Bangladesh

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বাজার মনিটরিং জরুরি

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং সব ধরনের সেবার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সংসার চালাতে গলদ্ঘর্ম হতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, একজন ব্যক্তি মাসে ৪০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় করেও চার থেকে পাঁচজনের সংসারের ব্যয় বহন করতে পারছেন না। যারা কিছুটা সঞ্চয় করেছিলেন, তারাও জমানো টাকা ভাঙছেন। আর নিম্ন-আয়ের মানুষ জীবনসংগ্রামে টিকে থাকার তাগিদে হয় শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছেন, নয়তো পরিবার-পরিজন গ্রামে পাঠিয়ে নিজে শহরে থাকছেন।

নিম্ন ও মধ্যবিত্তের আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে সঞ্চয় ভাঙার পাশাপাশি ধারদেনা করাটা এখন একরকম স্থায়ী বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়া যারা দিন এনে দিন খান, তাদের কষ্টের সীমা নেই। স্বল্প আয়ের মানুষ ভ্রমণ, শিক্ষা, বিনোদনের মতো খরচ তো বাদই দিয়েছেন; খাবারের বাজেট কমিয়েও সাংসারিক ব্যয় নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না।

আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় বাজারে দ্রুত এর প্রভাব পড়লেও দাম কমলে স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব পড়ে না। উল্লেখ্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণের মাধ্যমে ভোক্তার চাহিদা কমানো হয়। পণ্যের দাম কমানোর লক্ষ্যে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি আমদানিও নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ কারণে বহু দেশে, বিশেষ করে খাদ্যে, মূল্যস্ফীতির হার কমতে শুরু করেছে; কিন্তু বাংলাদেশে উলটো এ হার বাড়ছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। উল্লেখ্য, ওই সময়ে বাংলাদেশও সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করেছে, আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেছে, উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। এর ওপর আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আবার বাড়তে শুরু করায় এ সংকট কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলা কঠিন। ডলারের দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে আবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে স্বভাবতই আমদানি খরচ বেড়ে যাবে। একইসঙ্গে ডলারের ওপর চাপও বাড়বে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারেও সমন্বয় করতে হবে। এ শর্ত মানতে গেলে দেশে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি এখনো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আগস্টে এ হার ডাবল ডিজিটের কাছাকাছি পৌঁছেছে।

মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বাড়লেও সমস্যা হতো না, যদি একই হারে আয় বাড়ত। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মূল্যস্ফীতি যে হারে বাড়ছে, সেই হারে আয় বাড়ছে না। এ অবস্থায় সংশ্লিষ্টদের পণ্য ও সেবার দাম কীভাবে কমানো যায়, সে চেষ্টা করতে হবে। এজন্য দরকার কার্যকর পরিকল্পনা ও এর সুষ্ঠু প্রয়োগ। বৃদ্ধি পাওয়া পণ্যের দাম কমাতে সাময়িক সময়ের জন্য আমদানি শুল্ক কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানো যেতে পারে। আশার কথা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা রোধে কঠোর বাজার মনিটরিংয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। বেশকিছু পণ্যের দামও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে, যদিও বাজারে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় দেশে যারা কৃত্রিমভাবে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজার সহনীয় হলে জনসাধারণের জীবনযাত্রার সংকট কিছুটা হলেও দূর হবে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d