Bangladesh

জামিন-খালাস বাণিজ্যে ধনকুবের আনিস

আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠরাও বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক, তৌফিকা যা বলতেন তাই ছিল জায়েজ * জামিন তদবির ব্যর্থ হলে টাকা ফেরত না দিয়ে বলতেন ‘বিচারে খালাস করে দেবেন’

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্বাচনি হলফনামায় তিনটি পুকুর, কৃষিজমির ফসল ও মাছ চাষাবাদের তথ্য দিয়েছিলেন। এই আয়ের উৎস থেকে তিনি গত কয়েক বছরেই শত শত কোটি টাকার মালিক। এরপর অল্প সময়েই সিটিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে ধনকুবেরের তালিকায় নাম লেখান সাবেক এই মন্ত্রী। মুখে বিচার বিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও তার কথা ছাড়া জামিন দিতে পারতেন না বিচারকরাও। আলোচিত মামলার আসামিদের জামিন করিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আর ডলার নিতে বিশ্বস্ত ডালপালা তৈরি করেছিলেন। এসব ডালপালা ফুলেফেঁপে গাছে পরিণত হয়েছে। ৫ আগস্টের পর তারাও পলাতক। জামিন করাতে ব্যর্থ হলে টাকা ফেরতও দিতেন না। বলতেন, বিচারের সময় ‘খালাস’ করে দেবেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ তথ্যানুসন্ধানে উঠে এসেছে আনিসুল হকের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর তথ্য। কিন্তু এসব অভিযোগ আমলে নিতেন না শেখ হাসিনা। সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করতেন বিগত পতিত সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহারকারী সালমান এফ রহমান। দুজনের সম্পর্কও ছিল মধুর। এ কারণে তারা গ্রেফতারও হয়েছেন একসঙ্গে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, মুখে নীতিবাক্য বললেও ঘুসের হাট বসিয়েছিলেন সাবেক এই মন্ত্রী। বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে সাবরেজিস্ট্রার নিয়োগ, পদায়ন এবং আলোচিত মামলার আসামিদের জামিন করাতে। বিশেষ করে অযাচিত হস্তক্ষেপে ক্ষিপ্ত ছিলেন নিু আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতের বিচারকরাও। এ বিষয়ে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে গোপনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীকে বিষয়টি জানানো হয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক মামলায় বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের দমনপীড়নে বিচারকদের ব্যবহার করায় ক্ষিপ্ত ছিলেন তারা। রাজনৈতিক মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের ইশারার অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে বিচারকদের। বিবেকের তাড়নায় বিষয়টি মানতে পারতেন না বিচারকরা। জানা গেছে, আনিসুল হকের ঘনিষ্ঠ সহযোগী তার এক সময়ের এপিএস, পরে বাক্সবোঝাই অবৈধ ব্যালটে নির্বাচিত বিলুপ্ত কসবা উপজেলা চেয়ারম্যান রাশেদুল কাওসার জীবন বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক বনে যান। ৫ আগস্টের পর তিনি পলাতক। সাবেক এই মন্ত্রীর আরেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। মন্ত্রীর নির্বাচনি হলফনামার তথ্যমতে তিনটি পুকুর, কৃষিজমির ফসল ও মাছের চাষাবাদ ছিল আয়ের প্রধান উৎস। এর পর মন্ত্রী হওয়ার তার সম্পদের হিসাব বাড়তে থাকে। ঘুসের টাকা গুনতে বাসায় বসিয়েছিলেন টাকা গোনার মেশিন। সিটিজেন ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় ৪শ কোটি টাকা জামানত এবং ২০০ কোটি টাকা চলতি মূলধন দিয়ে ব্যাংকের যাত্রা শুরু করেছিলেন আনিসুল হক। তার মা প্রথমে এই ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর বহুল আলোচিত তৌফিকা করিমকে চেয়ারম্যান করা হয়। এই তৌফিকা করিমই ছিলেন আনিসুল হকের চালিকাশক্তি। তিনি যা বলতেন তাই করতেন আনিসুল হক। এই তৌফিকা করিমের ছেলে ও মেয়েকে কানাডায় বাড়ি করে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, ‘প্রাইভেট একটি টেলিভিশনে ৪০ ভাগ শেয়ার আছে তার।

আয়বহির্ভূত টাকার উৎস : তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সুদীর্ঘ নয় বছর ধরে মেঘনা-গোমতী ব্রিজের টোল কালেকশন করেছেন আনিসুল হকের ভাই আরিফুল হক। তার স্ত্রী-পুত্রের নামে আমেরিকায় বাড়িও কিনে দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সেখানে বড় অঙ্কের টাকা ব্যাংক-ব্যালেন্স হিসাবে জমা রাখার অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা তুলেছেন আনিসুল হকের সহযোগী কসবার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জীবন ও আখাউড়ার সাবেক পৌর মেয়র কাজল। আখাউড়া ও কসবার অন্তত ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদের নৌকার প্রার্থীর কাছ থেকে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা করে ঘুস বাণিজ্য নেওয়ার তথ্য উল্লেখ করে ওই সময়ই দুদকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযোগ দেওয়া হয়। সাবেক এপিএস জীবন ও সাবরেজিস্ট্রার রমজান খানের মাধ্যমে সাবরেজিস্ট্রার নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে অন্তত শতকোটি টাকা হাতিয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কায়েমপুর ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী বনি আজমল ছিলেন হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামি। এই আজমল কসবা উপজেলার সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন চোরাইপথে অবৈধভাবে গাঁজার ব্যবসায় জড়িত। এজন্য আনিসুল হককে জীবন ও বাবু নামের একজন মাসোহারা দিয়ে গাঁজার ব্যবসার সুযোগ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আনিসুল হকের আপন ফুপাতো ভাই কুটি ইউনিয়নের বিনা ভোটে চেয়ারম্যান স্বপন ওই এলাকার স্মাগলিং জোন নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রেও বাড়ি করেছেন বলে অভিযোগ আছে। তার নিজ গ্রামে একটি তিনতলা বাড়ি নির্মাণ করে এলাকার মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এছাড়া আখাউড়ার সাবেক পৌর মেয়র কাজল ওই এলাকার মানুষকে চাকরি দেওয়ার নামে শত শত বেকার যুবককে নিঃস্ব করেছেন। কোটি কোটি টাকা এনে আত্মসাৎ করেছেন এই কাজল। চাকরির এই বাণিজ্যে যুক্ত ছিলেন কসবার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জীবনও। দুই উপজেলা থেকে এই খাত থেকেও বিপুল অঙ্কের টাকা লোপাটের অভিযোগ আছে।

তদবিরের ডালপালা : তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, তদবিরের টাকা এক সময় নিতেন এপিএস জীবন। বড় বড় ব্যবসায়ীর দুর্নীতির মামলার তদবিরের লেনদেন হতো আনিসুল হকের গুলশানের অফিসে। এপিএস জীবন উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার পর সব লেনদেনের দায়িত্ব পান বিতর্কিত তৌফিকা করিম। এই তৌফিকা হচ্ছেন পিয়াস করিমের আপন বোন। তৌফিকাকে মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিয়োগ দিয়ে সামাজিক জীবনে ফেরাতে চেষ্টা করেন। তদবিরের টাকা লেনদেনে আরও যুক্ত ছিলেন আনিসুল হকের এক ভাগ্নে। সব বড় বড় দুর্নীতির মামলার আসামিদের জামিনের গ্যারান্টি দিতেন তিনি। বড় বড় ক্রিমিনালদের হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্টে জামিন নামঞ্জুর হওয়ার পর নিু আদালত থেকে জামিন করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতেন।

জানা যায়, টাকার বিনিময়ে নতুন বিচারপতি নিয়োগের মতো ঘটনা অতীতে ঘটেনি। চরম অযোগ্য ও বিতর্কিত ৩ জন জেলা জজ এবং ৫ জন অযোগ্য আইনজীবীকে বিচারপতি নিয়োগ করা হয়েছে তৌফিকা করিমের মাধ্যমে। তাদের নিয়োগের প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর ডিজায়ার’।

তদবিরের আলামত : আনিসুল হকের খোঁজখবর রাখতেন এমন একজন ব্যবসায়ী যুগান্তরকে বলেন, ফার্মার্স ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাৎকারী রাশেদুল হক চিশতীকে হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট জামিন দেননি। অথচ ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালতের বিচারককে বাধ্য করে জামিন করান আনিসুল হক। এই জামিন আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। তখন সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারপতিকে সুপ্রিমকোর্টে পদোন্নতির লোভ দেখিয়ে নিু আদালতের আদেশ বহাল করতে বাধ্য করেন। অতঃপর দুদক সুপ্রিমকোর্টে আপিল করেন। সেখানেও তদবির করেন আনিসুল হক। তার তদবিরে বিব্রতবোধ করে বিচারপতি ২০২০ সালের ১৮ জুন ওই মামলার নথিপত্র প্রধান বিচারপতির কাছে ফেরত পাঠান। পরে প্রধান বিচারপতি নতুন করে আরেক বিচারপতিকে মামলার শুনানির দায়িত্ব দেন। তখন শুনানি শেষে জামিন স্থগিত করা হয়। নিু আলাদত, হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টে জামিন করিয়ে দেওয়ার শর্তে ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাবেক এই আইনমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। হলমার্কস গ্রুপের দুর্নীতি মামলায় সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত জামিন পায়নি আসামি জেসমিন। বিপুল টাকা নিয়ে নিু আদালতে চাপ সৃষ্টি করে জামিন করিয়ে দেন আনিসুল হক। পরে দুদকের আপিলে জামিন উচ্চ আদালত স্থগিত করে দেন। এই তদবিরের মধ্যস্থতাকারী টাকা ফেরত চাইলে আনিসুল হক বলতেন, ‘বিচারের সময় খালাস করিয়ে দেবেন।’ মতিঝিলের মিজান টাওয়ারের মালিক মিজানুর রহমান ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাতের আসামি। তাকে সুপ্রিমকোর্টও জামিন দেননি। অথচ মহানগর দায়রা জজকে হাইকোর্টের বিচারপতি করার লোভ দেখিয়ে জামিন করিয়ে নেন আনিসুল। বিএনপি নেতা ও সাবেক একজন হুইপের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির প্রায় ১ ডজন মামলা বাতিল করাতে হাইকোর্ট ও সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করে ব্যর্থ হন। এসব মামলা থেকে তাকে খালাস করে দেওয়ার চুক্তিতে বিপুল অঙ্কের টাকা নেন আনিসুল হক। বিএনপির এই পরিবারের কাছ থেকে টাকার অঙ্কের সমপরিমাণ ডলার নেওয়া হয় গুলশানে তার অফিসে। চাঞ্চল্যকর সুলতান হত্যা মামলার আসামিকে জামিন করার শর্তে বিপুল পরিমাণ টাকা নেন তিনি। বিচারপতি খাস কামরায় গিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রীর পক্ষে তদবির করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। একজন সৎ বিচারপতি তদবির না শোনায় তাকে হুমকি দেওয়া হয়। পরে ওই মামলা আরেক বিচারপতির এজলাসে জামিন করানো হয়। ওই বিচারপতি ছিলেন মহিলা।

জুডিশিয়াল অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, চট্টগ্রাম কারাগারের বরখাস্তকৃত জেলার সোহেল রানার কাছ থেকে ৭৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন জামিন করার শর্তে। কিন্তু ২০২০ সালের ২৩ জুন ওই জামিন উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়ে যায়। এরপর আর ওই টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি। বিছমিল্লাহ গ্রুপের ৫টি মামলায় নেওয়া হয়েছে ৩ কোটি টাকা। গুলশানের যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যার দুজন আসামিকে জামিন করানোর শর্তে নিয়েছিলেন ২ কোটি টাকা। তাদের জামিন হয়নি অথচ টাকাও ফেরত দেওয়া হয়নি। গুলশানের রেইন্ট্রি হোটেলের ধর্ষণ ঘটনায় মূল আসামিকে জামিনের শর্তে নেওয়া হয় ২ কোটি টাকা। এই টাকা ডলারে নিয়েছেন আনিসুল হক। ওই ঘটনায় কয়েকটি জুয়েলারিতে পাওয়া অবৈধ স্বর্ণের মামলায় কয়েকজনকে জামিন করিয়ে দেওয়ার শর্তে নিয়েছিলেন ৫ কোটি টাকা।

সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বেশ কয়েকটি মামলায় কারাগারে থাকায় অভিযোগের এসব বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
Situs Toto
toto togel
slot toto
Toto slot gacor
bacan4d
totoslotgacor
bacan4d
bacan4d slot gacor
bacan4d login
Bacan4d
bacan4d
bacan4d bonus
Toto gacor
Toto gacor
slot gacor hari ini
bacan4d toto
bacan4d toto
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d link alternatif
slot gacor bett 200
situs toto
SITUS TOTO
toto 4d
toto gacor
Slot Toto
Slot Toto
Slot Toto
Situs toto
Slot toto
Slot Dana
Slot Dana
Judi Bola
Judi Bola
Slot Gacor
toto slot
bacan4d toto
bacan4d akun demo slot
bacantogel
bacan4d
bacan4d
slot gacor
bacantoto
bacan4d
Bacan4d Login
slot demo
Bacan4d Toto
toto gacor
Slot Gacor
Live Draw
Live Draw Hk
toto slot
Bacan4d slot gacor
toto macau
toto slot
Toto Gacor
slot dana
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
Slot Dp Pulsa
Bacan4d Login
toto slot
Bacansports/a>
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
bacansport
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
slot gacor
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
toto slot
slot demo
toto slot gacor
bacansports Slot toto toto slot Slot toto Slot dana Slot toto slot maxwin slot maxwin toto slot toto slot slot dana
Toto Bola
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
bacan4d
ts77casino
situs toto
slot pulsa
bacansports
situs toto
slot toto
situs toto
slot toto
situs toto
toto slot
bacansport
bacansport
bacansports
slot toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
xx1toto
situs toto
situs toto
xx1toto
toto slot
xx1toto
xx1toto
slot qriss
Slot Toto
slot dana
situs toto
slot toto
slot dana
Situs Toto Slot Gacor
xx1toto
xx1toto
bacan4d
xx1toto
xx1toto
toto slot
situs toto slot gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
toto gacor
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
situs toto
Slot Toto
Toto Slot
Slot Gacor
Slot Gacor
Slot Gacor
slot toto
Toto Slot
slot gacor
situs togel
Toto Slot
bacan4d
bacan4d