্থী আছেন, যাঁদের পক্ষে ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত কর্মীও নেই।

অজনপ্রিয় প্রার্থীদের আসন ছাড়ে রাজি নয় আ. লীগ

জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এই বিষয়টি আলোচনায় গুরুত্ব পেয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। যেসব প্রার্থীর জনসমর্থন একেবারে তলানিতে তাঁদের বিজয়ী করে আনতে সহযোগিতা ও সমর্থন দিতে চাচ্ছে না আওয়ামী লীগ।

বৈঠক সূত্র জানায়, আসন সমঝোতা হলেও জাপা প্রার্থীদের স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দলের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জিতে আসতে হবে—এই অবস্থান এখনো বদলায়নি আওয়ামী লীগ। দলের আলোচকরা জাপা নেতাদের জানিয়েছেন, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া নৌকার প্রার্থীও বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন না।

আসন সমঝোতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার মধ্যে বিভিন্ন অরাজনৈতিক মহলেও দৌড়ঝাঁপ করছেন জাপা নেতারা।

৩৫ থেকে ৪০ আসনে সমঝোতা করতে তাঁদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। গতকাল বৃহস্পতিবারও জাপার তিন শীর্ষ নেতা সরকারের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের, কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী এবং দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু অংশ নেন।

জাপার দায়িত্বশীল একজন নেতা জানান, আসন সমঝোতা নিয়ে দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ে আজ শুক্রবার বিকেলে চূড়ান্ত বৈঠক হতে পারে।

এতে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে আসন সমঝোতার একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হবে। কত আসনে ছাড় দেওয়া হবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন শেখ হাসিনা।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে গতকাল দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের কাছে কোনো আসন চাওয়া হয়নি। জাপা জনগণের কাছে আসন চায়। তিনি দাবি করেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভোটের পরিবেশ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।  

ক্ষমতার সুফল নিয়েছে, সংগঠন গড়েনি জাপা

বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনা সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ বছর ক্ষমতার সুফল পেয়েও জাপা সারা দেশে ন্যূনতম অবস্থান তৈরি করতে না পারায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ। দলের নেতারা বলেন, ২০০৮ সাল থেকে টানা তিনটি জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে হয় জোটবদ্ধ নইলে সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে ছিল জাপা। মন্ত্রীও হয়েছেন জাপা নেতারা। ক্ষমতার অংশীদার হয়েও এলাকায় অবস্থান তৈরি করতে পারেননি তাঁরা। শুধু সরকারি সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, কিন্তু মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়নি। ফলে জাতীয় সংসদে বিএনপির অনুপস্থিতিতে নির্বাচনী এলাকায় জনসমর্থন নিয়ে দাঁড়াতে পারছে না দলটি।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জাপার সঙ্গে সমঝোতা হয় ৩৭টি আসনে। তবে সাতটি আসন উন্মুক্ত রাখা হয়। নির্বাচনে জাপা ২২ আসনে জয়ী হয়। পরে উপনির্বাচনে আরো একটি আসনে বিজয়ী হলে জাপার সংসদ সদস্যের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩।

সরকারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্য হলো, ২৩ আসনের বেশির ভাগে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা নেই। সাম্প্রতিক আলোচনাগুলোতে জাতীয় পার্টির সামনে এ বিষয়টি তোলা হয়েছে। আসন ধরে ধরে আলোচনায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ আসনে আওয়ামী লীগের সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া জাপা প্রার্থীদের জেতার সম্ভাবনা একেবারেই কম। এসব আসনে জাপা প্রার্থীদের বিজয়ী করে আনার দায়িত্ব নিতে রাজি নয় আওয়ামী লীগ। 

জাপায় উদ্বেগ : জাতীয় পার্টির নির্বাচনে থাকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংশয় প্রকাশের পর এখন বারবার ভোটে থাকার অঙ্গীকার করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তবে এভাবে নির্বাচনে গিয়ে জাপার লাভ কী হবে তা নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। জাপার যেসব নেতার বিপক্ষে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন, তাঁরা নির্বাচন নিয়ে খুব আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, নৌকার প্রার্থী আর আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মধ্যে তেমন তফাত নেই। পেশিশক্তি, ক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী কম যাবেন না। কারণ দলের সমর্থন পেয়েই নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন।

ফলে জিতে আসার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় এসব নেতার নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ কমছে। তবে তাঁরা প্রকাশ্যে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষেই কথা বলছেন। 

জাপা নেতাদের দৌড়ঝাঁপ

গত ৬ ডিসেম্বর গুলশানে জাপা নেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়। এরপর ৯ ও ১২ ডিসেম্বর আবার গুলশানে বৈঠক হয় দুই দলের নেতাদের। এর বাইরে নানা আঙ্গিকে নানান মহলে দৌড়ঝাঁপ করছে জাপা। ওই সব বৈঠকে জাপা আসন নিশ্চয়তার পাশাপাশি সরকারে গেলে কী পাবে, সেই আলোচনাও তুলছে বলে কয়েকটি সূত্র দাবি করেছে। আসন সমঝোতার মাধ্যমে নির্বাচনে গিয়ে এবার ক্ষমতার অংশীদার হতে চায় দলটি।

আওয়ামী লীগ ও জাপার আলোচনার সূত্রে জানা গেছে, ১৪ দলের শরিকদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থান মোটামুটি পরিষ্কার হলেও জাপার সঙ্গে হিসাব বেশ জটিল। আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে জাপা কমবেশি ৭০ আসনের একটি তালিকা দিয়েছে। এত বড় তালিকা পেয়ে বিস্মিত হন আওয়ামী লীগ নেতারা। সে অবস্থা থেকে সরে এসে এখন ৪০ থেকে ৫০টি আসন নিয়ে আলোচনা করছে। তবে জাপা যেসব আসন চেয়েছে এর মধ্যে কয়েকটি আসনের দাবিদার ১৪ দলের শরিকরাও। 

জাপার কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এখনো আওয়ামী লীগের আলোচনা চলছে। আলোচনার পর নিশ্চয় একটি সিদ্ধান্ত হবে। সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor