International

জেলেনস্কিকে রীতিমতো ধুয়ে দিলেন ট্রাম্প, চুুক্তি হয়নি, যৌথ সংবাদ সম্মেলন বাতিল

এত দিন পাল্টাপাল্টি কথার লড়াইয়ে জড়িয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে এবার মুখোমুখি হয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ালেন তারা।

এক প্রতিবেদনে সিএনএন জানিয়েছে, শুক্রবার হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে বৈঠকে তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই রাষ্ট্রনেতার চুক্তি সইয়ের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

২০২২ সাল থেকে অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছে ইউক্রেন। যুদ্ধে ইউক্রেনের রসদ জুগিয়ে আসছে আমেরিকা ও তার মিত্ররা। ইতোমধ্যে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে কয়েকশ কোটি ডলারের অস্ত্র ও অর্থসহায়তা পেয়েছে ইউক্রেন। কিন্তু গত ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে দৃশ্যপট পুরোপুরি পাল্টে গেছে। জেলেনস্কির সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। যুদ্ধের জন্য জেলেনস্কিকে দোষারোপ করে আসছিলেন তিনি। তাই সবার চোখ ছিল শুক্রবারের বৈঠকে।

সাংবাদিকদের সামনে এই বৈঠকে জেলেনস্কিকে একের পর কথার আক্রমণ করেন ট্রাম্প। জেলেনস্কি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে জুয়া খেলছেন বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আপনার দেশের মানুষ খুবই সাহসী। কিন্তু আপনাকে হয় (রাশিয়ার সঙ্গে) একটি চুক্তি করতে হবে নইলে আমরা আর আপনাদের সঙ্গে নেই। আর আমরা যদি না থাকি তাহলে আপনাকে একা লড়তে হবে।

ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে মতপার্থক্য এক সময় চিৎকার-চ্যাঁচামেচির পর্যায়ে চলে যায়। জেলেনস্কি যুদ্ধে হেরে যাচ্ছেন দাবি করে ট্রাম্প বলেন, মানুষ মারা পড়ছে। যুদ্ধের জন্য সেনার সংখ্যাও কমছে ক্রমশ। আপনার হাতে কার্ড (বিকল্প) নেই। একবার আমরা চুক্তি সই করলে আপনি ভালো অবস্থানে চলে যাবেন। কিন্তু আপনাকে আদৌ কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছে না। সত্যি কথা বলতে কি এটা ভালো কোনো বিষয় নয়।

ট্রাম্প জেলেনস্কিকে বলেন, যুদ্ধ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করতে চাইলে ইউক্রেনকে ছাড় দিতে হবে। ছাড় দেওয়া ছাড়া আপনি কোনো চুক্তি করতে পারবেন না। তাই এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় তাকে (জেলেনস্কি) কিছু ছাড় দিতে হবে। কিন্তু আশা করি, বড় কোনো ছাড় দিতে হবে না যেমনটা লোকে বলে বেড়াচ্ছে।

ট্রাম্পের এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নাম উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, একজন খুনিকে কোনো ছাড় দেওয়া উচিত নয়। 

এছাড়া, পুতিনের বিষয়ে ট্রাম্পের নমনীয় অবস্থানের সমালোচনা করেন জেলেনস্কি। একজন খুনির সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা না করার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শুধু ট্রাম্প নয়, মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সও জেলেনস্কির সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। ওভাল অফিসে বসে বিতণ্ডায় জড়িয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে জেলেনস্কি অসম্মান করেছেন মন্তব্য করে ভ্যান্স বলেন, আপনি একবারও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন না। তখন মাথা নেড়ে ভ্যান্সের কথায় সায় দেন ট্রাম্প। 

তখন গলার স্বর উঁচু করে জেলেনস্কি উত্তর দেন, বহুবার বলেছি, আমেরিকার জনগণকে ধন্যবাদ।

হোয়াইট হাউসে কোনো বিদেশি রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে বৈঠকের পর তাকে নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জেলেনস্কির উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পরও হোয়াইট হাউস জানায়, দুই রাষ্ট্রনেতা কিছুক্ষণের মধ্যেই একটি সংবাদ সম্মেলনে করবেন। সেখানে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে একটি চুক্তিতেও সই করবেন তারা।
কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর এই সংবাদ সম্মেলন বাতিল করার কথা জানায় হোয়াইট হাউস। এরপর জেলেনস্কি ও তার সঙ্গে থাকা ইউক্রেনের অন্য কর্মকর্তাদের হোয়াইট হাউস থেকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।

জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া একে পোস্টে লিখেছেন, জেলেনস্কি ‘যুক্তরাষ্ট্র ও এ দেশের শ্রদ্ধার জায়গা ওভাল অফিসকে (হোয়াইট হাউসে মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যালয়) অসম্মান’ করেছেন। যেদিন তিনি (জেলেনস্কি) শান্তির জন্য প্রস্তুত হবেন, আবার (হোয়াইট হাউসে) ফিরে আসতে পারেন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button