জ্বলজ্বলে এক তারা খুলে দিল মহাকাশের অদৃশ্য পর্দা

মহাকাশে থাকা এক অদ্ভুত জ্বলজ্বলে তারা আমাদের জানাল, পৃথিবীর আশপাশে আছে একগুচ্ছ অদৃশ্য প্লাজমা কাঠামো—যেগুলো এতদিন আমাদের চোখের আড়ালে ছিল। অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ গোলার্ধের সবচেয়ে শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এই রোমাঞ্চকর ঘটনা আবিষ্কার করেছেন।
‘নেচার অ্যাস্ট্রোনমি’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, একটি পালসার তারার আলো পর্যবেক্ষণ করে তারা এই গোপন কাঠামোগুলোর অস্তিত্ব টের পান। পালসার হলো এক ধরনের নিউট্রন তারা—মৃতপ্রায় একটি তারার ঘনীভূত রূপ। এটি ঘুরতে ঘুরতে পৃথিবীর দিকে শক্তিশালী রেডিও তরঙ্গ পাঠায়।
এই তারাটি যখন গ্যালাক্সির মধ্যে দিয়ে ছুটে চলে তখন এর চারপাশে সৃষ্টি হয় এক ধরনের ঝড়ো গ্যাসের ঢেউ, যাকে বলা হয় বো-শক (Bow Shock)।
এই ঝড়ের মধ্য দিয়ে রেডিও তরঙ্গ চলার সময় নানা রকম প্রতিফলন ও বিকিরণ ঘটে, যেটাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘স্কিনটিলেশন’ বা ‘ঝিলমিল করা’।
মানুষের চোখে যেভাবে তারারা টিম টিম করে জ্বলে, এটিও ঠিক তেমনই এক ঘটনা—তবে এই টিম টিমানিতে লুকিয়ে আছে বিজ্ঞানীদের জন্য দারুণ সব তথ্য। গবেষণায় বিজ্ঞানীরা মোট ২৫টি স্কিনটিলেশন আর্ক বা আকার শনাক্ত করেছেন—যা এখন পর্যন্ত কোনো একক পালসারে দেখা সর্বোচ্চ সংখ্যক। প্রতিটি আর্ক একটি করে প্লাজমা স্তরের অবস্থান ও গতি নির্দেশ করে। এটি অনেকটা যেন মহাকাশের সিটি-স্ক্যান!
সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, এই গবেষণা দেখিয়েছে, আমাদের সৌরজগত যার মধ্যে অবস্থিত—সেই ‘লোকাল বাবল’ অঞ্চলটিও পুরোপুরি ফাঁকা নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে বহু ঘন প্লাজমা গঠন। এছাড়া বিজ্ঞানীরা পালসারটির বো শকের ভেতরেও প্রথমবারের মতো স্কিনটিলেশন আর্ক খুঁজে পেয়েছেন। এর মাধ্যমে বো শকের ভেতরের স্তরগুলো বিশ্লেষণ করে তারা তৈরি করেছেন একটি ত্রিমাত্রিক মডেল—যা মহাকাশ বিজ্ঞানকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়েছে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার, এক জায়গায় দেখা গেছে—একটি প্লাজমা স্তর পুরো স্রোতের উল্টো দিকে এগোচ্ছে, যা আগে কেবল কম্পিউটারের সিমুলেশনেই দেখা গেছে। বাস্তবে এমন কিছু দেখা খুবই বিরল।
এই আবিষ্কার স্পষ্ট করে বলছে—মহাকাশের অনেক রহস্য আমাদের খুব কাছেই আছে, কেবল খুঁজে দেখার দরকার। আর এক ঝলক ‘ঝিলমিল’ থেকেই শুরু হতে পারে এক নতুন বৈজ্ঞানিক যাত্রা।