Bangladesh

জুনে রেকর্ড রেমিটেন্স, ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ *  রিজার্ভ বেড়েছে ৩ বিলিয়ন ডলার

দেশে রেমিটেন্স প্রবাহে সুতাবাস বইছে। সদ্য সমাপ্ত জুন মাসে এসেছে ২৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে দেশে। মূলত কোরবানির ঈদ উপলক্ষে এ সময় বড় অঙ্কের অর্থ দেশে পাঠান প্রবাসীরা। একক মাস হিসেবে এ পর্যন্ত এটিই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন (২ হাজার ৩৯১ কোটি) ডলারের সমপরিমাণ।

এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন (২ হাজার ১৬১ কোটি) ডলার। সামগ্রিকভাবেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, নানা উদ্যোগের ফলে বৈধপথে রেমিটেন্স বাড়ছে। আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এদিকে রেমিটেন্সের বা প্রবাসী আয়ের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়েছে।

রেমিটেন্স ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের  তৃতীয় কিস্তির ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার পর গ্রস হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। আর আইএমএফের বিপিএম ৬ পদ্ধতিতে ২২ বিলিয়ন ডলার। গত মে মাসে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৪ দশমিক ১৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ গত এক মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে তিন বিলিয়ন ডলার। এতে অর্থনীতিতে স্বস্তি বাড়তে শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। 
করোনা মহামারির মধ্যেই ২০২১ সালে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে হয় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। পৃথিবীর বহু দেশের কাছেই বাংলাদেশের এই সাফল্য দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা দেয়। কিন্তু মহামারিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানিসহ সব ধরনের পণ্যের মূল্য কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কমতে শুরু করে রিজার্ভ।

গত বছরের জুন মাসে ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের গ্রস রিজার্ভ নিয়ে অর্থবছর শেষ হয়। এর পর ধীরে ধীরে কমতে থাকে। নভেম্বরে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলারে। এর পর ডিসেম্বরে কিছু বাড়লেও জানুয়ারি থেকে তা আবার কমতে শুরু করে। মে মাসে নেমে ১০ বছর আগের অবস্থায় চলে যায়। রিজার্ভ বৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স বাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের উৎসাহিত করছে। এতে রেমিটেন্স বাড়ছে। একই সঙ্গে আইএমএফের ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থ এবং আরও কয়েকটি উৎস থেকে ঋণের ডলার যোগ হয়েছে রিজার্ভে। এতে রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২৭ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন (২ হাজার ৩৯১ কোটি ) ডলারের সমপরিমাণ। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে রেমিটেন্স এসেছিল ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন (২ হাজার ১৬১ কোটি) ডলার। অর্থবছরের হিসাবে সর্বোচ্চ ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল। সামগ্রিকভাবেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিগত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স এসেছে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় দেশে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরের মে মাসে এসেছে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স বা প্রবাসী আয়। সে হিসাবে মে মাসের তুলনায় জুনে ২৮ কোটি ৮২ লাখ ডলার বেশি এসেছে। আর গত বছরের একই মাসের তুলনায় বেশি এসেছে ৩৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। গত বছরের জুন মাসে এসেছিল ২১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল, মে ও জুনÑ টানা এই তিন মাস ২০০ কোটি ডলারের বেশি রেমিটেন্স আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে জুনে।

প্রবাসীরা গত মাসে ২৫৪ কোটি ২ লাখ ডলারের রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা প্রায় তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে প্রবাসীরা রেকর্ড ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠান। একক মাস হিসাবে এখন পর্যন্ত এটিই দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, রেমিটেন্সে ডলারের ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের সঙ্গে ব্যাংকের দরে পার্থক্য কমে এসেছে। আবার বর্তমান পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ ব্যাংক রেমিটেন্স বাড়াতে অনেক চেষ্টা করছে। ব্যাংকগুলো প্রবাসীদের উৎসাহিত করছে। এতে রেমিটেন্স বাড়ছে। আগামীতেও বাড়বে বলে জানান তারা।
রিজার্ভ বেড়ে ২৭.১৫ বিলিয়ন ডলার ॥ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৬ জুন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রস হিসাবে ২৪ দশমিক ৬২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফ স্বীকৃত বিপিএম৬ পদ্ধতির গ্রস হিসাবে তা ছিল ১৯ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করে না। শুধু আইএমএফসহ বিভিন্ন সংস্থাকে জানিয়ে দেয়। বিদেশী মুদ্রার সরবরাহ সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ আইএমএফের কাছে ঋণ চায়।

কয়েক দফা আলোচনা শেষে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক সংস্থাটি। ঋণ চুক্তি অনুমোদনের পর গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার হাতে পায় বাংলাদেশ। আর গত ১২ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তিতে বাংলাদেশ পায় ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। তৃতীয় কিস্তি ছাড় পেতে জুন শেষে নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার রাখতে শর্ত দিয়েছে আইএমএফ, যা আগের শর্তে ছিল ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

অন্যান্য শর্তে অগ্রগতি হওয়ায় বাংলাদেশের আবেদনে নিট রিজার্ভ সংরক্ষণে এ ছাড় দেয় আন্তর্জাতিক ঋণদাতা সংস্থাটি। নতুন শর্ত অনুযায়ী, আগামী সেপ্টেম্বর শেষে নিট রিজার্ভ ১৪ দশমিক ৮৮ ও ডিসেম্বর শেষে তা ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে হবে। এর আগে গত ৮ মে তৃতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করার বিষয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকে ঐকমত্যে পৌঁছেছিল ঢাকায় সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল।

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থের ব্যবহার এবং শর্ত পূরণে অগ্রগতি দেখতে রিভিউ মিশন গত ২৪ এপ্রিল থেকে ৮ মে পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন দপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করে। ঋণের শর্ত হিসেবে বেশ কিছু আর্থিক ও নীতি সংস্কারের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এগুলোর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারমুখী করা, ব্যাংক ঋণে সুদ হারের ৯ শতাংশের সীমা তুলে দেওয়া, ব্যাংক ঋণের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের তথ্য প্রকাশ, রিজার্ভের নিট হিসাব আইএমএফ স্বীকৃত পদ্ধতি বিপিএম৬ অনুযায়ী প্রকাশ, ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নের মতো বিষয় রয়েছে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d