Hot

জালিয়াতির দুর্বল কোম্পানিতে সর্বনাশ

দুর্বল কোম্পানিগুলোর নানা রকম জালিয়াতিতে সর্বনাশ হচ্ছে শেয়ারবাজারে। বিগত কয়েক বছরে তালিকাভুক্ত এসব কোম্পানি এখন দেশের দুই শেয়ারবাজারের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। দুর্বল কোম্পানিগুলো শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরই নানা ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। কোনো কোনো কোম্পানি বছরের পর বছর উৎপাদনে না থাকলেও তার শেয়ারের দর বেড়েই চলেছে। ওইসব কোম্পানির পরিচালকরা নিজেরাই জড়িত হন শেয়ার কারসাজিতে। ছোট মূলধনি হওয়ায় এসব কোম্পানি ঘিরে শেয়ারবাজারে তৈরি হয়েছে কারসাজি চক্র। মূলত এসব সিন্ডিকেট ছোট ছোট কোম্পানির শেয়ার কারসাজি করেই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পথে বসিয়েছে। দুর্বল কোম্পানিগুলোর কারণে এখন শেয়ারবাজারে চরম অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুর্বল ও নামসর্বস্ব কোম্পানি তালিকাভুক্ত করে শেয়ারবাজার খালি করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে দেশের শেয়ারবাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে শেয়ারবাজার থেকে বিগত দুই যুগে তালিকাচ্যুত হয়েছে মোট ৪০ কোম্পানি। এসব কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে প্রায় ১৬০ কোটি টাকা উত্তোলন করেছিল। শেয়ারবাজার থেকে তালিকাচ্যুতির আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা না করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারী। এমারেল্ড অয়েল নামে একটি কোম্পানি ২০১৪ সালে তালিকাভুক্তির এক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়েছে। শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে এক টাকাও বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি। বাজারে ২০১৪ সালে ১৭টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়।

এর মধ্যে ১৬টির উৎপাদন বন্ধ। কখনো চালু হবে এমন সম্ভাবনাও নেই। নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ কোনো বাছবিচার না করে এমন কোম্পানি তালিকাভুক্ত করেছে। ২০১০ সালে ভয়াবহ ধসের পরও সতর্ক হয়নি কেউ। ওই সময় গঠিত কমিশন একের পর এক দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়ে গেছে। গত ১৪ বছরে তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি বৃহৎ মূলধনি। যেগুলো বাজার স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রেখেছে। সর্বস্তরে অভিযোগ, নামসর্বস্ব কিছু কোম্পানি শেয়ারবাজার থেকে টাকা নিয়ে এখন বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দিচ্ছে না। পরিচালকরা টাকা নিয়ে শেয়ার কারসাজিতে জড়িত হচ্ছেন। বছরের পর বছর বন্ধ রয়েছে কোম্পানির উৎপাদন। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ বন্ধ কোম্পানি চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ডিএসইর চিহ্নিত কোম্পানির মধ্যে রয়েছে-কে অ্যান্ড কিউ, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, ইমাম বাটন, দুলামিয়া কটন, বেক্সিমকো সিনথেটিক, সমতা লেদার, সরকারি মালিকানাধীন শ্যামপুর সুগার, জিল বাংলা সুগার, মেঘনা কনডেন্টস মিল্ক, বিডি ওয়েল্ডিং, জুট স্পিনার্স, সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ, বিডি অটোকারস, এমারেল্ড ওয়েল, বাংলাদেশ সার্ভিসেস লি., বিচ হ্যাচারি, ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, হাক্কানি পাল্প, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, মিথুন নিটিং, সোনারগাঁও টেক্সটাইল, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, তাল্লু স্পিনিং, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ, লিগ্যাসি ফুটওয়্যার, মুন্নু সিরামিক, মুন্নু স্টাফলার, সি অ্যান্ড এ টেক্সটাইল, তুং হাই নিটিং অ্যান্ড ডাইং।

বাজারে শৃঙ্খলা ফেরাতে সম্প্রতি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২২টি কোম্পানিকে জেড ক্যাটাগরিতে পাঠিয়েছে। এসব কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজনে ব্যর্থতা, ছয় মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ ও পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ পরিশোধিত মূলধন ছাড়িয়ে গেছে। কোম্পানিগুলো হলো-অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আরামিট সিমেন্ট, আজিজ পাইপস, ডেল্টা স্পিনার্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, জিবিবি পাওয়ার, ইনটেক লিমিটেড, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, কেয়া কসমেটিকস, খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, ন্যাশনাল টি কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, রিজেন্ট টেক্সটাইল মিলস, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোম্পানি (বিডি), রিং শাইন টেক্সটাইলস, সাফকো স্পিনিং মিলস, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ঢাকা ডাইং অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ইয়াকিন পলিমার ও জাহিনটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিএসইসি কিছু বন্ধ কোম্পানি বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন থেকে উৎপাদন বন্ধ সেগুলো তালিকাচ্যুত করা হবে। আর যেগুলো চালুর সম্ভাবনা রয়েছে সেসব ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) মার্কেটে পাঠানো হবে।

বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘উৎপাদন বন্ধ, অবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই এ ধরনের কোম্পানিগুলো জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানো হচ্ছে। এসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কেউ যাতে কারসাজি করতে না পারে সেজন্য আমরা এ ব্যবস্থা নিচ্ছি। অন্যদিকে যে কোম্পানিগুলোর অবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোকে আমরা সাময়িক সুযোগ দিচ্ছি, যাতে তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। মূলত বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্যই এ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।’ ডিএসইর সাবেক সভাপতি ও পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমাদের শেয়ারবাজারে অস্থিতিশীলতা দীর্ঘদিনের। এ অস্থিরতার পেছনে দায়ী দুর্বল কোম্পানির শেয়ার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে হলে দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তি বন্ধ করতে হবে।

কয়েকটি বড় মূলধনি কোম্পানিকে যদি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত করা যায় তাহলে বাজার এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে, স্থিতিশীল হয়ে উঠবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাতে যে সংকট চলছে তার একটি প্রভাব রয়েছে শেয়ারবাজারে। মিথ্যা তথ্য, বাড়তি অ্যাকাউন্ট দিয়ে শেয়ারবাজারে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্তি হয়েছে তাদের বাজার থেকে তালিকাচ্যুত করা উচিত। এসব কোম্পানির কারণেই সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজার থেকে ক্রমে দূরে সরে যাচ্ছেন।’ শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, জেড ক্যাটাগরিতে পাঠানো কোম্পানিগুলো মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ারের দাম বাড়ায়। এগুলো দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ। বাজারের অস্থিতিশীলতার জন্য এ জাতীয় কোম্পানিগুলো দায়ী। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বর্তমান পর্ষদ এসব কোম্পানি চালাতে পারবে না। অন্য কেউ টেকওভার করলে ভালো করতে পারবে। আমরা চাই বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports