জ্বালানি তেল-গ্যাস ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তেল বিদ্যুতে লোকসান হবে ২৪ হাজার কোটি
জ্বালানি তেল-গ্যাস ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আসন্ন অর্থবছরে দেশের বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন ব্যয় ২০ শতাংশ বাড়ছে। এতে করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান আরও বাড়ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুধু বিদ্যুৎ খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি লোকসান গুনতে হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। একইভাবে পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান বেড়ে দাঁড়াবে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ফলে এ দুই খাতের জন্য বরাদ্দও বেশি রাখতে হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দফায় দফায় দাম বাড়ানোর পরও চলতি অর্থবছর শেষে পিডিবি নিট লোকসান ৬ হাজার ১১৭ কোটি টাকায় দাঁড়াবে বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে সংস্থাটি লোকসানের এমন তথ্য জানিয়েছে। যেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে নিট লোকসানের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা।
আসন্ন বাজেটে থাকা প্রস্তাব অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে শুধু বিদ্যুৎ খাতের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়াবে ১ লাখ ২০ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ১ লাখ ৪৪৮ কোটি টাকা। আসন্ন অর্থবছরে বিক্রয় রাজস্ব আসবে ৬৯ হাজার ৫৫ কোটি, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা বেশি। বাজেট প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, আসন্ন অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে অপরিচালন আয় হবে ৪২ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ বেশি। তবে উৎপাদন ব্যাপক হারে বাড়ার কারণে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পিডিবির নিট লোকসান চলতি অর্থবছরের চেয়ে তিনগুণ বেড়ে দাঁড়াবে ১৮ হাজার ১০৬ কোটি টাকায়। এ ছাড়া প্রস্তাবিত অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিভাগের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের পরও আগামী অর্থবছরে লোকসান গুনতে হবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি)। জ্বালানি তেল বিক্রি করে সংস্থাটি যে পরিমাণের আয় করবে, তার চেয়ে বেশি উৎপাদন খরচ হতে যাচ্ছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৯৪ হাজার ১১৬ কোটি টাকা আয়ের প্রাক্কলন করেছে বিপিসি, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১১ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। তবে আসন্ন অর্থবছরে উৎপাদন ব্যয় ২৫ শতাংশ বাড়ায় শেষ পর্যন্ত নিট লোকসানে থাকার আভাস মিলেছে।
সংস্থাটি যে পরিমাণের আয় করবে উৎপাদন ব্যয় হবে তার চেয়ে বেশি। আসন্ন অর্থবছরে বিপিসির উৎপাদন ব্যয় দাঁড়াবে ৯৯ হাজার ৬৯৪ কোটি টাকায়, যা চলতি অর্থবছরে হবে ৭৯ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এতে করে আগামী অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকার পরিচালন লোকসানে থাকবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। আর অপরিচালন আয়, ব্যয় ও আয়কর পরিশোধের পর নিট লোকসান হবে ৫ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। যেখানে চলতি অর্থবছরে বিপিসির নিট মুনাফা হবে ৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। যদিও চলতি অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেটে ১০ হাজার কোটি টাকার লোকসানের প্রাক্কলন করা হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের কারণে চলতি অর্থবছরে শেষ পর্যন্ত নিট মুনাফায় থাকছে বিপিসি। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরেও বিপিসি সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি মুনাফা করেছিল।
পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের নিজস্ব বরাদ্দের বাইরেও সংস্থটির আটটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আগামী অর্থবছরে এ আটটি প্রতিষ্ঠানের নিট মুনাফা ১ হাজার ১০২ কোটি টাকা হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর এ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফা ১ হাজার ৩৩ কোটি টাকা হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
প্রতি বছরের মতো আগামী বাজেটেও সড়ক পরিবহন করপোরেশনের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। রাজস্ব আয় যতটা না বাড়বে তার চেয়ে অনেক বেশি হারে বাড়ছে ব্যয়ের খাত। ফলে আগামী অর্থবছরে এ সংস্থাটির নিট লোকসান দাঁড়াবে ১২৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ অন্য বছরের তুলনায় উদ্বৃত্ত আয় কিছুটা কমবে। চলতি অর্থবছর এ খাতের উদ্বৃত্ত আয় ধরা হয়েছে ৫৪৭ কোটি টাকা, প্রস্তাবিত অর্থবছরে এ খাতের আয় হবে ৩৭৫ কোটি টাকা।
বরাবরের মতো এবারও চলতি অর্থবছরের চেয়ে টাকার অঙ্ক আরও বাড়িয়ে ৬ জুন (২০২৪-২৫) অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়ের বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, যা হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আকারের বাজেট। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) চাপ সত্ত্বেও ভর্তুকি বেশি রাখতে হচ্ছে সরকারকে।