Hot

জোট গঠনে নানা হিসাব বিভক্ত ইসলামি দল: ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠে তৎপরতা বেড়েছে ইসলামি দলগুলোর। নির্বাচনি সমঝোতা বা জোট গঠন নিয়ে তারা নানা হিসাবনিকাশ কষছে। তবে এ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলগুলো। এখন পর্যন্ত তিনটি পৃথক জোট বা নির্বাচনি সমঝোতার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। একটি অংশ ব্যালটে ইসলামপন্থি দলগুলোকে একসঙ্গে চায়। এ নিয়ে পর্দার আড়ালে চলছে নানা তৎপরতা। রোববার বা সোমবার ৫টি ইসলামি দলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। পৃথকভাবে জোট করার বিষয়ে কথা চলছে ইসলাপন্থি অন্য ৪টি দলের। আবার ইসলামি দলগুলোকে এক ছাতার নিচে চায় জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত নেতারা বিভিন্ন দলের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করছেন। তবে সবকিছুই এখনো আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে আছে। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা হলে তা দৃশ্যমান হবে। ইসলামপন্থি দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিস-এ পাঁচটি দল ঐক্যের কাছাকাছি। এসব দলের লিয়াজোঁ কমিটি রয়েছে। কাল বুধবার তাদের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এদিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের কারণে তা স্থগিত করা হয়। বৈঠকটি আগামী রোববার বা সোমবার হওয়ার কথা রয়েছে। এ বৈঠকে একক প্রার্থী ঠিক করার কৌশল নির্ধারণ করা হতে পারে। এছাড়া আরও যেসব দল বাইরে আছে, তাদের সঙ্গেও ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করার সিদ্ধান্ত আসতে পারে। উদ্দেশ্য জোটকে বড় করা। এছাড়া ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, জাকের পার্টি-এ চার দল মিলে একটি জোট করার পরিকল্পনা করছে। দলগুলোর নেতারা আরও সমমনা দলকে তাদের সঙ্গে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

এদিকে ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ‘নির্বাচনি ঐক্য’ গড়ে পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়ার চিন্তা করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। সেক্ষেত্রে একটি আসনে একজন করে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে ‘সমঝোতার’ চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে দলটি ইসলামী আন্দোলনসহ ৫ দল এবং এর সঙ্গে আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। এর বাইরে ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন ও খেলাফত আন্দোলন কোনদিকে যাবে বা এককভাবে নির্বাচন করবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। আবার ইসলামপন্থি একটি জোট বিএনপির সঙ্গেও সমঝোতায় যেতে পারে।

তবে ইসলামপন্থি দলের একাধিক শীর্ষ নেতা যুগান্তরকে বলেন, জামায়াত বৃহত্তর একটি ঐক্য গড়তে চাইছে। সেক্ষেত্রে ইসলামী আন্দোলনকেও দলটি পাশে চায়। তবে ঐক্য গঠনে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে নেতৃত্ব কে দেবে-জামায়াতে ইসলামী নাকি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। পাশাপাশি ঐক্য গড়ার আগে কয়েকটি দলের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদুদীর ধর্মীয় বিষয়ে কিছু লেখা বা বক্তব্য নিয়ে আলেমদের সঙ্গে যে বিরোধ, এর সমাধান করার কথা জানিয়েছেন। তা না হলে বেশির ভাগ ইসলামি দল বৃহত্তর ঐক্যে না থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আবার বেশ কয়েকটি দল বলছে, আলেমদের সঙ্গে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা করছে জামায়াত। সেক্ষেত্রে নিজ নিজ দলের আদর্শ এবং মৌলিকত্ব বজায় রেখে নির্বাচনি ঐক্য না হয়ে নির্বাচনি সমঝোতাও হতে পারে। টার্গেট একটি আসনে একজন করে প্রার্থী থাকবে।

জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের যুগান্তরকে বলেন, ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের বিষয়টি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। আলাপ-আলোচনা চলছে, কীভাবে কী করা যায়। অনেকে প্রার্থী ঠিক করেনি, নির্বাচনটা ঠিক কীভাবে হবে-অনেক বিষয় আছে। ঐকমত্য কমিশনের ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত হলেই তখন এর অগ্রগতি বোঝা যাবে। সময় গেলে তা আরও স্পষ্ট হবে।

ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা যে পথে অগ্রসর হচ্ছি, তা হলো আগামী নির্বাচনে ইসলামপন্থি ভোট যাতে বিভক্ত না হয়। জোট নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। সমঝোতা-সমন্বয়টাও কীভাবে হবে, তা হয়তো আরও পরে প্রকাশ পাবে। অর্থাৎ দৃশ্যমান হবে যৌক্তিক সময়ে।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, ‘সব ইসলামি দল এবং ইসলামি মত ও পথ যারা ইসলামের নামে কাজ করে-সবাইকে আমরা ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। ২৫ জুন ৫টি দল-ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মসলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি ও খেলাফত মজলিসের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ওইদিন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ থাকায় তা হয়তো আগামী রোব বা সোমবার করতে পারি। বৈঠকে আমরা একক প্রার্থী ঠিক করার কৌশল নির্ধারণ করব। এছাড়া আরও যারা বাইরে আছে, তাদের সঙ্গেও ধারাবাহিকভাবে মতবিনিময় করব, পরামর্শ নেব, তারা কীভাবে জোটকে দেখতে চায়-এসব পরামর্শ নেওয়ার পর জোট ঘোষণা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গেও আমাদের কথা চলে। এখানে আমরা আকিদার বিষয়টি সামনে আনছি না। এটা যার যার জায়গায়। আমরা শুধু নির্বাচনি একটা অ্যালায়েন্স করব।’

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ৫ দলের বৈঠক আগেও হয়েছে, সামনেও হবে। ইসলামি ঐক্যকে জোরদার করা আলোচনার একটি অংশ। সবাই একমত জোটবদ্ধ হওয়া দরকার। তবে কি ফরমেটে হবে, কাদের নিয়ে হবে, কাদের বাদ দেওয়া হবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তবে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। জোটে জামায়াতও থাকতে পারে।

জানা যায়, জামায়াত গত বছরের ১৫ আগস্ট থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। এর মধ্যে চরমোনাই পিরের ইসলামী আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, জাকের পার্টি, লেবার পার্টি, খেলাফত মজলিস ও ফরায়েজী আন্দোলন উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মাওলানা মামুনুল হক, হেফাজতে ইসলামের আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আব্দুল মাজেদ আতাহারী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) আবু জাফর কাসেমী, জামিয়া মাদানিয়ার মুহতামিম মনিরুজ্জামান কাসেমী, জনসেবা আন্দোলনের ফখরুল ইসলামসহ ব্যক্তিপর্যায়ে বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও আলেমদের সঙ্গে জামায়াতের আমির পৃথক মতবিনিময় করেন।

এসব মতবিনিময়ে অংশ নেওয়া একাধিক দলের নেতা জানিয়েছেন, ইসলামপন্থিদের মধ্যে একটি ঐক্য চায় জামায়াত, বিশেষ করে নির্বাচনি ঐক্য। এ লক্ষ্যে জামায়াত ইতোমধ্যে ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে একটি যোগাযোগের সম্পর্ক তৈরি করেছে। এর মধ্য দিয়ে কার্যত কওমিধারার আলেমদের সঙ্গে তাদের দীর্ঘদিনের যে বিরোধ বা বিতর্ক, সেটি কমেছে। এখন নির্বাচনি ঐক্য হলে ভালো, না হলেও জামায়াত তাতে খুব সমস্যা দেখছে না।

তবে জামায়াত নেতারা মনে করছেন, ইসলামি দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনি ঐক্য হবে কি না, সেটি নির্ভর করছে চরমোনাই পিরের দল ইসলামী আন্দোলনের ওপর। জামায়াতের পর ইসলামপন্থিদের সমর্থনের দিক থেকে এ দলটিকে গুরুত্বপূর্ণ ধরা হয়।

জানতে চাইলে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী যুগান্তরকে বলেন, ‘জোট গঠনের প্রক্রিয়া চলমান। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি। আমরা মনে করি, আদর্শ এবং মৌলিকত্ব বজায় রেখে নির্বাচনকেন্দ্রিক জোট হতে পারে। সেক্ষেত্রে জামায়াতের বিষয়টি পরবর্তী সময়ে আলোচনা হবে, সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে কিছু বলতে পারছি না। মওদুদী সাহেবের কিছু বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য সামান্য আছেই, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কার্যনির্বাহী কমিটিতে বসে নেব।’

এ বিষয়ে গত নির্বাচনে অংশ নেওয়া ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা যারা সত্যিকারের ইসলাম ও সুফিবাদে বিশ্বাসী-এমন কয়েকটি রাজনৈতিক দল আছে নিবন্ধিত। চেষ্টা করছি জোটবদ্ধ হয়ে আগামী নির্বাচন করব।’ তিনি বলেন, ‘জামায়াতের আর আমাদের মতাদর্শ অনেক ভিন্ন। তাই তাদের সঙ্গে আমাদের জোট বা অন্য কিছু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। আবুল আ’লা মওদুদীর মতাদর্শ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকিদার পরিপন্থি। তাই তাদের সঙ্গে মিটিং-মিছিল বা বসার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

bacan4d slot toto