Bangladesh

ঝুঁকির মধ্যেই ৩৭ জেলায় খোলা ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাতক্ষীরায় হিট স্ট্রোকে এক শিক্ষকের মৃত্যু

বিভ্রান্তিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা * শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা-বন্ধ নিয়ে দুই মন্ত্রণালয়ের আনাড়িপনা * বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে মাধ্যমিকের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান * শিক্ষা ঘাটতি পূরণে প্রয়োজনে বন্ধের দিনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হবে-শিক্ষামন্ত্রী

সারা দেশে চলমান উচ্চ দাবদাহে হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক এমনকি শিক্ষকদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন খারাপ ছিল। তারা আদালতের নির্দেশে নাখোশ। আদেশের খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই শিক্ষামন্ত্রী বলে বসলেন, তিনি হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তৈরি হলো জটিলতা। ফলে সোমবার মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত দিল, দেশের ২৭টি জেলায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তার মানে, খোলা রাখা হলো ৩৭টি জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যা আদালতের নির্দেশনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কিন্তু সেটিই করা হলো। আবার হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে মন্ত্রণালয় থেকে সোমবার কোনো নির্দেশনাও জারি করা হয়নি। শিক্ষকরা বলছেন, আমরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে নাকি বন্ধ থাকবে এ নিয়ে দোটানা ছিল।

এমন বাস্তবতায় যেসব জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল, তীব্র গরমে অনেক জায়গায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। সাতক্ষীরায় হিট স্ট্রোকে এক স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন। ফেনীতে ক্লাস চলাকালে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেক শিক্ষার্থী। চট্টগ্রামের চাটখিলে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক ও মাদ্রাসায় ক্লাস চলেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুই মন্ত্রণালয়ের আনাড়িপনার কারণে মঙ্গলবার ৩৭ জেলায় মাধ্যমিক ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন কিছু সিদ্ধান্ত হয়, যাতে সমন্বয়হীনতা প্রকট আকার ধারণ করে। কোথাও প্রাথমিকের স্কুল খোলা, আবার কোথাও মাধ্যমিকের স্কুল বন্ধ। এতে বিভ্রান্তিতে পড়েছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। রোজায় স্কুল ছুটি নিয়েও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। এর আগে গত জানুয়ারিতে তীব্র শীতে স্কুলের ছুটি নিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তিন রকম নির্দেশনা দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।

পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের ছুটি শেষে গত ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খোলার কথা ছিল। তবে দেশে তীব্র দাবদাহের কারণে আরও এক সপ্তাহ ছুটি বাড়ায় সরকার। ছুটি শেষেও তাপমাত্রার পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি আরও বাড়ানোর দাবি ওঠে। এতে দুই মন্ত্রণালয়ের নানা নাটকীয় নির্দেশনায় বিপাকে পড়তে হয় অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টদের। ফলে স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশনা।

মঙ্গলবার খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ১৮ জেলা, ঢাকা বিভাগের ৬ জেলা, রংপুরের ২ জেলা এবং বরিশালের এক জেলাসহ মোট ২৭ জেলার স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ রাখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বাকি ৩৭ জেলায় মাধ্যমিকের সব প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়। যদিও আগের দিন শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার আদালতে আপিল করতে যায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বৃহস্পতিবার (২ মে) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে তিনি বলেন, আদেশের কপি এখনো আমাদের হাতে আসেনি। পূর্ববর্তী নজির হচ্ছে, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বহাল থাকে, নির্বাহী বিভাগ যদি সেটার বিষয়ে অবগত হয়, তারা সম্মান প্রদর্শনপূর্বক সেটাই মেনে চলে। অর্থাৎ আদালতের যে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ সেটা যদি বহাল থাকে, আমরা সেটা মেনে চলতে বাধ্য। আমরা আদালতের সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আপিল না করা পর্যন্ত আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে।

মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল আরও বলেন, কারিকুলামের দিনগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হচ্ছে। এখন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আমাদের যতদিন প্রয়োজন, সেটা অর্জন করার জন্য যদি শুক্রবারও খোলা রাখতে হয়, তা-ই করব। শিক্ষাবিদরা বলছেন, অসহনীয় এই তাপপ্রবাহের মধ্যে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত শিক্ষার্থীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোনো বিষয়ে সমন্বিতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

সাতক্ষীরায় হিট স্ট্রোকে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু : সাতক্ষীরায় নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে তীব্র দাবদাহে হিট স্ট্রোকে ফারুক হোসেন নামের এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে সোমবার তিনি স্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিদ্যালয়ের সহকারী ইংরেজি শিক্ষক তিনি। মঙ্গলবার সাতক্ষীরায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ক্লাস চলাকালীন অসুস্থ হয়ে পড়ে এক শিক্ষার্থী : ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলায় করিম উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালে গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে সপ্তম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অসুস্থ এই শিক্ষার্থীর নাম আবদুল আজিম (১৩)। মঙ্গলবার দুপুরে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সে আবদুল আজিম উপজেলার হীরাপুর গ্রামের আবদুল আউয়ালের ছেলে।

তীব্র গরমেও চাটখিলে স্কুল ও মাদ্রাসায় ক্লাস : চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে মঙ্গলবার চাটখিল উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় যথারীতি ক্লাস চালু রাখা হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসায় ক্লাস চলায় অভিভাবকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। চাটখিল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও শাহাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোরশেদ আলম ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বা জেলা শিক্ষা অফিস থেকে তারা বন্ধের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা পাইনি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button
bacan4d toto
bacan4d toto
Toto Slot
slot gacor
slot gacor
slot toto
Bacan4d Login
bacan4drtp
situs bacan4d
Bacan4d
slot dana
slot bacan4d
bacan4d togel
bacan4d game
slot gacor
bacan4d login
bacantoto 4d
toto gacor
slot toto
bacan4d
bacansport
bacansport
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
slot gacor
slot77 gacor
Bacan4d Login
Bacan4d toto
Bacan4d
Bacansports
bacansports
slot toto
Slot Dana
situs toto
bacansports
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d
bacan4d